- গোলটেবিল
- ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রসারে সম্মিলিত উদ্যোগের বিকল্প নেই
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রসারে সম্মিলিত উদ্যোগের বিকল্প নেই

পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী, বাতব্যথা, প্যারালাইসিস প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তি, অটিজমে আক্রান্ত শিশু থেকে শুরু করে সব রোগের ক্ষেত্রেই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার নানামাত্রিক ভূমিকা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনেস্কোর তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতি ১০ জনে একজন কোনো না কোনো প্রকার প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত। দেশে মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশই প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত। বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস উপলক্ষে গত রোববার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সমকাল কার্যালয়ে আয়োজিত 'স্বাস্থ্য ও রিহ্যাবিলিটেশন খাতে টেকসই উন্নয়নে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। যৌথভাবে এ বৈঠক আয়োজন করে সমকাল এবং বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। সহযোগিতায় ছিল ঢাকা কলেজ অব ফিজিওথেরাপি (ডিসিপিটি), এএসপিসি ম্যানিপুলেশন থেরাপি এবং ময়মনসিংহ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড হেলথ সায়েন্সেস
নুরুজ্জামান আহমেদ
বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন সঠিক বাস্তবায়নে যা করা প্রয়োজন তাই করা হবে। আমি আমার তরফ থেকে কথা দিয়ে যাচ্ছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল কার্যকরে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। মানুষকে ফাঁকি দিয়ে সব কিছুই করা সম্ভব। আমরা শিকড় থেকে সরে যাচ্ছি তো যাচ্ছিই। দুষ্টু চক্রের নাগরদোলায় দৌড় খেয়ে আমরা হারিয়েছি আমাদের কাঙ্ক্ষিত পথ। বর্তমান সমাজের প্রতিটি স্তরে এমন অবস্থা। মুখে আমরা অনেক বড় কথা বলছি, তবে কাজের বেলায় দায়িত্বশীল নই। প্রতিটি কাজের ব্যাপারে আমরা যে যেখানে আছি সেই জায়গা থেকে দায়িত্বশীল হতে হবে। স্বাভাবিক চিকিৎসকরা তাঁদের সেবা নিশ্চিত করবেন এবং ফিজিওথেরাপিস্টরা তাঁদের সেবা নিশ্চিত করবেন। আমাদের দায়িত্ব আমরা নিজ থেকে পালন করব।
মানুষ যতদিন বাঁচে ততদিনই সুস্থ থাকতে চায়। দেহ আছে বলেই তো রোগের উৎপত্তি। রোগ হওয়ার পরেই তো মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে, আর তাই তার দরকার হয় সুস্থতার। সুস্থতার সুবাদে মানুষ এমনভাবে দৌড়ায় যে তাকে যখন যেখানে যেতে বলা হবে সে তখন সেখানেই যায়। ফিজিওথেরাপি যেহেতু একটি বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি, তাই মানুষের রোগ নির্ণয়সহ অন্যান্য সুস্থতার পেছনে ফিজিওথেরাপিস্টরা অনেক ভূমিকা রাখেন।
অধ্যাপক ডা. আলতাফ হোসেন সরকার
১৯৭৩ সালে যখন এই বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়, তখনকার সিলেবাস এবং প্রাসঙ্গিকতার সঙ্গে বর্তমান প্রাসঙ্গিকতা অনেকাংশে পরিবর্তন হয়েছে। একসময় ধরা হতো, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই কোর্স শুরু করেছেন অর্থপেডিক চিকিৎসার অংশ হিসেবে। অর্থাৎ, একজন লোকের হাত ভেঙে গেছে অথবা কোনো কারণে কারও হাত কাজ করছে না, তিনি খেতে পারছেন না, সেই হাতকে সচল করতে হলে ফিজিওথেরাপি দিতে হবে। তবে ফিজিওথেরাপি এখন আর আগের অবস্থানে নেই, বরং আরও ভালো অবস্থানে এসেছে।
তবে এ বছরের ফিজিওথেরাপি দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত বইয়ে ফিজিওথেরাপিকে মাত্র সাত লাইনের মধ্যে বলা হয়েছে। এটা আশ্চর্য ব্যাপার! আপনি কি অ্যালোপ্যাথি সম্পর্কে সাত লাইনে বলতে পারবেন? হোমিওপ্যাথি কিংবা আয়ুর্বেদকে কি সাত লাইনে বর্ণনা করা যাবে? এই সাত লাইনে এখন ফিজিওথেরাপি নেই। বরং আমরা আরও অনেক এগিয়ে গেছি। ফিজিওথেরাপিস্ট এখন 'ফার্স্ট কনটাক্ট পারসন'। খেলতে গিয়ে কোথাও ব্যথা পেলে ফিজিওথেরাপিস্টই কিন্তু 'ফার্স্ট কনটাক্ট পারসন'। সেই ফাস্র্দ্ব কনটাক্ট পারসনকে সাত লাইনের মধ্যে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। আমরা এখন এই চিকিৎসা ব্যবস্থাকে এই দেশের গ্রামীণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। আমরা যখন এটি শুরু করেছিলাম, তখন ফিজিওথেরাপি আজকের এ অবস্থায় ছিল না। তখন কেউই এটার নাম জানত না। এখন এটি আর সেই অবস্থায় নেই। বর্তমানে আমরা এটিকে অনেক শাখায় ভাগ করেছি। ফিজিওথেরাপিকে এখন শিক্ষা, গবেষণা ও ক্লিনিক্যালভিত্তিক করা হয়েছে। সুতরাং, ১৯৭৩ সালের ফিজিওথেরাপির সঙ্গে ২০২২ সালের ফিজিওথেরাপির মধ্যে রাত-দিন পার্থক্য। মাথা থেকে পা পর্যন্ত ফিজিওথেরাপিস্টরা এখন ডায়াগনসিস করতে পারেন। ১৯৭৩ সালে আমরা ফিজিওথেরাপিস্টরা স্নাতক করতাম, আর এখন আমরা পিএইচডি করছি। আমরা অনেক এগিয়ে এসেছি। শুধু আমরা এগিয়েছি তা নয়। আমরা আমাদের সেবা দিয়ে দেশের মানুষকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছি।
ডা. মো. ফিরোজ কবীর
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে এ দেশে যে পেশার জন্ম হয়েছিল এবং তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে যে পেশা এ দেশে স্বাধীনতা পেয়েছিল, সেই পেশাকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে এ দেশে আইন অনুযায়ী 'ফিজিওথেরাপি কাউন্সিল' চালু করা জরুরি। অতিসত্বর বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিলের কার্যক্রম চালু করাসহ একজন ফিজিওথেরাপিস্টকে রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দিতে হবে। রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিলে আনুপাতিক হারে ফিজিওথেরাপিস্টদের প্রতিনিধি নির্ধারণ করতে হবে এবং অংশীদার নয় এমন পেশাজীবীদের প্রতিনিধিত্ব বাতিল করতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে টারশিয়ারি পর্যায়ে ফিজিওথেরাপিস্টদের জন্য প্রথম শ্রেণির পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দিতে হবে। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের প্রথম শ্রেণির শূন্য পদগুলোতে দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের পিএসসির প্রথম শ্রেণির ক্যাডার সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে নিয়োগপ্রাপ্ত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের পদগুলোকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর
করা জরুরি। এ ছাড়া প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে 'বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি' প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ডা. এনামুর রহমান
স্বাভাবিক চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। আমি নিজেও এই চিকিৎসা নিয়ে কোনো ওষুধ ছাড়া সুস্থ হয়েছি। এই চিকিৎসার প্রসার বাড়াতে সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থা জরুরি। মেডিসিনের চিকিৎসক যেমন প্রয়োজন, সার্জারি চিকিৎসকও প্রয়োজন। একই সঙ্গে ফিজিওথেরাপির চিকিৎসক প্রয়োজন। এজন্য চিকিৎসায় রেফারেল পদ্ধতি চালু করার প্রয়োজন। এটি একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা। আল্লাহর একটি বিশাল আশীর্বাদ। কাজেই আমি মনে করি, এটার প্রসার দরকার। এখানে যারা পড়াশোনা করছেন, তাঁদের স্বীকৃতি দরকার। এজন্য নিবন্ধন প্রয়োজন। ২০১৮ সালে এ বিষয়ে আইন হয়েছে। দুঃখজনক বিষয় হলো, এটি এখনও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এখনও জনবল নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এটা তো কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেহেতু আইনে উল্লেখ আছে, ফিজিওথেরাপিস্টদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নিবন্ধন দেবে। পড়ানোর দায়িত্ব নেবে বিশ্ববিদ্যালয়। তাহলে একজন ফিজিওথেরাপিস্টের বিষয়ভিত্তিক কর্মক্ষেত্র তৈরি করা সম্ভব হবে না। প্রতিটি মেডিকেল কলেজে যদি ফিজিওথেরাপি বিভাগ চালু করা হয়, সেখানে যদি ফিজিওথেরাপিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন দেশের সব মানুষ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পাবে। তখন হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসক রেফার করতে পারবেন ফিজিওথেরাপিস্টদের কাছে। রেফারেল চিকিৎসার জন্যও সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থার অধীনে নিয়ে আসা প্রয়োজন। এটা এখন আর এককভাবে চলা উচিত নয়। সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে বলব, এই কাউন্সিলটাকে দ্রুত কার্যকর করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
ডা. শাহরিয়ার নবী
১৬ কোটি মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। মেডিকেল চিকিৎসায় এখন হাজার হাজার শাখা খোলা হয়েছে। সবাই কিন্তু মৌলিক জায়গা থেকে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এ কারণে চিকিৎসা পদ্ধতিটিকে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসতে হবে। সর্বজনীনভাবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা বাস্তবায়নে কোন জায়গায় বাধা রয়েছে, সেই জায়গা খোঁজে বের করে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এটা হলো মৌলিক বিষয়। এটি করতে পারলে অনেক দূর এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে এই চিকিৎসা ব্যবস্থাকে।
১৯৭৩ সালে যে প্রক্রিয়ায় আমরা ফিজিওথেরাপি কার্যক্রম শুরু করেছিলাম, তার থেকে অনেক উন্নতি লাভ করেছি। তাই আমাদের কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে হবে। না হলে পরবর্তী প্রজন্ম কাউকে ক্ষমা করবে না। আমরা কারও দিকে আঙুলের ইশারা করব না। আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের পরিকল্পনা কী? কী আমাদের স্বপ্ন? কী আমাদের বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ? ফিজিওথেরাপি পড়ে অনেকেই বিদেশে কাজ করছেন। মেধা ও যোগ্যতা রয়েছে বলেই তাঁরা যেতে পারছেন। তাঁদের বাধা দেওয়ারও কিছু নেই। আটকানোরও সুযোগ নেই। বরং তাঁদের সাধুবাদ জানানো উচিত। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করি, সাত বছর আগে আমার ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করি। প্রথমে নিউরোমেডিসিনের চিকিৎসকের কাছে গিয়েছি। নিউরোসার্জনের কাছে গিয়েছি। ফিজিক্যাল মেডিসিনের কাছে গিয়েছি। আমি নিজে রেডিওলজিস্ট হওয়ায় এমআরআই স্ক্যান করেছি। দেশের চিকিৎসার যে পদ্ধতি, সেই পদ্ধতিটা পরিস্কার নয়। এক চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আমি চার জায়গাতে গিয়েছি। যদি চিকিৎসায় রেফারেল পদ্ধতি চালু থাকত, এভাবে প্রত্যেককে দ্বারে দ্বারে যাওয়া লাগত না। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে। চিকিৎসকরা নিজের রোগী অন্য চিকিৎসকের কাছে রেফার করাকে নিজের দুর্বলতা মনে করেন। এই মনন থেকে বের হয়ে আসতে হবে। চিকিৎসকের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব কাজ করে। অনেকেই প্রশ্ন করেন, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নাকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে? শিক্ষার জায়গাটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সেবাটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে করতে হবে। এ চিকিৎসা হাসপাতালে দিতে হবে। বিছিন্নভাবে চেম্বারে যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, এটি সার্বিকভাবে লাভজনক হচ্ছে না। এর কারণে মূল জায়গা থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি। আমাদের সেবাটা হাসপাতালভিত্তিক গড়ে তুলতে হবে। তাহলে আমাদের সামনে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে।
রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এই কাউন্সিল আপনাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। তবে এখন তিন মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে দাবি করছেন। তাঁরাই আপনাদের পেশার জন্য মূল চ্যালেঞ্জ। এজন্য আপনাদের নিবন্ধন প্রয়োজন। সেই নিবন্ধনের মাধ্যমেই সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন। বিএমডিসির মাধ্যমে নিবন্ধন নিয়ে চিকিৎসকরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কাজ করছেন। সেখানে তাঁরা সেবা দিচ্ছেন। কোথায় কার অধীনে চিকিৎসা দিচ্ছেন, এটা কোনো ব্যাপার নয়। তাঁর দ্বারা ১৬ কোটি মানুষের উপকার হচ্ছে- এটাই বড় ব্যাপার। সেবার বিষয়টিতে আমি মনে করি, স্বাস্থ্যসেবার অধীনে থাকা ভালো। তবে আপনারা যদি ব্যাঙের ছাতার মতো ইনস্টিটিউট তৈরি করেন তাহলে আপনারা হারিয়ে যাবেন। উপজেলা পর্যায়ে এখনই পদ সৃষ্টির প্রয়োজন নেই। পদ সৃষ্টি করতে গেলে আপনারা নিজেরাই হারিয়ে যাবেন। নীতিনির্ধারক যাঁরা আছেন তাঁরা জানেন। পদ তৈরি হওয়ার পর লোক না পাওয়া গেলে এটি হারিয়ে যায়। এই পদ তৈরি করতেও ১০ বছর লাগবে। এর মধ্যে আপনারা হারিয়ে যাবেন। তাই টারশিয়ারি মেডিকেল কলেজ ও ইনস্টিটিউট পর্যায়ে কাজ শুরু করেন। আমরা সহযোগিতা করব। আমরা চাই চিকিৎসক ও ফিজিওথেরাপিস্টরা একসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করুন।
অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন
চিকিৎসকদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে হবে। আমরা পেশাগত জায়গায় এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে ঢুকতেই দিই না। আমাদের এই মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। এজন্য আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। এক ছাদের নিচে যদি আমরা সব সেবা না নিশ্চিত করতে পারি তাহলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। সেই সব দেশে ফিজিওথেরাপিস্টদের চিকিৎসক হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। বিশ্ব এখন এক ছাদের নিচে সব সেবা নিশ্চিতের জন্য কাজ করছে। একটি হাসপাতালে ভিন্ন ভিন্ন সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। তবে সবার প্রতি সবার সম্মান থাকবে। আমাদের দেশে এটি নেই। আমরা একে অন্যকে সম্মান করতে পারি না। দেশে যে মেডিকেল কাউন্সিল রয়েছে, তারা ফিজিওথেরাপি কাউন্সিলকে স্বীকৃতিই দেয় না। এটা আমার জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি। যখন আমি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয় খুলতে গিয়েছিলাম, এমন কোনো চিকিৎসক নেই যে বাধা দেননি। এমন কোনো শ্রেণি নেই, যারা বাধা দেয়নি। অনেকেই ফোন করে বলেছেন, এটি করার দরকার নেই। আমি তাঁদের বলেছিলাম, যদি কোনো গুরুতর কারণ দেখাতে পারেন তাহলে আমি এটি বন্ধ করে দেব। কাজেই আমরা যদি একে অন্যের পরিপূরক না হই তাহলে কিন্তু সাধারণ মানুষ সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে। আর কাউন্সিল নিয়ে এত জোরাজুরি করার দরকার নেই। আগে পড়াশোনা শেষ করে কোনো প্রতিষ্ঠানে দু'এক বছর পরীক্ষা করার পর নিবন্ধন প্রয়োজন হবে, তখন কাউন্সিল থেকে নিবন্ধন নিয়ে নেবেন। এটি নিয়ে এখনই এত জোরাজুরি করার প্রয়োজন নেই। মাননীয় মন্ত্রীদের উদ্দেশে বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই- আমরা মানুষের সেবা নিশ্চিতের জন্য কাজ করি। আমাদের ফাইলগুলো যখন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যায়, সেগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করে দিলে ভালো হয়। তাহলে আরও বেশি সেবা নিশ্চিত করতে পারব। আমি একটি চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম, সেটির কাজ শেষ হয়ে বের হতে চার বছর সময় লেগেছে। এক লাইনের চিঠি বের হতে যদি এত সময় লাগে তাহলে অন্য কাজ কখন করব! এমন পরিস্থিতির মধ্যে যদি তিনটি মন্ত্রণালয়ের কাছে দৌড়াদৌড়ি করা লাগে ফিজিওথেরাপিস্টদের তাহলে কাজ করা আরও কঠিন হয়ে যাবে।
ডা. সনজিত কুমার চক্রবর্তী
চিকিৎসাবিজ্ঞানের সব শাখার 'প্রি-অপারেটিভ' এবং 'পোস্ট অপারেটিভ' ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমরা যখন সিআরপিতে পড়াশোনা করেছি, তখন আমরা কার্ডিওলজি, আইসিইউ, সিসিইউ এসব জায়গায় কাজ করেছি। তখন ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আমাদের সুপারভাইজাররা আসতেন, পড়াতেন। এরপর নিটোরে দেখেছি, প্রতিটি অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এসব রোগীকে ফিজিওথেরাপি না দেওয়া হলে তাদের মধ্যে প্রতিবন্ধিতা চলে আসে। যেমন, অস্ত্রোপচারের পর সঠিক থেরাপি না পাওয়ার কারণে রোগীর জয়েন্ট রেঞ্জগুলো বিকল হয়ে পড়ে, যার ফলে সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার পরও সঠিক ফল অনেকে পাচ্ছেন না। তাই চিকিৎসা পেশার সব শাখার সঙ্গে ফিজিওথেরাপিকে সমান্তরালভাবে নিয়ে চলতে হবে। আমাদের দেশেও এটির ব্যত্যয় করা যাবে না। এ দেশে ফিজিওথেরাপিস্টের সংখ্যা অনেক কম ছিল। বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশন এবং সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেই সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু সরকারিভাবে কলেজ না হওয়া পর্যন্ত ফিজিওথেরাপিস্টের সংখ্যা বাড়ানো অনেক কঠিন। বেসরকারি খাতে আমরা কয়েকটি কলেজ চালু করার চেষ্টা করেছি। ময়মনসিংহ, যশোরসহ কয়েকটি জায়গায় কলেজ চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে একটি বিভাগ চালু করা হয়েছে। এটি আমাদের জন্য সুখবর।
এ দেশের যত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, প্রতিটি জায়গায় ফিজিওথেরাপিবিষয়ক কোর্স চালু করা প্রয়োজন। আমরা চাই, দেশের মানুষ যেন সেবা পায় এবং যুবসমাজের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়। আমরা একটি বেকারত্বমুক্ত বাংলাদেশ চাই। এ বিষয়ে পড়াশোনা করে এখন যদি ৫০ হাজার ফিজিওথেরাপিস্ট বের হয়, একজনও বেকার থাকবেন না। কারণ, বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ফিজিওথেরাপিস্টের চাহিদা রয়েছে। এটি এমন একটি পেশা, যেখানে চাকরির জন্য ইন্টারভিউও দেওয়া লাগবে না, এমনিতেই চাকরি পাওয়া যাবে। যাঁদের ব্যথা রয়েছে তাঁরাই তাঁদের কষ্টটা বোঝেন। আমি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে অন্তত ২০০টি ক্যাম্পেইন করেছি। সেখানে হাজার হাজার ব্যথার রোগী দেখেছি। তাঁরা প্রচণ্ড কষ্টে থাকেন। আমরা যখন সার্কুলার দিতাম যে, ব্যথার রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে, তখন শত শত রোগী এসে হাজির হতেন। বর্তমানে এ দেশে ফিজিওথেরাপিস্ট রয়েছেন, তাঁরা একেকজন উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। তাঁরা কোনো না কোনো চেম্বার, ক্লিনিক কিংবা হাসপাতাল স্থাপন করে খুব ভালো সেবা দেওয়ার পাশাপাশি ভালো ব্যবসা করছেন। একই সঙ্গে তাঁরা যুবসমাজকে চাকরি দিচ্ছেন। সে কারণে আমার মনে হয়, ফিজিওথেরাপি পেশাকে আরও এগিয়ে নেওয়া উচিত। এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সরকারি পদ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। প্রতিটি মেডিকেল কলেজ, থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সব সরকারি হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ফিজিওথেরাপিস্টদের নিয়োগ দেওয়া হলে, গ্রামের লোকজন এই সেবা সহজেই পাবে। কারণ সবাই ঢাকায় এসে চিকিৎসা নেওয়ার মতো সচ্ছল নয়।
ডা. মো. শাহাদৎ হোসেন
বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশন ২০০৭ সালে 'ওয়ার্ল্ড কনফেডারেশন অব ফিজিক্যাল থেরাপি'র সদস্যপদ লাভ করে। তখন থেকেই ১৫ বছর ধরে আমরা ৮ সেপ্টেম্বরকে 'বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস' হিসেবে পালন করছি। ১২২টি দেশে একযোগে দিবসটি পালন করা হয়। সে হিসেবে বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশন নিয়মিত এই দিবস পালন করে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিকে মূলধারায় নিয়ে আসাই আমাদের লক্ষ্য। এই চিকিৎসা যেন আমরা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারি, এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। যখন একজন মানুষ তাঁর বয়স ৪০ পার করেন, তখন তাঁর 'ডিজেনারেশন' খুব তাড়াতাড়ি শুরু হয়। ৩৫-এর পর এটি শুরু হয় এবং ৪০-এর পর এটি প্রকট আকার ধারণ করে। এ অবস্থায় কেউ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে, তিনি শুরুতে প্রচলিত বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তৎক্ষণাৎ সমস্যার মাত্রা কমাতে এটি ভালো। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এ অবস্থায় ওই সব রোগীর 'নি বেন্ডিং'-এর মেকানিজম বন্ধ করে দেওয়া হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে, ওই জয়েন্টের ভেতরে মেকানিক্যাল পরিবর্তন হয়। ওই স্থানের সাইনোভিয়াল মেমব্রেন থাকে, যা হাঁটুতে গিয়ে লুব্রিক্যান্ট হিসেবে কাজ করে। যখন আমরা একজন রোগীকে বলি 'ডোন্ট বেন্ড দ্য নি', তখন আমরা এটি পরিমাপ করি না বা পরামর্শ দিই না যে, রোগী কতদিন এই পরামর্শ মেনে চলবেন। এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে তাঁর হাঁটুর জয়েন্টে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। একসময় তাঁকে হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করতে বলা হয়। ওই রোগীর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল টিমে যদি একজন ফিজিওথেরাপিস্ট থাকতেন, তাহলে রোগীকে 'ফাংশনাল মুভমেন্ট' করানোর মাধ্যমে তাঁকে হয়তো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া যেত। অর্থাৎ এই ধরনের রোগীর যতটুকু মেডিকেল চিকিৎসা দরকার, তার চেয়ে বেশি দরকার তাঁকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। এজন্য ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব অপরিসীম। ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশন ২০১৬ সাল থেকে কাউন্সিলের বিষয়ে কাজ করছে। এ বিষয়ে সংশ্নিষ্টদের প্রতি আমার অনুরোধ, তাঁরা যেন দ্রুত এ বিষয়ে কাজ শুরু করেন। এ ছাড়া ফিজিওথেরাপিবিষয়ক আরও মানসম্মত কলেজ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
ফিজিওথেরাপি যেহেতু চিকিৎসাবিজ্ঞানের অঙ্গ, তাই একজন ফিজিওথেরাপিস্টকে জানতে হয় স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের প্রায় অনেক বিষয়ে। তাঁরা অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, প্যাথলজি, সাইকোলজি, ফার্মাকোলজি, কাইলোসিওলজি, অর্থোপেডিক্স, রিউমাটোলজি সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন। আর এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে একজন রোগীর সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলেন একজন ফিজিওথেরাপিস্ট। একজন ব্যথার রোগীর কথাই ধরা যাক, তিনি ব্যথার জন্য দিনের পর দিন কষ্ট করে আসছেন। কিছু রোগী বলেন, স্যার ওষুধ খেলে ভালো থাকি, আর বন্ধ করলে ব্যথা আবার আগের মতো চলে আসে। তার মানে রোগীর মেকানিক্যাল সমস্যার কারণে ব্যথা হচ্ছে। এসব রোগী ম্যানুয়াল ও ম্যানিপুলেশন থেরাপি নিয়ে অনেক তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই ফিজিওথেরাপিস্ট ফার্স্ট কনটাক্ট প্র্যাক্টিশনার হিসেবে কাজ করে আসছেন। আমাদের দেশে প্যারালাইসিস রোগীর কথা একবার ভাবেন।
ডা. কাজী এমরান হোসেন
ফিজিওথেরাপি বিষয়টি 'হেলথ' দেখবে নাকি 'রিহ্যাবিলিটেশন' দেখবে? এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার 'রিহ্যাবিলিটেশন ২০৩০' শীর্ষক একটি পলিসি রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশও স্বাক্ষর করেছে। সেখানে ১০টি নীতিমালায় বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে এক জায়গায় বলা আছে, 'হেলথ' এবং 'রিহ্যাবিলিটেশন' একসঙ্গে কাজ করবে। কারণ, একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির চিকিৎসা শুধু মেডিকেল মডেলে করলেই হবে না, বরং 'বায়ো সাইকো সোশ্যাল মডেলে' যেতে হবে। তাঁর শারীরিক সমস্যা যেমন দেখতে হবে, তেমনি মানসিক ও সামাজিক সমস্যাগুলোকেও দেখতে হবে। সেজন্যই আমরা 'রিহ্যাবিলিটেশন ২০৩০'কে গ্রহণ করেছি। আমরা অঙ্গীকার করেছি যে, টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ দেশে রিহ্যাবিলিটেশন ২০৩০-এর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করব। আমার মনে হয়, স্বাস্থ্য এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যদি একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে অবশ্যই আমাদের দেশে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। যদি সেটা হয়, তাহলে 'মাল্টি ডিসিপ্লিনারি ওয়ার্ক ফোর্স' এবং 'পেসেন্টস সেন্টার্ড কেয়ার'- এই বিষয়গুলো আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব।
ডা. শামীম আহাম্মদ
ফিজিওথেরাপি শুধু প্রতিবন্ধিতা চিকিৎসা নিয়েই কাজ করে না, ফিজিওথেরাপি প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিও প্রতিরোধ করে। ফিজিওথেরাপিস্টরা স্বাস্থ্যসেবায় 'প্রিভেন্টিভ', 'কিউরেটিভ' ও 'রিহ্যাবিলিটেটিভ' সব ক্ষেত্রেই কাজ করেন। আমরা জানি, প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা শতকরা ১০ ভাগ, কিন্তু প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা মানুষ অনেক বেশি। একটা ছোট্ট কোমর ব্যথা থেকেও মানুষ প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত হতে পারে। বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল বাস্তবায়নের কথা সবাই বলেছেন, কাউন্সিলের ৭ সদস্যের নির্বাহী পর্ষদের সদস্য হিসেবে বলতে চাই, কাউন্সিল বাস্তবায়নে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। আইন অনুযায়ী এই কাউন্সিল পেশাজীবীদের রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স প্রদান, সেবা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেবে, যাতে করে দেশের মানুষ অপচিকিৎসার হাত থেকে বাঁচতে পারে। তবে এ কাউন্সিলে ১১ সদস্য পেশাজীবীদের সমন্বয় থাকায় 'বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন ২০১৮' অনুয়াযী, ১১ সদস্য পেশাজীবীর ভেতরে যেহেতু ফিজিওথেরাপির চিকিৎসকরা অনেক বেশি অগ্রগামী, তাই ফিজিওথেরাপি পেশাজীবীদের মধ্য থেকে রেজিস্ট্রার নিয়োগ হলে এই কাউন্সিল আরও বেগবান হবে।
আবু সাঈদ খান
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাসেবার একটি শাখা। এই শাখাকে চিকিৎসাবিজ্ঞান থেকে আলাদা করা যাবে না। বরং একসঙ্গেই অগ্রসর করে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের সব শাখার সঙ্গে ফিজিওথেরাপিকে সমন্বয়ের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছে কর্মক্ষম মানুষ। তাদের সব সময় কর্মক্ষম রাখতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই। তবে এই চিকিৎসা ব্যবস্থা যতটা অগ্রগতি থাকার দরকার ছিল ততটা নেই। তবে বেশকিছু প্রসার ঘটেছে। বড় হাসপাতালগুলোতে ফিজিওথেরাপি বিভাগ রয়েছে। এতটুকুতে যথেষ্ট নয়। সারাদেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যাথলজি পরীক্ষার মতো ফিজিওথেরাপি বিভাগ চালু করা প্রয়োজন। এটা সময়ের দাবি বলে আমি মনে করি। নীতিনির্ধারক পর্যায়ে কথা প্রয়োজন। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রসার এখন সময়ের দাবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
প্রধান অতিথি
নুরুজ্জামান আহমেদ
মন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়
বিশেষ অতিথি
ডা. এনামুর রহমান
প্রতিমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়
অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন
উপাচার্য, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ডা. শাহরিয়ার নবী
ডিন, চিকিৎসা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আলোচক
অধ্যাপক ডা. আলতাফ হোসেন সরকার
বীর মুক্তিযোদ্ধা
ডা. মো. ফিরোজ কবীর
সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ডা. মো. শাহাদৎ হোসেন
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)
ডা. সনজিত কুমার চক্রবর্তী
সভাপতি, বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)
ডা. কাজী এমরান হোসেন
প্রভাষক, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাংগঠনিক
সম্পাদক বিপিএ
সঞ্চালনা
ডা. শামীম আহাম্মদ
নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল
প্রতিষ্ঠাতা, ময়মনসিংহ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড হেলথ সায়েন্সেস
সভাপতি
আবু সাঈদ খান
উপদেষ্টা সম্পাদক, সমকাল
অনুলিখন
তবিবুর রহমান
স্টাফ রিপোর্টার, সমকাল
মাজহারুল ইসলাম রবিন
রিপোর্টার, সমকাল
ইভেন্ট সমন্বয়
হাসান জাকির, সমকাল
মন্তব্য করুন