‘আমার বাড়ি যাইও ভোমর, বসতে দেব পিঁড়ে,/ জলপান যে করতে দেব/ শালি ধানের চিঁড়ে।/ …আমার বাড়ি যাইও ভোমর, এই বরাবর পথ,/ মৌরী-ফুলের গন্ধ শুঁকে/ থামিও তব রথ।’ পল্লিকবি জসীম উদ্‌দীনের ‘আমার বাড়ি’ কবিতার এই চরণের সঙ্গে যেন মিলে গেল সুহৃদ সমাবেশ ফরিদপুরের ‘ইলিশ-খিচুড়ি উৎসব’। এ যেন সুহৃদের মিলনমেলা। পরিকল্পনা অনুযায়ী শুরু হয় কার্যক্রম। অনুষ্ঠানের আগের দিন সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন নানা কাজে। ভেন্যু

ফরিদপুরের গোবিন্দপুর গ্রামে পল্লিকবির বাড়ি। কুমার নদের পাশে কবির এই বাড়িতে রয়েছে টিনশেডের চারটি ঘর। এখানে আছে কবির ব্যবহৃত নানা জিনিসপত্র। বাড়ির উত্তর পাশে কবির কবর। ১৯৭৬ সালের ১৪ মার্চ থেকে কবি সেই ডালিম গাছের তলে চিরশায়িত। চারপাশে রয়েছে বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান ও কাছের মানুষের কবর। নদের ধারে দর্শনার্থীর জন্য রয়েছে বসার ব্যবস্থা। কবির বাড়ি এলেই মানুষের মনে জেগে ওঠে নানা স্মৃতি।

স্মৃতিবিজড়িত কবির বাড়ির সামনে সুহৃদের মিলনমেলার নির্ধারিত সময়ে ছিল সকাল ১০টা। সে অনুযায়ী সবার উপস্থিতি শুরু হয়। অনেকে আগেই চলে আসেন ভেন্যুতে। ছবি তোলেন, আড্ডা দেন, সারেন আয়োজনের নানা কাজ। কবির বাড়ির পেছনের দিকের একটি অংশ বেছে নেন সুহৃদরা। সকাল থেকেই সুহৃদদের কর্মযজ্ঞে মুখর হয় বাড়ির আঙিনা। সাজসজ্জার কাজ শেষে ভেন্যু পরিণত হয় গান ও আড্ডামুখর। কবির কবিতা উচ্চারিত হয় সুহৃদদের মুখে মুখে। উৎসবের খাবারের আয়োজনে ছিল ঐতিহ্যবাহী ইলিশ-খিচুড়ি। ইলিশ আর খিচুড়ির স্বাদ নেওয়ার ফাঁকে জমে গান-আবৃত্তির আসর। সাংস্কৃতিক পর্বে গান গেয়ে মনমঞ্চ মাতান সুহৃদ মুন্নি সুলতানা। তাঁর গানের তালে তাল মেলান সুহৃদরা।

ফরিদপুর সুহৃদ সমাবেশের দিনব্যাপী আয়োজনে যুক্ত হয়ে অনুপ্রেরণা জোগান শিক্ষাবিদ আলতাব হোসেন। সমাপনী পর্বের শুভেচ্ছা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের ফাঁকে হয়ে যায় এক সংক্ষিপ্ত সভা। সভায় সুহৃদরা পরবর্তী আয়োজন নিয়ে  আলোচনা করেন।

অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল নানা আয়োজন। হাঁড়ি ভাঙা খেলা ছিল এর মধ্যে অন্যতম। চোখ বেঁধে নির্ধারিত স্থানের রাখা হাঁড়ি ভাঙার খেলা দারুণ আনন্দ দিয়েছিল সবাইকে। ভুল জায়গায় আঘাত করতেই বাকিরা উল্লাসে ফেটে ওঠেন। শুধু খেলা নয়, সাংস্কৃতিক পর্বে কয়েক সুহৃদের আবৃত্তি উপস্থাপন ছিল অসাধারণ। সেই সঙ্গে গানের মূর্ছনা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে জমজমাট করেছিল। আয়োজনের বিভিন্ন পর্বে অংশ নেন সুহৃদ মহুয়া ইসলাম, আবরার নাদিম, মিরান ফকির, প্রভাত সিং, হারুনার রশিদ, ওহিদুল ইসলাম, রওশান আরা, শাহানাজ জলি, গিয়াস উদ্দিন, শামীমা নাসরিন শিমু প্রমুখ।

সাধারণ সম্পাদক, সুহৃদ সমাবেশ, ফরিদপুর