এশিয়া কাপ মুট কোর্ট কম্পিটিশন ২০২৩-এ বিজয়ী হয়েছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি মুট কোর্ট সোসাইটি (ডিইউএমসিএস)।
জাপানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক এ প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ডে কম্বোডিয়ার টিমকে হারিয়ে বিজয় অর্জন করে ডিইউএমসিএস।

টোকিওর ইউনাইটেড নেশন ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত এশিয়া কাপে স্বাগতিক জাপান ছাড়াও অংশ নেয় বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ইরান, মঙ্গোলিয়া, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। প্রাথমিক পর্যায়ে ৫৫টির বেশি দল অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত ওরাল রাউন্ডের জন্য নির্বাচিত হয় ১৬টি দল।

২২ ও ২৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত ওরাল রাউন্ডে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মোকাবিলা করে ফাইনাল রাউন্ডে কম্বোডিয়ার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর আগে অন্যান্য স্বীকৃতি থাকলেও এত বড় মাপের প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুট কোর্ট সোসাইটির চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। এ ছাড়া প্রতিযোগিতার বেস্ট মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড (অ্যাপ্লিকেন্ট) ও থার্ড বেস্ট মেমোরিয়ালের (রেসপন্ডেন্ট) স্বীকৃতিও অর্জন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

২০২৩ সালের শিরোপা বিজয়ী বাংলাদেশ দলের সদস্যরা হলেন ঐশী রহমান, রাফিদ আজাদ সৌমিক, ফিয়াজ রব্বানী ও তানহা তানজিয়া। ঐশী রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এলএলএম শিক্ষার্থী। বাকিরা একই প্রতিষ্ঠানে এলএলবি চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। এর আগে বাংলাদেশ কোনো আন্তর্জাতিক মুট কোর্ট প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। সদস্যরা তাই উচ্ছ্বসিত।

দলের জ্যেষ্ঠ সদস্য ঐশী রহমান বলেন,  ‘আমাদের এবারের সাফল্য শুধু যে বাংলাদেশের জন্যই বড়, তা নয়। এর আগে এশিয়া কাপে পুরো দক্ষিণ এশিয়া থেকেই আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। এটা ভেবেই আমাদের বেশি ভালো লাগছে। প্রস্তুতির জন্য আমরা এতটাই কম সময় পেয়েছিলাম যে ঈদের দিনও ব্যস্ত ছিলাম। তবে শেষ পর্যন্ত সবাইকে পেছনে ফেলে নিজেদের প্রমাণ করতে পেরেছি, এটাই সবচেয়ে আনন্দের।’

তানহা তানজিয়া বলেন, ‘মেমোরিয়াল জমা দিতে হতো ৩০ জুনের মধ্যে। কোরবানির ঈদ ও তারপরের দিন আমরা দিন-রাত কাজ করেছিলাম। আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।’

মুট কোর্ট কম্পিটিশন প্রতিযোগিতায় একটি কাল্পনিক মামলা ধরে দুই পক্ষের মধ্যে যুক্তিতর্ক হয়। সেই কাল্পনিক মামলার বিষয়বস্তু হয় বিশ্বের চলমান কোনো সংকট। বাস্তবের আদালতে একজন আইনজীবী যে কোনো এক পক্ষের হয়ে মামলা লড়েন। আর মুট কোর্টে দলগুলোকে আইন বিষয়ে দক্ষতা প্রমাণে একেক রাউন্ডে বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষের হয়ে মামলা লড়তে হয়। এ কারণে মুট কোর্টে প্রথম ধাপে অ্যাপ্লিকেন্ট ও রেসপন্ডেন্ট নামে দুটি পক্ষ থাকে।

এ ব্যাপারে দলের আরেক সদস্য ও প্রতিযোগিতার থার্ড বেস্ট ওরালিস্ট (অ্যাপ্লিক্যান্ট) সৌমিক বলেন, ‘সমগ্র এশিয়া থেকে অনেক প্রতিভাবান মুটারের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি তাঁদের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা ও সংগ্রামের কথা শোনার সুযোগ হয়েছে।

এশিয়া কাপ ল ইন্টারন্যাশনাল মুট কোর্ট কম্পিটিশন ১৯৯৯ সাল থেকে হচ্ছে। শুরুতে এর নাম জাপান কাপ ছিল। বাংলাদেশ ছাড়াও এবার ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম, ইরান, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ৫৪টি দল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছিল। সেখান থেকে ১৬টি দল নির্বাচিত হয়। সেমিফাইনালে ইন্দোনেশিয়াকে হারিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দল।

২৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল কম্বোডিয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দলটি বেস্ট অ্যাপ্লিকেন্ট মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড এবং তৃতীয় সেরা রেসপন্ডেন্ট মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ডও জিতেছে। তৃতীয় সেরা অ্যাপ্লিকেন্ট ওরালিস্ট হয়েছেন রাফিদ আজাদ সৌমিক।