প্রতিবছর বর্ষার এই সময়টায় জলাবদ্ধতা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীন উত্তরখান ও দক্ষিণখানের নিত্যকার ঘটনা। ৪৬ ও ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেশির ভাগ সড়ক বছরের ১২ মাসই স্যুয়ারেজের দূষিত, ময়লা ও নর্দমার পানিতে ডুবে থাকে। রিকশা-অটোরিকশা উল্টে দুর্ঘটনার চিত্র অনেকটা নৈমিত্তিক। আগে এ এলাকা ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরপর এটি থানার অন্তর্ভুক্ত হয় এবং সর্বশেষ নাগরিক সেবা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই বাড্ডা, বেরাইদ, ভাটারা, দক্ষিণখান, উত্তরখান, খড়িরামপুর ইত্যাদি ইউনিয়নকে বিভক্ত করে উত্তর সিটিতে যুক্ত করা হয় ১৮টি ওয়ার্ড। কথা ছিল, এসব এলাকা পাবে উন্নত সড়ক, সড়কবাতি, পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা এবং ফুটপাত। অথচ সিটি করপোরেশনের অধীনে গত ছয় বছরে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া পায়নি এসব এলাকা।
স্থানীয়দের মতে, আগে এ এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছিল, সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হওয়ার পর সেগুলো বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ। বর্ষার এই মৌসুমে চারদিকে জলাবদ্ধতা আরও বেড়েছে। এখানকার আরেকটি ভয়াবহ সমস্যা হলো মশা। সারাবছর নর্দমায় পানি জমে থাকায় সেখানে রয়েছে মশার বেশ কয়েকটি উৎপত্তিস্থল। এডিস মশার প্রকোপে এখানকার কয়েক হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। দক্ষিণখানের অধিবাসী মো. শাহাদাত হোসেন সাগর বলেন, ‘দক্ষিণখান যখন ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল, তখন এ এলাকায় জনসংখ্যা যেমন কম ছিল, তেমনি ভোগান্তিও ছিল কম। এরপর থানায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর কিছুটা উন্নয়নের ছোঁয়া আমরা পেয়েছিলাম। সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হলে দিন দিন জনসংখ্যা বেড়েছে; কিন্তু সে তুলনায় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি, বরং রাস্তাঘাট সংকীর্ণ হয়েছে।’ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের (দক্ষিণখান) বর্তমান কাউন্সিলর মো. আলী আকবর বলেন, ‘বাজেট পাস হলেও বাজেটের বরাদ্দ আমরা পাইনি। দক্ষিণখান ও উত্তরখানের জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রায় ১৫ বছরের। এ সমস্যা দূর করতে বড় বড় তিনটি ড্রেন নির্মাণ করা প্রয়োজন। যখনই জলাবদ্ধতা বেড়ে যাচ্ছে, ড্রেন পরিষ্কার ও রাস্তার আশপাশে কিছু অংশ কেটে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পানি সরিয়ে জলাবদ্ধতা কমানোর চেষ্টা করছি। এ ছাড়া মোটর দিয়ে পানি সেচে ফেলা হয়। এর বেশি কিছু করার সুযোগ নেই।’ নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নতুন ওয়ার্ডগুলোর পরিকল্পনা প্রণয়ন কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, ‘উত্তর সিটি করপোরেশনের নতুন ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নের পরিকল্পনা এরই মধ্যে প্রস্তুত। কিন্তু এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। প্রস্তাবিত বাজেটের মাত্র ১০ শতাংশ সরকার অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু এখনও সেই টাকা পায়নি উত্তর সিটি করপোরেশন।’
মন্তব্য করুন