স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তরুণ প্রজন্মকে ঘিরে 'পথে পথে বিজয়' শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এর আওতায় আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক পর্যায়ে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন অঞ্চলের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদর্শন করা হবে। এজন্য দেশের ২১টি জেলায় ২১ দিনের এ অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ২৬ নভেম্বর দিনাজপুরে উপ-আঞ্চলিক মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হবে ।

বুধবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক অনুষ্ঠানে কর্মসূচি ঘোষণা করার পাশাপাশি এর উদ্দেশ্য তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলন আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাহজাহান খান, সুবর্ণজয়ন্তী উপযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়াসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

মন্ত্রী বলেন, 'এ বছর আমরা জাতীয়ভাবে মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি তথা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের জন্য গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটি ইতোমধ্যে ৫০টি জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে একটি কর্মসূচি হলো 'পথে পথে বিজয়' শিরোনামে দেশের বিভিন্ন স্থানে শত্রুমুক্ত হওয়ার দিনে আঞ্চলিক মহাসমাবেশ।'

মোজাম্মেল হক বলেন, '১৯৭১ সালের পর থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বছর ২০২১ সাল এবং এই গুরুত্বপূর্ণ মাহেন্দ্রক্ষণ আমাদের প্রত্যেকেরই উদযাপন করা উচিত। তাই এই আনন্দক্ষণ উদযাপন করতে আমাদের গৌরবময় ইতিহাসে তুলে ধরতে চেয়েছি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরিচয়।'

তিনি বলেন, 'যদিও বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় অর্জন করেছিল, কিন্তু দেশের অনেক অঞ্চলে বিজয় এসেছিল ১৬ ডিসেম্বরের আগেই। সেভাবেই নভেম্বরের ২৯ তারিখ আমাদের প্রথম বিজয় আসে পঞ্চগড়ে, সঙ্গে সঙ্গেই পঞ্চগড়কে শত্রুমুক্ত অঞ্চল (মুক্তাঞ্চল) ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে আরও অনেক অঞ্চল শত্রুমুক্ত হওয়া শুরু হয়। আমরা এই বিজয়গুলো উদযাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের কাছে এই শত্রুমুক্ত অঞ্চলগুলোর তাৎপর্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।'

মন্ত্রী বলেন, 'মহাসমাবেশগুলো শহরের প্রাণকেন্দ্রে, যেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী, ছাত্র-ছাত্রীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করতে পারবেন- এমন উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠিত হবে। মহাসমাবেশে প্রদর্শনী, খেলা, কুইজ, আলোচনা, সংবর্ধনা, পুরস্কার বিতরণসহ বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেবেন।'

৭টি আঞ্চলিক ও ১৪টি উপ-আঞ্চলিক মহাসমাবেশ করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- বিজয়ের গল্পগুলো পুনরায় বলা, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে পুনরায় জানা এবং সম্মান প্রদর্শন করা, যুদ্ধের অসাধারণ গল্পগুলো উপভোগ করা, তরুণদের যুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, সবাইকে এই বিজয় দিবসের বিশালতা উপলব্ধি করা, মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী দেশব্যাপী উদযাপন করা।

আঞ্চলিক মহাসমাবেশ স্থান ও সময়: পঞ্চগড়ে ২ ডিসেম্বর, যশোরে ৬ ডিসেম্বর, গোপালগঞ্জে ৭ ডিসেম্বর, কুমিল্লা ৮ ডিসেম্বর, জামালপুরে ১১ ডিসেম্বর, কক্সবাজারে ১২ ডিসেম্বর এবং সিলেটে ১৫ ডিসেম্বর।

উপ আঞ্চলিক মহাসমাবেশের স্থান ও সময়: দিনাজপুরে ২৬ নভেম্বর, ঠাকুরগাঁওয়ে ২৮ নভেম্বর, ঝিনাইদহে ২৮ নভেম্বর, মাগুরায় ৩০ নভেম্বর, ফরিদপুরে ১ ডিসেম্বর, মাদারীপুরে ৩ ডিসেম্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪ ডিসেম্বর, ফেনীতে ৬ ডিসেম্বর, ময়মনসিংহে ৬ ডিসেম্বর, শেরপুরে ৮ ডিসেম্বর, মিরসরাইয়ে ৯ ডিসেম্বর, পটিয়ায় ১১ ডিসেম্বর, মৌলভীবাজারে ১১ ডিসেম্বর এবং সুনামগঞ্জে ১৩ ডিসেম্বর।