ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

ঢাকা গেটে বসানো হবে মীর জুমলার কামান

ঢাকা গেটে বসানো হবে মীর জুমলার কামান

মোগল আমলের নান্দনিক স্থাপত্য মীর জুমলা ফটক বা ঢাকা গেটের সংস্কার কাজ চলছে - সমকাল

লতিফুল ইসলাম

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ২১:৫৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কার্জন হল ছাড়িয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির পথে মোগল আমলের নান্দনিক স্থাপত্য মীর জুমলা ফটক বা ঢাকা গেট। বাংলার সুবেদার মীর জুমলার নামে গেটটির নামকরণ হয়। মীর জুমলা ঢাকার নিরাপত্তার জন্য এই গেট তৈরি করেন। এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে নান্দনিক রূপে ফেরাতে সংস্কার শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ২৪ মে ঢাকা গেট সংস্কার কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। আগামী নভেম্বরের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করে এটি উদ্বোধন করা হবে।

ইসলাম খাঁর (প্রকৃত নাম শেখ আলাউদ্দিন চিশতি, ১৫৭০-১৬১৩ খ্রি.) আমলে রমনা অঞ্চলে ছিল বাগে বাদশাহি নামক মোগল উদ্যান। বাগে বাদশাহির প্রবেশপথে দুটি স্তম্ভ ছিল। পরে গেটটি পুনর্নির্মাণ করে নামকরণ করা হয় ‘ঢাকা গেট’। মোগল আমলে বুড়িগঙ্গা নদী হয়ে ঢাকায় ঢোকার ‘প্রবেশমুখ’ ছিল এ তোরণ। পরে কখনও ‘ময়মনসিংহ গেট’, কখনও ‘ঢাকা গেট’, আবার কখনও ‘রমনা গেট’ নাম ছিল এটির।

বহু বছরের অযত্ন-অবহেলায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে গেটটির নান্দনিকতা। মুছে যেতে থাকে এর শেষ চিহ্নটুকুও। সম্প্রতি ঢাকা শহরকে একটি পর্যটকবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তুলতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি। এরই অংশ হিসেবে ঐতিহাসিক ঢাকা গেটকে নান্দনিকতায় ফেরাতে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের শিক্ষক স্থপতি ড. আবু সাঈদের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ দল গেটটির নতুন একটি নকশা তৈরি করেছে। এই নকশার আদলে সংস্কার কাজ করা হবে।  

ড. আবু সাঈদ সমকালকে বলেন, ব্রিটিশ আমলে ম্যাজিস্ট্রেট ডয়লির সময় এই গেট তৈরি করা হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রমাণ মেলে। এই গেটের এখন তিনটি অংশ দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু শুরুতে এমনটি ছিল না। শুরুতে রাস্তাটি এক লেনের হওয়ায় গেটের দুটি অংশ ছিল। পাকিস্তান আমলে ষাটের দশকে রাস্তাটি যখন দুই লেন করা হয় তখন এর একটি অংশ ভেঙে ফেলা হয়। তিন নেতার মাজারের অংশটি নতুন করে তৈরি করা হয়। দুই রাস্তার মাঝের পিলারটি সেই ভাঙা অংশেরই একটি।

তিনি বলেন, আদি যে চুন-সুরকির প্লাস্টার দিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছিল, সেই একই উপকরণ দিয়েই আমরা এটি সংস্কার করব। আদি ডয়লির অংশটি ও ৬০ দশকের অংশটিও থাকবে। ওসমানী উদ্যান থেকে মীর জুমলার কামানও নতুন করে এনে স্থাপন করা হবে।

বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, সংস্কার কর্মীরা ব্যস্ত তাদের কাজে। সংস্কার কাজে গেটের অংশগুলো আগের রূপে ফিরিয়ে সেখানে নান্দনিক চত্বর করা হবে। ঢাকা গেট সংস্কার করতে সিটি করপোরেশন নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় সাড়ে ৭১ লাখ টাকা খরচ করছে। এখন পর্যন্ত গেটটির ৬৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, ৫০ বছর ধরে আমরা আন্দোলন করে আসছি ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য। এগুলো সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত না হলে ঢাকা শহরের প্রাণ থাকে না। বর্তমান মেয়র ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষা করার একটি বড় প্রকল্প নিয়েছেন। সেই প্রকল্পের অংশ হিসেবেই এখন ঢাকা গেট ও নর্থব্রুক গেট সংরক্ষণের কাজ চলছে।

ডিএসসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র রায় সমকালকে বলেন, ঐতিহাসিক ফটকটির নতুন নকশা অনুযায়ী দুই দিকের ফটকের দুটি স্তম্ভের মূল কাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। মাঝখানে আরেকটি স্তম্ভ এবং দুই ফটকের পাশের চত্বরের কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন