- ফিচার
- বন্যপ্রাণী রক্ষায় উদ্যোগ...
বন্যপ্রাণী রক্ষায় উদ্যোগ...

এভাবেই চিকিৎসাসেবা শেষে বন্যপ্রাণী ও পাখিদের অবমুক্ত করে দেয় অ্যানিমাল লাভার্স অব পটুয়াখালীর স্বেচ্ছাসেবকরা
এইচ এম শামীম। ২০১৯ সালে ‘অ্যানিম্যাল লাভার্স অব পটুয়াখালী’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। শুরু থেকেই সংগঠনটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করে আসছে। বেওয়ারিশ কুকুর, বিড়াল ও বন্যপ্রাণীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং এসব সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে দুই সদস্য নিয়ে মূলত আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু সংগঠনটির। বর্তমানে সংগঠনের সদস্যরা বন্যপ্রাণী রক্ষা, সংরক্ষণ, মুমূর্ষু বন্যপ্রাণী ও পাখিদের সেবা দেওয়া থেকে শুরু করে সুস্থ করে উপযুক্ত ও নিরাপদ স্থানে ছেড়ে দিচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়, বন্যপ্রাণী ও পাখিদের জন্য রোপণ করছেন পরিবেশ উপযোগী গাছ। বর্তমানে সংগঠনের রেজিস্ট্রেশনকৃত সদস্য রয়েছেন ৭০ জনেরও বেশি। এর মধ্যে ২৫ জন বন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এ ছাড়া সাপ উদ্ধারকারী রয়েছেন সাতজন এবং কুকুর-বিড়ালের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে ১০ জনের। প্রথমে তারা পটুয়াখালী সদর উপজেলায় কাজ শুরু করলেও বর্তমানে তাদের সদস্য রয়েছেন জেলাজুড়ে। বর্তমানে সংগঠনটি পটুয়াখালী জেলা ছাড়াও কার্যক্রমের পরিধি বাড়িয়েছে বরিশাল বিভাগে।
সংগঠনটি আট শতাধিক কুকুর-বিড়ালের সেবা দিয়েছে, যার মধ্যে বিনামূল্যে জলাতঙ্ক টিকা কার্যক্রম ও ডিওয়ার্মিং প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা রয়েছে। মানুষের ফেলে দেওয়া কুকুর-বিড়ালের বাচ্চার নতুন ঠিকানা খুঁজে দেওয়া, করোনাকালীন এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় খাবার সংকটে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া ছাড়াও প্রাণীকল্যাণ আইন-২০১৯ সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছেন অ্যানিম্যাল লাভার্স অব পটুয়াখালীর সদস্যরা।
প্রতিষ্ঠার পর সংগঠনটি প্রায় তিন হাজার বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে প্রাকৃতিক পরিবেশে অবমুক্ত করেছে; যার মধ্যে রয়েছে বিষধর সাপ, নির্বিষ সাপ, বানর, শিয়াল, বনবিড়াল, মেছোবিড়াল, ভোঁদড়, কচ্ছপ, ডলফিন, শাপলাপাতা মাছ, হাঙর, গুইসাপ, টিয়া, ময়না, শালিক, পাতি সরালি, কালিম পাখি প্রভৃতি। জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও পর্যটকস্থলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, পোস্টার লাগানোসহ পথসভা করে মানুষকে সচেতন করে যাচ্ছে সংগঠনটি। এ ছাড়া জেলায় প্রথম বজ্রপাত নিরোধ এবং পাখিদের খাবার ও বাসস্থানের জোগান দিতে তিন শতাধিক তালগাছের চারা রোপণ করেছে। বরিশাল বিভাগ সাপের দংশনে রোগী মৃত্যুহারে দেশে দ্বিতীয়। ফলে সংগঠনের সদস্যরা নিয়মিত সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করছেন যথাযথ চিকিৎসা নেওয়ার জন্য।
সংগঠনের সদস্যরা মনে করেন, এ অঞ্চলের মানুষ সাপে কাটলে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে বিভিন্ন হাতুড়ে ডাক্তার ও কবিরাজের শরণাপন্ন হন। তাই অপচিকিৎসায় মৃত্যু হয় অনেকের! এই অপচিকিৎসা বন্ধে তারা সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করছেন নিয়মিত। সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যানিম্যাল লাভার্স অব পটুয়াখালীর ডেটা কালেক্টর বায়জিদ মুন্সী বলেন, ‘আমাদের প্রচেষ্টায় পটুয়াখালীতে সাপে কাটা শতাধিক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আমরা বন্যপ্রাণীর জন্য কাজ করি। এর স্বীকৃতিস্বরূপ জেলা প্রশাসন পটুয়াখালী ও উপকূলীয় বন বিভাগ থেকে পেয়েছি সম্মাননা। আগামীতে আমাদের কার্যক্রম দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাই।’
মন্তব্য করুন