ঢাকা বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

ওসিডি

শঙ্কা কাটাতে দরকার আস্থা

শঙ্কা কাটাতে দরকার আস্থা

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০৮:৫৮

আমাদের খুব পরিচিত বা সাধারণ একটি মানসিক সমস্যা অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি)। এটিকে অনেকে ‘শুচিবাই’ নামে চিনতে পারেন। তবে ওসিডি বলতে শুধু শুচিবাই বোঝায় না। ওসিডির অনেক ধরন আছে। রিপিটেটিভ থট বা একই চিন্তা বারবার আসা এবং সেই চিন্তা এমনভাবে আসে যেন মনে হয়, তা জোর করে মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। সেই চিন্তার পরিপ্রেক্ষিতে আক্রান্ত ব্যক্তির অস্বস্তি হয়। এর প্রভাবে তিনি কিছু কাজ করেন, যা কিছু নির্দিষ্ট আচরণে প্রকাশ পায়। এটিকে বলা হয় কম্পালসিভ বিহেভিয়ার। বাধ্য হয়ে তিনি সেই কাজটা করছেন, না করে থাকতে পারছেন না। তার অস্বস্তি লাগে। এটি খুব সাধারণ কয়েকটি অসুস্থতার মধ্যে একটি। এ ধরনের অসুস্থতা যে কোনো বয়সে হতে পারে।

অনেকে এমন সমস্যা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। তারা সমস্যা শুরুর প্রথম দিকেই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে আসেন। আবার অনেকে আছেন যারা ১০-১২ বছর পর আসেন। তারা হয়তো ওষুধ নিয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত বিহেভিয়ারিয়াল থেরাপি বা আচরণগত চিকিৎসা প্রয়োজন। ওষুধ নিলে রোগীদের মধ্যে যে অস্বস্তি বা রেস্টলেসনেস রয়েছে, তা একটু দমে যায়, একটু স্বস্তি বোধ কাজ করে। আক্রান্ত ব্যক্তির একই চিন্তা বারবার আসা বা বাধ্যতামূলক আচরণ কমানোর জন্য বিহেভিয়ারাল থেরাপি প্রয়োজন। দীর্ঘদিন ধরে একই আচরণ অনুশীলনের ফলে এটি অভ্যাসে রূপান্তর হয়ে গেছে। তখন তিনি বাধ্য হয়ে ওই কাজটি করছেন। এ থেকে বিরত রাখতে ভিন্ন আচরণের কৌশল চর্চার মাধ্যমে তাঁর অভ্যাসগত পরিবর্তনে কাজ করতে হয়। দীর্ঘসময় ধরে এ অনুশীলনের মধ্য দিয়ে তা পরিবর্তন করা সম্ভব।


 ওসিডিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা রোগের প্রথমদিকে গুরুত্ব দেন না। এ নিয়ে নানা বুলিংয়েরও শিকার হয়ে থাকেন অনেকে। যেমন একই কাজ বারবার করতে দেখলে পরিবার বিরক্ত হয়ে যায়। ছোটবেলায় এ সমস্যা হলে খুব বেশি নজরে পড়ে না। মানুষ জোর করে বা বকাবকি করে। জোর করে বা বকাবকি করে এর কোনো সমাধান হবে না; বরং আরও বাড়বে। ওই মানুষটি তো ইচ্ছাকৃতভাবে তা করছেন না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ হয়তো দরজা-জানালা বন্ধ করছেন বাইরে যাওয়ার আগে; কিন্তু মনে হলো আবার একটু দেখে আসি। এভাবে বারবার তার মাথায় এ চিন্তা আসে, দরজা-জানালা হয়তো ঠিকমতো লাগানো হয়নি। সাধারণভাবে কেউ বাইরে যাওয়ার আগে চেক করতে পারেন। যখনই তিনি একই কাজ বারবার করেন। একবারের জায়গায় পাঁচবার চেক করেন। এটা হলো চেকিং প্রবলেম। অনেক ক্ষেত্রেই এটা হতে পারে।

আবার অনেকে সব বিষয়ে সন্দেহ করেন। তিনি নিজের ওপর আস্থা পান না। কোনো কাজ করলেই তাঁর আশপাশের মানুষ থেকে নিশ্চয়তা চান। বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকেন– আমি যে কাজটা করেছি, এটি ঠিক হয়েছে কিনা। অনেক সময় আশপাশের মানুষ তাঁকে বোঝানোর জন্য বা বিরক্ত হয়ে হ্যাঁ বলেন। এটা তাঁর সমস্যাটা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

উদাহরণ হিসেবে একজন রোগীর কথা বলা যেতে পারে। তাঁর ওয়াশিং ও ক্লিনিং সমস্যা ছিল। তাঁর বিছানায় কেউ বসলে চাদর তুলে ধুয়ে ফেলতেন, মেঝে দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে বারবার মেঝে মুছতেন। কেউ হাতে ধরলে গোসল করতেন। এ ধরনের সমস্যায় তাঁর বাসার সবাই বিরক্ত ছিলেন। তাঁকে খুশি করার জন্য সবাই অনেক ডিটারজেন্ট বা ওয়াশিং পাউডার গিফট করতেন। বাসার মানুষজন তাঁকে খুশি করলেন কিন্তু তাঁর সমস্যাটা বাড়ানোর জন্য আরও সাহায্য করলেন। এ বিষয়গুলো অনেকেই অনেক সময় গুরুত্ব দেন না। মনে করেন তিনি একটু বেশি পরিষ্কার। তাঁর ওসিডি বা শুচিবাই রয়েছে। এসব বলে আসলে যে মানুষটি এ সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁকে কেউ বুঝতে পারছেন না। মনের ভেতরে একটা ভীষণ রকম অস্বস্তি কাজ করে। ভেতর থেকে তিনি ছটফট করতে থাকেন। এ থেকে সাময়িক স্বস্তি পেতে তিনি একই কাজ বারবার করতে থাকেন। তাঁর মনে হয় তিনি বাধ্য হচ্ছেন ওই কাজ করতে।

সাইকো থেরাপির মাধ্যমে এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কিছু বিহেভেরিয়াল এক্সপেরিমেন্ট করা; এগুলোর মাধ্যমে তাঁর অস্থিরতা কমিয়ে আনা। শুরুতে তা শনাক্ত করা গেলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সহজেই এটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে এমন সমস্যার উপসর্গ দেখা দিলে নিকটস্থ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কোনো শিশু বিকাশ কেন্দ্রের চাইল্ড সাইকোলজিস্টকে দেখানো যেতে পারে। যে কোনো মানসিক সমস্যা শুরুতে চিকিৎসা করা হলে তা থেকে দ্রুত আরোগ্য সম্ভব।

কামাল চৌধুরী: অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শ্রুতিলিখন: রিফতি আল জাবেদ

আরও পড়ুন