বিশ্বে প্রতি ১০ নারীর মধ্যে একজন পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা পিসিওএস রোগে আক্রান্ত। প্রজনন ক্ষমতাসম্পন্ন ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীরা সাধারণত এ রোগে ভুগছেন। আক্রান্তের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ বছর বয়সী কিশোরীর সংখ্যাই বেশি। দেশে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণ এ রোগ। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, বন্ধ্যত্ব, জরায়ু ক্যান্সারসহ দীর্ঘস্থায়ী অসংক্রামক রোগ বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখে পিসিওএস। এ পরিস্থিতিতে পিসিওএস নির্মূলে ওজন নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনসহ নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্ট চিকিৎসকরা। গত শুক্রবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সমকাল মিলনায়তনে 'পিসিওএস একটি হরমোনজনিত সমস্যা। জানুন, চিকিৎসা নিন' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে চিকিৎসকরা এসব কথা বলেন। যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে সমকাল, পিসিওএস টাস্কফোর্স ও বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি। আয়োজনে সহযোগিতা করেছে রেনাটা লিমিটেড
অধ্যাপক এস এম আশরাফুজ্জামান
পিসিওএস রোগের ব্যাপকতা কম না। ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীর ১৫ শতাংশেরই এই রোগ দেখা দিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর ব্যাপকতা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। এই রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত ও প্রতিরোধ করতে মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। এই রোগ প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞ আলোচক যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে সরকারের বিশেষ ভূমিকা আছে। আমাদের কাজ হলো সচেতনতা তৈরি করা, মানুষকে জানানো। মিডিয়ার কাজ হলো, এটি প্রচার করা। সরকারের কাজ পলিসিগত পরিবর্তন আনা। এটি একটি জিনগত রোগ। জিনকে তো আমরা বদলাতে পারব না। যে জায়গাগুলো বদলানো আমাদের হাতে রয়েছে, সেসব জায়গাতেও আমরা প্রথম দিক থেকে বদলাতে পারিনি অথবা যখন ব্যবস্থা নিই তখন দেখি অনেক দেরি হয়ে গেছে। প্রথমত, কিশোরীর ক্ষেত্রে এটি শুরু হয় ওজন আধিক্য দিয়ে। ওজন বেশি হলে তাদের মধ্যে পুরুষ হরমোন বাড়তে থাকে। পরে মাসিক অনিয়মিত হয়। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে ওজন বাড়ে। পরে ইনসুলিনে সমস্যা দেখা দেয়। শরীরের মধ্যে পুরুষ হরমোন বাড়তে থাকে। অনেকের মুখে দাড়ি-লোম দেখা দেয়। বর্ণেও সমস্যা দেখা দেয়। চুল পড়ে যাচ্ছে। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, জরায়ুমুখী ক্যান্সারসহ নানা জটিলতা দেখা দেয়। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ইউরিক এসিড বেড়ে যায়। অর্থাৎ ইনসুলিন আধিক্য যে কতটা খারাপ, এটা জনগণকে বোঝাতে হবে। আমরা যদি শুধু ওজনের আধিক্য কমিয়ে আনতে পারি তাহলে পিসিওএস এবং আরও ১০টি রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।
অধ্যাপক মো. হাফিজুর রহমান
পিসিওএসের শিকার নারীর সন্তানধারণে সমস্যা হওয়ার প্রবণতা অন্যদের চেয়ে বেশি। এ রোগের অন্যতম লক্ষণ হলো, শরীরে অবাঞ্ছিত লোম ও বন্ধ্যত্ব। আক্রান্ত কোনো নারী সন্তান ধারণ করলেও গর্ভপাত হয়ে যায়। এ ছাড়া এ রোগে আক্রান্ত নারী বেশি বয়সে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি রোগের সম্মুখীন হচ্ছেন। ৫০ শতাংশ রোগীর দৈহিক ওজন বাড়ছে। অনেকের ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা বা শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। কেউ কেউ হৃদরোগেও আক্রান্ত হন। ডিপ্রেশনে ভোগেন। অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার খান। গবেষণা মতে, এই রোগ জিনগত। মায়ের এই রোগ থাকলে মেয়ের হওয়ার আশঙ্কা থাকে প্রায় ৪০ শতাংশ। যমজ বোনের মধ্যেও এই প্রবণতা দেখা যেতে পারে। বাংলাদেশে আক্রান্ত মায়েদের সন্তানের মধ্যে পাঁচ শতাংশ কন্যাসন্তানই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। তাই এ রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হওয়া জরুরি।

ডা. রেজাউল করিম কাজল
পিসিওএসে আক্রান্ত নারীর অধিকাংশই শেষ সময়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফলে অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসা দিয়েও কোনো লাভ হয় না। ১০ বছর আগেও প্রসূতি মায়েদের পিসিওএস সমস্যা ছিল না। ২০১৫ সাল থেকে এই সমস্যা বেড়েছে। এ সময়ে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা, জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হয়েছে।  যে কারণে পিসিওএস বেড়েছে। পিসিওএস বাড়ছে মানে অন্তঃসত্ত্বাকালীন মায়ের জটিলতা বাড়বে। মানুষ এ বিষয়ে আগে জানত না। যারা জানতে পারেনি, তাদের দুর্ভাগ্য যে তারা প্রতিরোধ করতে পারেনি। কলেজপড়ূয়া একজন মেয়েকে মা নিয়ে এসেছেন। বলছেন, আমার মেয়ের মাসিক অনিয়মিত হচ্ছে। কালো হয়ে যাচ্ছে, মুখে দাড়ি-গোঁফ উঠছে। এই মেয়েটা যখন বিয়ে করছেন, স্বামী এসে বলছেন, স্ত্রীর সন্তান হচ্ছে না। সন্তান না হওয়ার চিকিৎসা দিতে গিয়ে যে পরিমাণ ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তার দাম লাখ টাকার বেশি। অনেক সময় অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর সন্তান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর মানসিক যন্ত্রণা যে কত গভীর, একজন নারী, যাঁর সন্তান নষ্ট হচ্ছে, তিনিই বুঝতে পারেন। এমন রোগী আমরা পেয়েছি, যাঁর সন্তান শেষ পর্যন্ত পৃথিবীতে আনার জন্য লাখ টাকার ওষুধ খেয়েছেন। তাহলে অর্থনৈতিক বোঝাটা ওই সংসারে কী পরিমাণ, তা ওই পরিবারই বোঝে। যদি ডায়াগনস্টিক ঠিকভাবে না করা হয়, এই সন্তানটি সময়ের আগে প্রসব বেদনা সৃষ্টি করছে, পানি ভেঙে যাচ্ছে, তখন একটি স্বল্প ওজনের সন্তান পৃথিবীতে আসছে। যেটি আবার শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ। ফলে পিসিওএস শিশু ও মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণ। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, ২০ সপ্তাহ পরে সাধারণত অন্তঃসত্ত্বাকালীন ডায়াবেটিস দেখা দেয়। এই অন্তঃসত্ত্বাকালীন ডায়াবেটিস ২০ সপ্তাহের মধ্যে শনাক্ত করা সম্ভব না হলে ২৮ থেকে ৩৪ সপ্তাহের মধ্যে এই মায়ের উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। এই মায়ের আবার উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয় করা না হলে তখন একলাম্পশিয়া হয়ে মারা যাচ্ছেন। এটি মাতৃমৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ। এই দুটি কারণ যখন বাদ দিয়ে দিলাম, কিছুই ঘটল না। তখন সন্তান জন্মদানে ও পরে নারীর জ্বর দেখা দিচ্ছে। এটাকে আমরা প্রসব-পরবর্তী ইনফেকশন বলছি। এটি হচ্ছে মাতৃমৃত্যুর তৃতীয় কারণ। সবার পেছনে একটি রোগই সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে, এর নাম পিসিওএস। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রজনন স্বাস্থ্যের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। আমরা যদি প্রজনন স্বাস্থ্য ঠিক করতে চাই এবং অন্তঃসত্ত্বাকালীন ও মাতৃমৃত্যু কমাতে চাই তাহলে পিসিওএস শনাক্তে গুরুত্ব দিতে হবে। দেশে যদি মাতৃমৃত্যু কমাতে চাই, এটি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে হবে। সময়মতো নির্ণয় ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে আমরা একটি সুস্থ জাতি উপহার দিতে পারব। যে সন্তান বাংলাদেশের পিসিওএস মায়ের হলো, সে যাতে সুস্থ নাগরিক হিসেবে বড় হয়, সেজন্য পিসিওএস সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
ডা. ফারিয়া আফসানা
নারী যে শারীরিক সমস্যাগুলোতে বেশি ভোগেন, তার অন্যতম হচ্ছে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস)। বর্তমান বিশ্বের প্রতি ১০ জন নারীর ভেতর অন্তত একজন এ রোগে আক্রান্ত। যাঁরা এনুভুলেশনের কারণে বন্ধ্যত্বের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের মধ্যে শতকরা ৭৫ জনের পিসিওএস দেখা যায়। এই সমস্যার সঠিক কোনো কারণ জানা না গেলেও এটিকে একটি বংশগত রোগ বলা যায়। আক্রান্তের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ বছর বয়সী কিশোরীর সংখ্যা বেশি। পিসিওএস দেখা দিলে নারীর শরীরে ইনসুলিন হরমোনের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়। আবার পুরুষ হরমোন এন্ড্রোজেনের মাত্রা রক্তে বেড়ে যায়। ফলে ওভারি বা ডিম্বাশয় থেকে ওভাম বা ডিম তৈরি হতে নানা অসুবিধা হয়। পিসিওএসে আক্রান্ত হলে প্রথমে অনিয়মিত রক্তস্রাব দেখা যাবে। মাঝে মাঝেই দুটি রক্তস্রাবের তারিখের মধ্যে ১৮ থেকে ৩০ দিনের তফাৎ বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ থেকে ৬০ দিন বা তারও বেশি। ওজন বেড়ে যায়। এগুলো ছাড়াও নারীর শরীরে অবাঞ্ছিত লোম দেখা যায়। এ ছাড়া অনেকের ক্ষেত্রে অত্যধিক ব্রণ, চামড়ায় কালচে ছোপ চোখে পড়ে। বিশ্বে বিভিন্ন গবেষণা চললেও এ রোগের সঠিক কারণ জানা যায়নি।
অধ্যাপক ফারুক পাঠান
দেশে তরুণীর মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পিসিওএস সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু তাঁরা প্রকাশ্যে বলেন না। আন্তঃসামাজিক পরিবর্তন ও নগরায়ণের কারণে এই রোগের হার বেশি দেখা দিচ্ছে বাংলাদেশে। পরিশ্রমের অভাব বা অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণেও এই রোগ দেখা দিতে পারে। নগরায়ণের প্রভাবে আমাদের অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এই রোগ বাড়াতে সহায়ক। এটি শুধু এখন হরমোনজনিত সমস্যা নয়; এটি একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবেও পরিগণিত। আমাদের জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। পিসিওএস প্রতিরোধে ওজন নিয়ন্ত্রণ জরুরি। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে পিসিওএসের মতো আর ১০টি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তী সময়ে তাঁর হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবে এই রোগী চিকিৎসকের কাছে কম আসেন। প্রতিক্রিয়াটা ধীরে ধীরে হয় বলে ৫০ শতাংশের বেশি রোগী পরীক্ষার বাইরে থেকে যান। এ রোগ শণাক্তকরণে প্রথমেই পেটের নিচের অংশে আলট্রাসনোগ্রাম করতে হবে। এই পরীক্ষায় ওভারির আয়তন, ওভারিতে ছোট সিস্টের মতো কয়টি অংশ আছে (সিস্টের মতো, সিস্ট নয়) এবং অন্য কিছু বিষয় দেখা হয়। এর সঙ্গে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। যাতে সুগার, ইনসুলিন, লিপিড প্রোফাইল, থাইরয়েড হরমোন, ভিটামিন ডির মাত্রা কেমন রয়েছে তা জানা যায়। পরীক্ষায় রোগ শনাক্ত হলে জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। মনে রাখতে হবে এটি টিউমার নয়, এক ধরনের শারীরবৃত্তীয় বিপাকীয় পরিবর্তন। তাই খাবার ও নিয়মিত ব্যায়ামের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ক্যালরির উৎস বদলাতে হবে।
ডা. শাহজাদা সেলিম
বাংলাদেশে পিসিওএস আক্রান্ত রোগীর মধ্যে যাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, সংখ্যাগত দিক থেকে তা কম- সাধারণভাবে এ ধারণাই দেওয়া হয়। বিশ্বে প্রজনন ক্ষমতাসম্পন্ন ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারী পিসিওএসে আক্রান্ত হন।  খুব অল্পসংখ্যক রোগী আছেন এ বয়স সীমার বাইরে। ভৌগোলিক দিক দিয়ে এবং জেনেটিক ও পরিবেশগত কারণে এ রোগের আলাদা আলাদা বিস্তার ঘটে। গড়পড়তা তা ৮ থেকে ১০ শতাংশ। বাংলাদেশে যতটুকু গবেষণা হয়েছে, তা খুবই কম। হাসপাতালগুলোতে যেসব নারী সেবা নিতে আসেন, তাঁদের মধ্যে ১৫ শতাংশই পিসিওএসে আক্রান্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের রিপ্রডাকটিভ এন্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগে বন্ধ্যত্বের সমস্যা নিয়ে যাঁরা আসেন, তাঁদের মধ্যে ৮১ শতাংশ রোগীই পিসিওএস আক্রান্ত। ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের ছাত্রীদের নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, এ হাসপাতালের ছাত্রীর মধ্যে ৩৭ শতাংশ এ রোগে ভুগছেন। এখন গবেষণা করা হলে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অন্য দেশের তুলনায় বেশি হবে। তবে সেটি কোনোভাবেই ১০ শতাংশের নিচে নয়। পিসিওএস রোগটি নিরাময়যোগ্য নয়, প্রতিরোধযোগ্য। এ রোগে আক্রান্ত প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ নারীর মধ্যেই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স পিসিওএস-এর কারণ পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেকের মধ্যেই জীবনযাপনের পরিবর্তন আনতে হবে। নয়তো খাদ্য অব্যবস্থাপনা, শারীরিক শ্রম বিমুখতা ও দিনে দিনে দৈহিক ওজন বাড়ার কারণে এ রোগে আক্রান্ত হবে। এটি কয়েকটি বিষয়ের সমন্বিত একটি হরমোনজনিত জটিলতা, যার কারণে মেয়েদের শরীরে অবাঞ্ছিত লোম দেখা যায়। সাধারণত কিশোরীদের দেহে বয়ঃসন্ধির আগে খুবই হালকা বাদামি রঙের, অনেকটা ত্বকের রঙের মতো লোম, মাথায় কালো বা বাদামি চুল বাড়তে থাকে। কিন্তু বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর কিছু কিশোরী তাদের মুখে কিশোরদের মতো লোম লক্ষ্য করে বিচলিত হতে পারে। কেননা এ লোমের অবস্থান, রং ও বিস্তৃতিতে অনেকটাই দাড়ি-গোঁফের মতোই। এটি মূলত পিসিওএসের অন্যতম লক্ষণ। এ রকম লোম কিশোরীর বগলে, বুকে বা অন্য স্থানেও থাকতে পারে। কারও কারও হাত-পায়ের লোম অনেকটা পুরুষালি ধাঁচের হতে পারে। পাশাপাশি সেটি ওজন বাড়িয়ে দিচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১০ জন নারীর ভেতর অন্তত একজন এ রোগে আক্রান্ত। আক্রান্ত নারীর সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা হয় তা অনিয়মিত পিরিয়ড। সাধারণত ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে পিরিয়ডের স্বাভাবিক সময়। কিন্তু পিসিওএস হলে দুই মাস বা তিন মাস পরপর পিরিয়ড হয়। যাঁরা এই সমস্যার সম্মুখীন, তাঁদের ভেতর ৫০ শতাংশ নারীই স্থূলকায়।
ডা. এম সাইফুদ্দিন
পিসিওএসে বর্তমানে অনেক নারীই ভুগছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে এ রোগে আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে। বলতে গেলে, এটি বহুমুখী সমস্যা তৈরি করে মেয়েদের শরীরে। এন্ড্রোজেন হরমোন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণে ডিম্বাশয়ের আশপাশে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। এ কারণে ডিম্বাশয় থেকে যে ডিম্বাণু বড় হয়ে ডিম বের হওয়ার কথা, তাতে বাধা সৃষ্টি হয় এবং একসময় ডিম বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। বংশগত ও পরিবেশগত কারণে এ রোগ বেশি হয়। এক কথায়, নারীর প্রজনন হরমোনের তারতম্যই পিসিওএস হওয়ার কারণ। এ রোগ প্রতিরোধে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। রাতের খাবার যতটুকু সম্ভব আগে খেতে হবে, প্রচুর পানি পান করতে হবে, ফলমূল ও শাকসবজি বেশি করে খেতে হবে।
ডা. তানজিনা হোসেন
এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। এটি হরমোনজনিত রোগ হলেও একটি আন্তঃসামাজিক সমস্যাও বটে।  আমাদের অর্থনীতি উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে যে অভিশাপ নিয়ে এসেছি তা হলো, কায়িক পরিশ্রমহীন একটি জীবন। মন্দ খাদ্যাভ্যাসের কারণে আমাদের ওজন দ্রুত বাড়ছে। এই জিনিসগুলো থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। তা না হলে প্রতিরোধের বেলাও প্রথম কথা মনে রাখতে হবে- ওজন যাতে না বাড়ে। এই প্রতিরোধটা আমাদের শৈশব থেকে করতে হবে। এই সময়ে শিশুকে শারীরিক ব্যায়াম করার সুযোগ দিতে হবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য গণমাধ্যমের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। পড়ার চাপের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক সুস্থতাও খুবই জরুরি। একই সঙ্গে এই শিক্ষা পরিবার থেকেও দিতে হবে। দ্বিতীয় হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস। এটি শিশুদের প্রচণ্ড রকমের খারাপ হয়ে গেছে। অনেক সময় নিজেদের ব্যস্ততার কারণে কেনা ফাস্টফুড সন্তানদের ধরিয়ে দিই। এ জিনিসগুলো থেকে বের হয়ে আসতে আমাদের চিন্তার পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের সঙ্গে এ বিষয়ে মা-বাবারও সচেতন হতে হবে। এটি করতে পারলে রাষ্ট্রীয় ও পারিবারিক খরচ কমিয়ে আনতে পারি। পিসিওএস রোগীরা প্রতিনিয়ত সামাজিকভাবে বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। অনেকে পার্লারে পার্লারে ঘোরেন। অনেকেই হতাশায় ঘোরেন। নানা অপচিকিৎসা নেন। এসব সমস্যা অনেক অংশেই কমিয়ে ফেলতে পারি যদি সামাজিকভাবে পিসিওএসের বিষয়ে সচেতন হতে পারি। সেপ্টেম্বর মাস হচ্ছে পিসিওএস সচেতনতার মাস। এই মাসে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব।
ডা. নাজমা আক্তার
পিসিওএস রোগের মোট চারটি ধরন। এই চারটি ধরনের প্রধান তিনটি বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে : ১. শরীরে অথবা রক্তে পুরুষ হরমোনের আধিক্য, ২. অনিয়মিত মাসিক, ৩. আলট্রাসনোগ্রাফিতে ডিম্বাশয়ে অসংখ্য সিস্ট। টাইপ 'এ'-তে (ক্ল্যাসিক্যাল পিসিওএস) ওপরের তিনটি বৈশিষ্ট্যই রোগীর শরীরে বর্তমান থাকবে। ফলে নারীর মুখ ও শরীরে অবাঞ্ছিত লোম উঠবে আর রক্তেও পুরুষ হরমোনের মাত্রা বেশি থাকতে পারে। এর সঙ্গে অনিয়মিত মাসিক (দুটি মাসিকের মধ্যকার পার্থক্য ২১ দিনের কম বা ৩৫ দিনের বেশি অথবা বছরের আটবারের কম) হবে। টাইপ 'বি'তে থাকবে নারীর অবাঞ্ছিত লোম বা রক্তে পুরুষ হরমোনের আধিক্য, আর অনিয়মিত মাসিক। টাইপ 'সি'তে অবাঞ্ছিত লোম বা রক্তে পুরুষ হরমোনের আধিক্য, আর আলট্রাসনোগ্রাফিতে ডিম্বাশয়ে অসংখ্য সিস্ট থাকবে। এ টাইপটিতে অনিয়মিত মাসিক আর আলট্রাসনোগ্রাফিতে অসংখ্য সিস্ট পাওয়া যাবে। টাইপ 'এ'-এর ফলে ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, জরায়ুর ক্যান্সার, রক্তে চর্বির আধিক্য, গর্ভকালীন হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। টাইপ ডি'র ঝুঁকি তুলনামূলক অনেক কম। টাইপ 'বি', টাইপ 'সি' আক্রান্তদের ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির আধিক্য, মেটাবলিক সিন্ড্রোম হওয়ার ঝুঁকি মোটামুটি নির্ধারিত। পিসিওএস রোগীদের শরীরে বেশি বেশি ইনসুলিন তৈরি হয়, আর ইনসুলিনের কারণে ছেলেদের হরমোন বেশি তৈরি হয়।
ডা. মারুফা মোস্তারী
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির (বিইএস) কর্মযজ্ঞ সুচারুরূপে পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এর মধ্যে পিসিওএস টাস্কফোর্স অন্যতম। পিসিওস টাস্কফোর্স গঠনের মূল উদ্দেশ্য হলো, এ রোগে আক্রান্তকে সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা ও চিকিৎসকদের দিকনির্দেশনা দেওয়া। পিসিওএস মূলত একটি হরমোনজনিত সমস্যা। যেটা প্রজননক্ষম নারীর হয়ে থাকে। বিশেষ করে ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীর মধ্যে হয়। কিন্তু অজ্ঞতা বা অন্যান্য কারণেই হোক, নারীরা এ রোগ সম্পর্কে সচেতন নন। এ রোগের ব্যাপকতাও অনেক বেশি। এ ছাড়া রোগ নিয়ে সঠিক পরিসংখ্যানও নেই বাংলাদেশে। আগে সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক নারী পিসিওএসে আক্রান্ত হতেন। কিন্তু দিনে দিনে কিশোরীদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যাচ্ছে। পিসিওএস রোগে যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা যেন অপচিকিৎসা গ্রহণ না করেন। কারণ সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে এ রোগ প্রতিরোধযোগ্য। একই সঙ্গে সুস্থ জাতি গঠনে কৈশোরকালীন থেকে মেয়েদের সুস্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন হতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একই সঙ্গে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সংশ্নিষ্ট চিকিৎসকদের গাইডলাইন দেওয়া জরুরি, যেন রোগী প্রয়োজনীয় সেবাটুকু পান। এই গাইডলাইন চিকিৎসায় সহায়তা করবে। এ ছাড়া গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করাও বিইএসের অন্যতম আরেকটি উদ্দেশ্য। পিসিওএসের সঙ্গে বন্ধ্যত্ব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ রোগ সম্পর্কে নারীরাও তেমন সচেতন নন। তাই এ বহুমুখী রোগ থেকে সুস্থ থাকার জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। সচেতন করার জন্য গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক বেশি। সম্পাদকীয় পাতায় লেখাসহ বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করার মাধ্যমে এ রোগের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি প্রতিকারে করণীয় কী, তাও জানাতে হবে।
খায়রুল ইসলাম
শুরুতেই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটিকে পিসিওএসের মতো একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক করার জন্য। আপনারা জানেন, রেনাটা লিমিটেড দেশের একটি স্বনামধন্য ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি, যার পিসিওএসের কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বেশ কিছু ওষুধ রয়েছে। পিসিওএসের মতো অন্যান্য জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিতেও আমরা বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটিকে পাশে পাব এই আশা ব্যক্ত করে এবং পিসিওএস মাসের কর্মসূচিগুলোর সফলতা কামনা করে শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।


ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম
পিসিওএস জনসচেতনতা মাস নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এমন একটি আয়োজন করা হয়েছে। শুধু এই অনুষ্ঠান নয়, যে কোনো বৈজ্ঞানিক সেমিনারে রেনাটা লিমিটেড থাকে। পিসিওএস নারীর যেহেতু বড় সমস্যা, এই বিষয়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের সঙ্গে রেনাটা লিমিটেড সংযুক্ত হতে পেরেছে- এজন্য আমি রেনাটা লিমিটেডের পক্ষ থেকে পিসিওএস টাস্কফোর্স বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আজ তো শুধু গোলটেবিল বৈঠক হলো। আগামীতে বৈজ্ঞানিক সেমিনার রয়েছে। জনমানুষের সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম রয়েছে। আমি আশা করি, জনসাধারণকে সচেতন করতে যে কর্মসূচিগুলো হাতে নিয়েছি, সেগুলো সফলভাবে সম্পন্ন হবে।


শেখ রোকন
আলোচনা থেকে আমরা বুঝলাম পিসিওএস একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যার পাশাপাশি সামাজিক সমস্যাও। প্রজনন স্বাস্থ্যের সম্পর্ক রয়েছে বলে এর সঙ্গে জাতি গঠনের প্রশ্নটিও জড়িত। দেশ যখন আর্থসামাজিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এর 'সাইড ইফেক্ট' হিসেবে পিসিওএস বাড়ছে। দুর্ভাগ্যবশত, বেশিরভাগ নাগরিকই বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না। এজন্য জনসচেতনতা জরুরি। স্বাস্থ্য খাতের পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমেরও দায়িত্ব রয়েছে এ ক্ষেত্রে। দৈনিক সমকাল সব সময়ই সামাজিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে জনস্বাস্থ্য সংকট নিয়ে সক্রিয় থেকেছে। পিসিওএস নিয়েও আমরা আগামী দিনগুলোতে যৌথ ও এককভাবে কাজ করে যাব।


আলোচক
অধ্যাপক এসএম আশরাফুজ্জামান
উপদেষ্টা, পিসিওএস টাস্কফোর্স ও সভাপতি, বিইএস এবং অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ

অধ্যাপক মো. হাফিজুর রহমান
উপদেষ্টা, পিসিওএস টাস্কফোর্স ও সভাপতি (নির্বাচিত), বিইএস এবং জ্যেষ্ঠ পরামর্শদাতা, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, ইউনাইটেড হাসপাতাল
ডা. রেজাউল করিম কাজল
অধ্যাপক, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
ডা. ফারিয়া আফসানা
উপদেষ্টা, পিসিওএস টাস্কফোর্স ও সহসভাপতি, বিইএস এবং সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল
অধ্যাপক ফারুক পাঠান
প্রধান পৃষ্ঠপোষক, পিসিওএস টাস্কফোর্স ও উপদেষ্টা, বিইএস এবং পরিচালক (শিক্ষা), বারডেম হাসপাতাল
ডা. শাহজাদা সেলিম
উপদেষ্টা, পিসিওএস টাস্কফোর্স ও সাধারণ সম্পাদক, বিইএস এবং সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
ডা. এম সাইফুদ্দিন
উপদেষ্টা, পিসিওএস টাস্কফোর্স ও বৈজ্ঞানিক সম্পাদক, বিইএস এবং সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ডা. তানজিনা হোসেন
উপদেষ্টা, পিসিওএস টাস্কফোর্স ও সাংগঠনিক সম্পাদক, বিইএস এবং সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ
ডা. নাজমা আক্তার
সদস্য সচিব, পিসিওএস টাস্কফোর্স ও আজীবন সদস্য, বিইএস এবং সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ
ডা. মারুফা মোস্তারী
সমন্বয়ক, পিসিওএস টাস্কফোর্স ও দপ্তর সম্পাদক, বিইএস এবং সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
খায়রুল ইসলাম
মার্কেটিং ম্যানেজার (মার্কেটিং ফার্মা ডিভিশন), রেনাটা লিমিটেড
সঞ্চালক
শেখ রোকন
প্রধান, সম্পাদকীয় বিভাগ, দৈনিক সমকাল

অনুলিখন
সাজিদা ইসলাম পারুল
স্টাফ রিপোর্টার, সমকাল

তবিবুর রহমান
স্টাফ রিপোর্টার, সমকাল
ইভেন্ট সমন্বয়
হাসান জাকির, সমকাল
ব্যবস্থাপনা
ফেইথ কমিউনিকেশন্স

বিষয় : পিসিওএস পিসিওএস প্রতিরোধে

মন্তব্য করুন