করোনাকালে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। তবে ইদানীং অনেক জায়গায় অল্প বয়সী ছেলে-মেয়ে সচেতন হয়ে রুখে দিচ্ছে বাল্যবিয়ে। তারা শুধু নিজের বিয়েই প্রতিহত করেনি, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এমনই প্রতিবাদী কয়েকজনের ফিরে আসার গল্প এখানে তুলে ধরা হলো। তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। গ্রন্থনা : শাহেরীন আরাফাত


রুখে দাঁড়ানো শারমীন
'আমি যখন নবম শ্রেণিতে পড়ি তখন একদিন জানতে পারলাম, আমার বিয়ে নিয়ে মা-বাবা আলোচনা করছেন। বিষয়টি জানার পর আমি ভীষণ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। সারাক্ষণ মনে হতে থাকে, আমার জীবনের লক্ষ্য যেখানে পড়াশোনা করে বড় হয়ে আরও ১০ জনের পাশে দাঁড়ানো- বাল্যবিয়েসহ সব ধরনের সহিংসতার ঘটনায় ঝাঁপিয়ে পড়া, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। সেই আমিই যদি আজ বাল্যবিয়ের শিকার হই, তাহলে আমি আর ১০ জনের পাশে কীভাবে দাঁড়াব?' কথাগুলো দশম শ্রেণির ছাত্রী শারমীনের।

সিরাজগঞ্জ জেলার পাইকপাড়া গ্রামে মা-বাবা ও দুই ভাই এক বোনের সঙ্গে থাকে 'নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ' প্রকল্পের কিশোরী দলের সভানেত্রী শারমীন। সে দলের সভার আলোচনায় অংশ নিয়ে বাল্যবিয়ের কুফল, আইন ও শাস্তি সম্পর্কে জানতে পেরেছে। নিজের বিয়ের কথা শুনে প্রথমে ভেঙে পড়েছিল শারমীন। পড়ে নিজেই ভেবেছে, এভাবে ভেঙে পড়লে হবে না। তাকে রুখে দাঁড়াতে হবে। সে মায়ের সঙ্গে তার জীবনের লক্ষ্য ও স্বপ্ন নিয়ে কথা বলে। নিজেই মাকে বুঝিয়ে বলে- এ বয়সে বিয়ে করলে বাল্যবিয়ের কী কী ক্ষতি হবে এবং বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনের আওতায় মা-বাবা কী শাস্তি পাবে। অবশেষে শারমীনের মা-বাবা মেয়ের কথা মেনে নেন। শারমীন শুধু নিজের বিয়ে বন্ধ করে বসে থাকেনি, এলাকায় তার সমবয়সী কয়েকজন ছেলে-মেয়ের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত নেয়, তারা নিজেরা বাল্যবিয়ের শিকার হবে না এবং এলাকায় কোনো বাল্যবিয়ে হতে দেবে না। এ পর্যন্ত তারা চারটি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছে।