অল্প-স্বল্প রম্য গল্প
করুণ উদ্যোক্তা
-samakal-6509741739acd.jpg)
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০
অনার্স-মাস্টার্স শেষে একদল বেকার যুবকের সঙ্গে মেস লাইফ শুরু; যাদের প্রত্যেকেই চাকরির জন্য জুতার তলা ক্ষয় করেন। অবশ্য ব্যতিক্রম একজন আছেন; তিনি সাজিদ ভাই। যিনি নিজেকে তরুণ উদ্যোক্তা দাবি করেন। যদিও তাঁর উদ্যোগ সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করলে ফসকে বেরিয়ে যান। খুব চাপাচাপি করলে ফিসফিসিয়ে জবাব দেন, ‘আমি কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। তা অবশ্যই দেখতে পারবা।’
সাজিদ ভাই ভুল বলেন না। তাঁর কাজ আমরা হরহামেশাই দেখি। শুধু দেখা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে না; অনেকে তাঁর কাজকর্মে শামিলও হন। যেমন উপযুক্ত সম্মানীর বিনিময়ে কোনো আন্দোলন, সভা, মিছিল বা অনুষ্ঠানে সাজিদ ভাই নিজে আবার কখনও বা সদলবলে পৌঁছে যান। পরিকল্পনা অনুযায়ী পারফরম্যান্স দেখান। কয়েকটা উদাহরণ দিই। জনপ্রিয় এক ক্রিকেটার এশিয়া কাপে স্থান পাননি। সাজিদ ভাই সামান্য সম্মানীর বিনিময়ে তাঁর ভক্ত সেজে দিনদুপুরে রাস্তায় গড়াগড়ি দিয়ে কান্নাকাটি করে মূর্ছা গেলেন। এমন অবস্থায় লোকজনের সমাগম ঘটল, সাংবাদিক হাজির হলেন, ইন্টারভিউ দিলেন। কান্নাজড়িত গলায় বললেন, অমুক ক্রিকেটারকে দলে না রাখা হলে তিনি ভাত খাবেন না। তিনি সত্যিই কিছুদিন ভাত খাননি। তবে গোশত-রুটি খেয়েছেন।
কিছুদিন আগে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা আন্দোলন করল। ৫০ মার্কের পরীক্ষা নিতে হবে। সেখানেও ডাক পড়ল সাজিদ ভাইয়ের। গালভর্তি দাড়ি নিয়ে তিনি আন্দোলনে রাজপথ কাঁপালেন। এক সাংবাদিক যখন তাঁকে প্রশ্ন করলেন, ‘আপনাকে তো ঠিক এইচএসসি পরীক্ষার্থী মনে হয় না?’ তিনি বজ্রকণ্ঠে জবাব দিলেন, ‘ডোন্ট জাজ এ বুক বাই ইটস কাভার। আমি আগেও এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম, এখনও আছি, আগামীতেও থাকব। ৫০ মার্কে পরীক্ষা না হলে আমি কেন, আমার বাপেও পরীক্ষা দেবে না।’
সাজিদ ভাইয়ের কাজ ও প্রতিভা সম্পর্কে আমাদের ধারণা স্পষ্ট। তাঁর সঙ্গে থেকে মেসের অনেকেই একবেলা ভালো-মন্দ খেতে পারেন, আয়-রোজগার করতে পারেন। হঠাৎ করেই লোকটা এমন চুপসে গেলেন যে, আমি কোনোভাবে তার কূল-কিনারা করতে পারলাম না। সঠিক কারণ জানতে পারছিলাম না। এক জটিল রহস্য। কিছুদিন পর ফেসবুক ঘাঁটতে গিয়ে একটি ভিডিও পেলাম। কোনো এক নারী সংগঠনের রাজনৈতিক সমাবেশে হঠাৎ পক্ষ-বিপক্ষের সংঘাত। কয়েকজন নারী মিলে টানাহেঁচড়া করে একজনের পরনের শাড়ি প্রায় খুলে ফেলেছেন। বিপত্তি যেটা ঘটেছে, যার শাড়ি ধরে টানাটানি, তাঁর মাথায় থাকা পরচুলাও খুলে এসেছে। বিশ্বাস করতে পারলাম না। এ যে আমাদের সাজিদ ভাই! নারী সেজে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। আমি হাসতে হাসতে এক পর্যায়ে কেঁদেই ফেললাম। পরে সাজিদ ভাইকে খুঁজতে গিয়ে তাকে রুমেই পেলাম। উদাস হয়ে বসে আছেন। তাঁর চোখ টলমল করছে। এ যেন কোনো তরুণ উদ্যোক্তা নয়, করুণ উদ্যোক্তা!
সুহৃদ রাজবাড়ী
- বিষয় :
- গল্প