সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মনে করেন সংসদ সদস্য ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, সরকারের একার পক্ষে শিশুশ্রম বা গৃহে শিশুশ্রম বন্ধ করা কঠিন। এই কাজে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। একইসঙ্গে গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি-২০১৫ পর্যালোচনার মাধ্যমে এর সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন তারা।

সোমবার পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাব মিলনায়তনে অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। 'গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুর অধিকার ও সুরক্ষা: আইনের প্রয়োজনীয়তা' শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন শিশু অধিকারবিষয়ক সংসদীয় ককাসের চেয়ারম্যান শামসুল হক টুকু। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু, ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, সৈয়দা রুবিনা আক্তার ও গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার।

এএসডির প্রকল্প পরিচালক হামিদুর রহমানের সঞ্চালনায় সংলাপে বক্তব্য দেন সংসদ সচিবালয়ের পরিচালক লাবণ্য আহমেদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, এএসডির নির্বাহী পরিচালক এম এ করিম, শিশু অধিকার ফোরামের আব্দুস শহীদ মাহমুদ, ডন ফোরামের মাহবুবুল হক, আইএলওর সৈয়দা মুনিরা সুলতানা, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের নিখিল চন্দ্র ভদ্র ও স্ক্যান-বাংলাদেশের মনিরুজ্জামান মুকুল প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামসুল হক টুকু বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের সুরক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুবান্ধব আইন-নীতিমালা সংশোধন ও পরিমার্জন করেছেন। এ বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর গঠনের বিষয়ে প্রস্তাবনাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। গৃহশ্রমিকদের জন্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে শিশু সুরক্ষায় সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সংলাপে বক্তারা বলেন, গৃহকর্মীদের অধিকার নিশ্চিত ও নির্যাতন প্রতিরোধে সরকার গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা-২০১৫ সালে প্রণয়ন করলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে গৃহকর্ম পেশা হিসেবে স্বীকৃত নয়। ফলে নির্যাতিত গৃহকর্মীরা সুবিচার পাচ্ছেন না। যে কারণে গৃহকর্মীর উপর প্রতিনিয়ত নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। আর শিশু গৃহকর্মীদের উপর নির্যাতনের ঘটনা বেশি। তাই শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধ ও অধিকার নিশ্চিত করতে নীতিমালা বাস্তবায়নের পাশাপাশি শিশুবিষয়ক অধিদপ্তর গঠনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। একইসঙ্গে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন এসডিজি (লক্ষ্যমাত্রা) অর্জনে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, শিশু সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। করোনাকালে বন্ধ থাকা সরকারের ইতিবাচক উদ্যোগ পৃথক শিশু বাজেট আগামী অর্থবছর থেকে পুনরায় চালু করতে হবে। গৃহকর্মী শিশুর মা-বাবার সঙ্গে তাদের মালিকের সমন্বয় থাকতে হবে।

উল্লেখ্য, এএসডি ১৯৮৮ সাল থেকে দেশের হতদরিদ্র, অবহেলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে আসছে। এর মধ্যে শিশু সুরক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, অসহায় জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, দুর্যোগ মোকাবেলা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য, দারিদ্র্য দূরীকরণ কর্মসূচি এবং বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ উল্লেখযোগ্য।