এমনিতেই দেশের নির্বাচন নিয়ে রয়েছে সংকট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহারে সেই সংকট আরও ভয়াবহ আকার নেবে। এই যন্ত্রে ভোট কারসাজির শঙ্কা আছে। ইভিএমের প্রোগ্রামিং প্রভাবিত করে ভোটের ফল পাল্টে দেওয়া সম্ভব। গতকাল শনিবার রাতে ইভিএম নিয়ে এক ওয়েবিনারে আলোচকরা এসব কথা বলেন। ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ নামে একটি সংগঠন 'ইভিএমে সমস্যা কোথায়' শীর্ষক ওই ওয়েবিনারের আয়োজন করে। দুই বছর আগে উত্তরাঞ্চলের একটি ইউনিয়ন পরিষদ ভোটের এক কেন্দ্রের ফলের উদ্ৃব্দতি দিয়ে বলা হয়, ইভিএমেও দিনের ভোট আগের রাতে হওয়া সম্ভব।

ইভিএমকে দুর্বল যন্ত্র আখ্যা দিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ইভিএমের এক ধরনের ডাকাত দেখা গেছে। আরেক ধরনের ডাকাত আছেন, যাঁরা স্যুট-কোট পরা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে থাকেন। তাঁরা সংখ্যায় খুব অল্প। এই অতি অল্পসংখ্যক ব্যক্তি ইভিএমে কারসাজি করতে পারেন। তিনি মনে করেন, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হলে নির্বাচন নিয়ে সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। ইভিএমে কারচুপি সম্ভব, তা কেউ প্রমাণ করতে পারেনি- ইসির এমন বক্তব্যের পাল্টা জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ইভিএমের সোর্স কোড দেওয়া হলে এই যন্ত্রে যে কারচুপি সম্ভব তা প্রমাণ করা যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ইভিএমে ভোট নেওয়া হলে স্বচ্ছতা, শুদ্ধতা ও গোপনীয়তা- এই তিনটি প্রধান বিষয় আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা আছে। তিনি বলেন, ইভিএম নয়, মূল বিষয় হলো নির্বাচনকালীন সরকার। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন ভোডাফোনের (নেদারল্যান্ডস) সিনিয়র সলিউশন আর্কিটেক্ট ফয়েজ আহমদ তৈয়ব। তিনি বলেন, ইভিএমের মূল সমস্যা হলো এই যন্ত্রে কেন্দ্রীয় ফলাফল তৈরি করা হয় ম্যানুয়ালি।

ফয়েজ আহমদ তৈয়ব বলেন, ভোটের দিন স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এজেন্টদের দেখানোর বাধ্যবাধকতা আছে। এটা দেখেই বোঝা যায় বাক্স খালি কিনা। তবে ইভিএমে অডিট কার্ডে (ভোট দেওয়ার পর যেখানে তথ্য সংরক্ষিত থাকে) আগে থেকেই কোনো ফলাফল রেকর্ড করা আছে কিনা, তা যাচাই করার ব্যবস্থা নেই। লাখ লাখ কার্ড ফরেনসিক (এক ধরনের যাচাই) করার মতো সক্ষমতা দলগুলোর নেই।