করোনাকালে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। তবে ইদানীং অনেক জায়গায় অল্প বয়সী ছেলে-মেয়ে সচেতন হয়ে রুখে দিচ্ছে বাল্যবিয়ে। তারা শুধু
নিজের বিয়েই প্রতিহত করেনি, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এমনই প্রতিবাদী কয়েকজনের ফিরে আসার গল্প এখানে
তুলে ধরা হলো। তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। গ্রন্থনা : শাহেরীন আরাফাত

অন্তরা শুধু নিজের বিয়েই প্রতিহত করেনি, এখন সহপাঠীদের মাধ্যমে নিজ গ্রামে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। চালিয়ে যাচ্ছে নিজের লেখাপড়াও। ইতোমধ্যে সে দুটি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছে। অন্তরা জানায়, 'বেসরকারি সংস্থা বাঁচতে শেখার কিশোরী দলের সদস্য হওয়ার পর আমি বাল্যবিয়ে, নারী নির্যাতনসহ নানা বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠি। এ কারণেই নিজের বিয়ে ঠেকানোর মতো সাহস হয়েছে আমার। আমি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চাই। একই সঙ্গে চাই বাল্যবিয়ের কারণে আর কারও জীবন যেন হুমকিতে না পড়ে। এ কারণে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছি।'
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রাম খলিলপুর। সেখানকার চা-বিক্রেতা মনিরুলের মেয়ে অন্তরা মাহমুদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। করোনা মহামারিতে বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমে যায় আয়-রোজগার। সংসারে দেখা দেয় খুব অভাব। স্কুল বন্ধ থাকায় মা-বাবা মেয়ের লেখাপড়া ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে মনিরুল ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কাউকে কিছু না জানিয়ে ভাইয়ের সহযোগিতায় মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলেন। ছেলেপক্ষ পাত্রী দেখতে যেদিন অন্তরাদের বাসায় আসেন, সেদিনই অন্তরা তার মা-বাবাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, 'আমি বিয়ে করব না। আমি লেখাপড়া শিখতে চাই। যদি তোমরা আমাকে জোর করে বিয়ে দাও, তাহলে এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যান ও বেসরকারি সংস্থা বাঁচতে শেখাকে জানাব। না হলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।' অন্তরার বাবা তার কথা না শুনে বিয়ের আয়োজন শুরু করেন।
উপায় না দেখে অন্তরা নারী দলের সভানেত্রী সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রেহেনা পারভীন এবং বাঁচতে শেখার প্রকল্প কর্মী আকলিমা খাতুনকে ফোন করে তার বিয়ে বন্ধের অনুরোধ জানায়। এরপর নারী কাউন্সিলর রেহানা ও আকলিমা অন্তরার বাবাকে বাল্যবিয়ের কুফল ও শাস্তি সম্পর্কে জানিয়ে মেয়ের বিয়ে বন্ধ করার অনুরোধ জানান। তিনি মনিরুলকে আরও বলেন, এরপরও বিয়ে বন্ধ না করলে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাতে বাধ্য হবেন। এরপর মনিরুল মেয়ের বিয়ে বন্ধ এবং তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে রাজি হন।
প্রসঙ্গত, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতায় বাঁচতে শেখা কর্মসূচি ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বাঘারপাড়া উপজেলার বাসুয়াড়ী ইউনিয়নে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। া