পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট পাখির সঙ্গে বুবুনের আলাপ
গপ্পো

.
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ২৩:৩৭
ঈদের ছুটিতে বুবুন বেড়াতে গেলো যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে। সেখানে দেখা পেলো পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট পাখি হামিংবার্ডের। তারপর গল্প জমালো তার সঙ্গে। সেই আলাপ আড়ি পেতে শুনে হাজির করলেন আশিক মুস্তাফা
হামিংবার্ড : অ্যাই যে বুবুন, কেমন আছো?
বুবুন: আশপাশে তো কাউকে দেখছি না। কে, কে ডাকছে আমায়? ভূত নাকি!
হামিংবার্ড : আরে না; আমি।
বুবুন : ওরে বাবা; আবারও কথা বলছে। ভূ-ত, পা-লা-ই ...!
হামিংবার্ড : অ্যাই বুবুন, দাঁ-ড়া-ও-ও-ও ...!
বুবুন : দাঁ-ড়া-তে পা-র-বো না ...!
হামিংবার্ড : অমন ভোঁ-দৌড় দিচ্ছো ক্যান? শোনো, আমি ভূতটুত নই; পাখি।
বুবুন : পাখি? কই তোমাকে তো দেখছি না!
হামিংবার্ড : অ্যাই যে, ফুলের ভেতর।
বুবুন : ফুলের ভেতর? ফুলের ভেতর থাকে পাখি? তারা এতো ছোট হয়?
হামিংবার্ড : হয় গো বুবুন মিয়া, হয়। তাছাড়া পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট পাখি হলে তো আরো হয়!
বুবুন : কী, তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট পাখি?
হামিংবার্ড : লোকে তো তাই বলে।
বুবুন : আমি তো ভেবেছি সবচেয়ে ছোট পাখি আমাদের টুনটুনি। আর তার চেয়েও ছোট আরেকটা পাখি আছে।
হামিংবার্ড : কী পাখি?
বুবুন : মাছি!
হামিংবার্ড : কী, মাছি? মাছিরা কী পাখি?
বুবুন : নয় তো কি; দেখো না কেমন ডানা মেলে ভন ভন, ভন ভন করে ওড়ে !
হামিংবার্ড : হো হো হো। পেটে খিল ধরিয়ে দিলে। আর হাসতে পারছি না। মাছি নাকি পাখি!
বুবুন : থাক, আর হাসতে হবে না! তুমিও তো দেখতে বড় আকারের মাছির মতো।
হামিংবার্ড : তা ঠিকই বলেছো। শোনো, পৃথিবীতে আমাদের প্রায় ৪০০ জাত ভাই আছে। তার মধ্যে ‘কিউবান বি’ হচ্ছে সবচেয়ে ছোট হামিংবার্ড এদের দৈর্ঘ্য মাত্র ২ ইঞ্চি, অর্থাৎ একটা মৌমাছির সমান। আকৃতিতে ছোট হলেও শরৎ এবং বসন্তকালে এরা উড়ে মেক্সিকো উপসাগর পাড়ি দিয়ে আসে।
বুবুন : উপসাগর পাড়ি দেয়?
হামিংবার্ড : হুম দেয় তো। শুধু তাই নয়; এরাই একমাত্র পাখি যারা সামনে-পেছনে, ওপরে ও নিচে সবদিকেই একই গতিতে চলতে পারে।
বুবুন : বাপরে; এতো দেখি, ধানি মরিচ; দেখতে ছোট হলেও কাজে-কর্মে বুড়োর বাপ!
হামিংবার্ড : এই তো এলে লাইনে! ঠিকই ধরেছো। শোনো, আমাদের দেহে প্রায় ৯০০টি পালক থাকে। এগুলো আবার নানান রঙের। জানো, এই রঙিন পালক নিয়ে আমরা ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারি। ওড়ার সময় আমরা প্রতি সেকেন্ডে ৭০ বারের মতো ডানা ঝাপটাই।
বুবুন : সেকেন্ডে ৭০ বার?
হামিংবার্ড : হুম ঠিকই শুনেছো, সেকেন্ডে ৭০ বার। এবার মিনিটে কয়বার ডানা ঝাপটাই তা অংক করে বের করো।
বুবুন : সে না হয় করলাম। কিন্তু তোমরা কি খেয়ে এমন শক্তি বাড়াও? আমি না কতো কি খাই তবু বিড়াল ছানা ‘মারবির’ সঙ্গে দৌড়ে পেরে উঠি না!
হামিংবার্ড : তেমন কিছুই না, কেবল ফুলের মধু খাই! শোনো, আরেকটু কাছে আসো, একটা গোপন কথা বলি, অনেকে মনে করে আমরা কেবল ফুলের মধু আর রেণু খেয়েই জীবন ধারণ করি, এটা মোটেও ঠিক না; আসলে আমাদের জাত ভাইদের ৮৫ শতাংশই ফুলের মধ্যে বাস করা ছোট ছোট পোকামাকড় সাবাড় করে এমন শক্তি পায়!
বুবুন : তার মানে তুমি আমাকে পোকা খেতে বলছো? ওয়াক থু! এ আমি পারবো না হামি ভাই!
হামিংবার্ড : হামি ভাই আবার কি?
বুবুন : আরে ভুলে বলে ফেলছি হামিং ভাই। আচ্ছা, তোমাদের হামিংবার্ড বলে কেনো?
হামিংবার্ড : আমরা যখন অনেকে একসঙ্গে উড়াল দিই, তখন সবাই ডানা ঝাপটালে এক ধরনের তীব্র গুঞ্জন সৃষ্টি হয়। এজন্যই আমাদের ‘হামিংবার্ড’ বলে। উড়ে উড়ে গুন গুন করে গান গাই বলেও কেউ কেউ আমাদের এই নাম দিয়েছে। জানো, আমরা এমনিতে মিনিটে ২৫০ বার শ্বাস নিলেও ওড়ার সময় তা আরও বেড়ে যায়। আর তখন আমাদের হৃৎস্পন্দনের হার মিনিটে ১২০০ বিটে চলে যায়।
বুবুন : তোমরা কি স্মার্ট ওয়াচ ব্যবহার করো?
হামিংবার্ড : কেনো?
বুবুন : তা না হলে শ্বাস ও হৃৎস্পন্দনের বিট কীভাবে বুঝতে পারো?
হামিংবার্ড : সে তো মানুষই গবেষণা করে বের করেছে। এসব নিয়ে ভাবনার আমাদের সময় কই। আমরা রং দেখে কূল পাই না!
বুবুন : কোথায় পাও এতো রং?
হামিংবার্ড : অই যে গাছটার দিকে তাকাও। কয়টা রং দেখছো?
বুবুন : একটাই তো, সবুজ।
হামিংবার্ড : আমি কুন্তু একটা দেখছি না। দেখছি আরও বেশি। শোনো, প্রকৃতির যে রংগুলো মানুষের চোখে ধরা দেয় না, সেই রংগুলোই ধরা পড়ে আমাদের চোখে। কারণ, আমাদের কালার ভিশন তোমাদের চেয়ে বেশি। তোমরা রংধনুর সাত রং দেখতে পাও আর আমরা দেখি আরও বেশি। কারণ, মানুষ তিনটি কালার কোন দিয়ে দেখে আর আমরা দেখি চারটি কালার কোন দিয়ে।
বুবুন : বাপরে, তুমি বসে বসে রং দেখো, আমি বরং যাই, টা-টা, বাই বাই!
হামিংবার্ড : ওকে বুবুন, আবার যেন দেখা পাই!n
- বিষয় :
- পাখি