- গোলটেবিল
- মাতৃমৃত্যু রোধে স্বাস্থ্যসেবার আওতা বাড়াতে হবে
মাতৃমৃত্যু রোধে স্বাস্থ্যসেবার আওতা বাড়াতে হবে

দেশে গড়ে প্রতি বছর ৩৩ লাখ মা অন্তঃসত্ত্বা হন। কিন্তু অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত সম্ভব হচ্ছে না। কুসংস্কার, অজ্ঞতা, দারিদ্র্য এবং ভুল চিকিৎসার কারণে প্রতি বছর অনেক অন্তঃসত্ত্বা মা অকালেই মৃত্যুবরণ করছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে মাতৃমৃত্যু হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে গণসচেতনতার বিকল্প নেই। শুধু সাধারণ মানুষ সচেতন হলে চলবে না, নীতিনির্ধারকদেরও সচেতন হতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জন্য সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। মাতৃমৃত্যু হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে পিপিআরসি (পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার) এবং ইউএনএফপিএ'র যৌথ উদ্যোগে গত ১৩ ডিসেম্বর সিলেট সিটি করপোরেশনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত 'প্রায়োরিটাইজিং অ্যান্ড এনশিওরিং সার্ভিসেস ডেলিভারি :আর উই এডুকুয়েটলি অ্যাড্রেসিং লাস্ট মাইল চ্যালেঞ্জ টু এনশিওর জিরো প্রিভেনটেবল ম্যাটারনাল মর্টালিটি?' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ আয়োজনে মিডিয়া সহযোগী সমকাল
আরিফুল হক চৌধুরী
আমরা কাগজপত্রে কাজের অনেক হিসাব-নিকাশ দেখাই কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে তার মিল পাওয়া যায় না। মাঠ পর্যায়ে গেলে ওই হিসাব উল্টে যায়। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে মাঠ পর্যায়ে কাজের তদারকি হয় না, হলেও সেটা দায়সারা। অনেক হাসপাতাল আছে, যারা সিজার করতে ব্যস্ত। অনেক অন্তঃসত্ত্বা নারী ক্লিনিক ও হাসপাতালে যেতেও ভয় পান। বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষাই বেশি। টাকা-পয়সা ও নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভয়ে নারীরা হাসপাতালের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। মাঠ পর্যায়ে সঠিকভাবে কাজ করলে মাতৃমৃত্যু হার কমে আসবে। আমরা সিটি করপোরেশন এলাকায় হসপিটাল ও ল্যাব করতে যাচ্ছি। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কম খরচে গরিব রোগীরা সেবা পাবেন। পাশাপাশি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র করছি। কভিড-১৯ থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। সেই শিক্ষাকে কাজে লাগাতে হবে। তা ছাড়া নগরীতে মাতৃমৃত্যু হার কমাতে পাইলট প্রকল্প গ্রহণ জরুরি।
ড. সানজিদা আখতার
প্রসবের দিন থেকে ৪২ দিন পর্যন্ত মৃত্যুকে আমরা মাতৃমৃত্যু বলি। ওভারওয়েট ও বিভিন্ন কমপ্লেক্সিটির কারণে মাতৃমৃত্যু হয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের সমাজে উচ্চবিত্ত শ্রেণির নারীরা নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে প্রসবকালীন পেইন ভয় পান, অন্যদিকে গরিব ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির নারীরা সিজার ভয় পান। এক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যু হার রোধে সমাজবিজ্ঞান এবং চিকিৎসাশাস্ত্রে অভিজ্ঞদের সমন্বিত প্রয়াস দরকার। এ ছাড়াও মাতৃমৃত্যুর জন্য মায়েদের অপুষ্টি, সিজারের প্রতি ঝোঁক, নিম্ন প্রসবোত্তর সেবা এবং হাসপাতাল ডেলিভারিতে অবাঞ্ছিত খরচ ইত্যাদিও জড়িত। এসব কারণে নতুন প্রজন্মের মায়েদের একটা ভয় আছে। সেই ভয় কমাতে হবে। যে মা সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, তার খেয়াল শুধু মা নিজে রাখলে হবে না, পরিবারকেও তাঁর সঙ্গে থাকতে হবে, তিনি কী চাচ্ছেন সেটি জানতে হবে। মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কেও জানতে হবে। সিলেটে প্রতি লাখে ১৮২ জন মাকে আমরা হারাচ্ছি। দেশের অন্যান্য স্থানের অবস্থা কোথায়ও কম কোথাও বা বেশি। এসব দিক বিবেচনায় আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ৭০-এ নিয়ে আসতে হবে।
মোহাম্মাদ আব্দুল ওয়াজেদ
কোনো মৃত্যুই কাম্য নয়। বিশেষ করে একজন মা যখন মারা যান, তখন তার পরিবারের ক্ষতিটা ভুক্তভোগী ছাড়া বোঝা কঠিন। মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু ও বাল্যবিয়ে আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমরা কাজ করছি। নগর ও গ্রাম এলাকায় এখন মাতৃমৃত্যু হার কমাতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ চলছে। আমরা আমাদের সবার সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে চাই, একদিন সুফল আসবেই।
ডা. দেওয়ান মো. এমদাদ
মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার কমানোর লক্ষ্যেই দেশের ৪২৫ উপজেলায় মিডওয়াইফারি সার্ভিস চালু আছে। বিভিন্ন সেক্টর স্বাস্থ্য বিভাগকে সহযোগিতা করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এর বাইরে আমাদের সমস্যার জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করে কাজ করতে হবে। সমাজে বঞ্চিতদের সেবা দিতে আমরা কাজ করছি। সিলেটের চা বাগান ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইউএনএফপিএ কাজ করছে। সবাইকে উপযুক্ত সেবা দেওয়ার মাধ্যমে আমরা লক্ষ্যে পৌঁছতে চাই। একটা কথা না বললে নয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা চাইলে সব করতে পারেন এবং অনেকে ভালো কাজ করছেন। বড় কথা হচ্ছে, পলিসি মেকার ও রাজনীতিবিদদের কাজে লাগাতে হবে।
ডা. হিমাংশু লাল রায়
বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসে এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মাতৃমৃত্যুর হার ৫০ শতাংশের চেয়ে বেশি কমেছে। শিশুমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রেও উন্নতি হয়েছে। হয়তো আমরা মাতৃমৃত্যু হার শূন্য করতে পারব না। কারণ দেশে প্রতি বছর ৩৩ লাখ নারী অন্তঃসত্ত্বা হন। বিপুলসংখ্যক মাকে সেবা দেওয়ার পরিবেশ আমাদের নেই। ভৌগোলিক ও আর্থসামাজিক বিবেচনায় বাংলাদেশকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে পরিকল্পনা করতে হবে। বিশেষ করে হাওরাঞ্চল নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা করতে হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। একজন মায়ের সেবা দিতে সবার আগে তাঁর জন্য সঠিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এখনও ডেলিভারি কক্ষে মা স্বস্তিবোধ করেন না, এমনকি চিকিৎসকের কাছেও না। বাছাই করে ইউনিয়ন সাব-সেন্টারগুলোয় সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।
ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম
প্রতিষ্ঠানগুলো আদর্শ সেবা দিতে পারছে না। মায়েদের সমস্যা যত দ্রুত চিহ্নিত করা যাবে, তত দ্রুত তাঁদের সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ইনজেকশন, ট্যাবলেটের অপ্রতুলতা, একলামশিয়াসহ বিভিন্ন কারণে মাতৃমৃত্যু হয়। অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে না করালে তাদের সমস্যা লেগেই থাকে এবং এ ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যুও হয়। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবেই। কারণ কোনো মৃত্যুই আমাদের কাম্য নয়। সবার আগে প্রয়োজন ছাড়া সিজার বন্ধ করতে হবে। মাতৃমৃত্যু ঠেকাতে বেশি করে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম করতে হবে। সরঞ্জাম সমস্যাসহ নানা কারণে নামে-বেনামে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলো আদর্শ সেবা দিতে পারে না। এ ক্ষেত্রে সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
ডা. জাহিদুল ইসলাম
স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, আমাদের যেমন সীমাবদ্ধতা আছে, তেমনি সেবাগ্রহীতাদেরও নানা অজুহাত রয়েছে। অনেক মা সময় মতো সেবা নেন না। কী কারণে মায়েরা সেবা নেন না কিংবা হাসপাতালে যান না- কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। আমরা প্রায় বলি সচেতনতার কথা। কিন্তু সামর্থ্যের বিষয়টিও খেয়াল করতে হবে। একজন মা বা রোগীর সামর্থ্যের বিষয়টি খেয়াল রাখা জরুরি। দেশে এখনও অনেক অপ্রয়োজনীয় ডেলিভারি হয়। সিলেটের অনেক এনজিও এবং মেডিকেল রয়েছে, যেখানে ফ্রি ডেলিভারি দেওয়া হয় না। সব জায়গায় শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। এই ফাঁকি বন্ধ করতে হবে।
ডা. শামসুন্নাহার হেনা
আমরা দেখেছি, প্রতিটি ভালো কাজ সিলেট থেকে শুরু হয়। মেডিকেল সায়েন্সের বিভিন্ন বড় পাইলট প্রকল্প আমাদের সিলেট থেকে শুরু হয়েছে। আমরা আশা করি, থ্রি জিরোর কাজটাও আমরা ভালোভাবে সিলেট থেকে শুরু করতে পারব। মাতৃমৃত্যু হার আগের থেকে অনেকটা কমেছে। এক সময় একজন মা ৮-৯টি সন্তান নিতেন। এখন সর্বোচ্চ ৪টি নেন। অনেক জায়গায় দুটি দেখতে পাই। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সবাই সচেতন হলে অবশ্যই মাতৃমৃত্যুর হার শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে পারব। এ জন্য সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
ডা. নাসিম আহমেদ
যদিও এটা আমাদের লক্ষ্য কিন্তু মাতৃমৃত্যু শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসাটা খুবই কঠিন। এ বিষয়ে দেশের ৪০ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রমকে আরও জোরদার করতে হবে। কারণ দক্ষ জনবলের অভাবে এখনও সরকারি-বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। জনবল বাড়াতে পারলে সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। নানা কারণে আমাদের দেশে মাতৃমৃত্যু হয়। এ হার কমাতে হলে সবার আগে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।
ডা. মৃগেন কুমার দাশ চৌধুরী
আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি কিন্তু দেশে এখনও স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব রয়েছে। বিশেষ করে মেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানার অভাব রয়েছে। স্কুল পর্যায় থেকে তাদের সচেতন করতে হবে। প্রজনন বিষয়ে পাঠ্যপুস্তকে বেশি করে অন্তর্ভুক্তি থাকতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা মা ও তাঁর পরিবারকে সংশ্নিষ্ট বিষয়ে সচেতন করতে হবে। নিরাপদ ডেলিভারি করতে যা প্রয়োজন উদ্যোগ নিতে হবে এখন থেকেই।
আল আজাদ
আমাদের এখনও গণসচেতনতার অভাব রয়েছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে এ নিয়ে কাজ করা হলেও অভাবটা পূরণ হচ্ছে না। আমরা যাদের সবার আগে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি তাদের করছি না অর্থাৎ রাজনীতিবিদদের। তাঁদের সচেতনতাবিষয়ক কর্মসূচিতে নিয়ে আসতে হবে। কারণ তাঁরা রাজনীতি করেন মানুষের জন্য। সমাজে কিছু কুসংস্কার রয়েছে, যা নিরাপদ সন্তান প্রসবে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অন্তঃসত্ত্বা নারীরা চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে অনেক সময় ভিন্ন পথে সেবা বা পরামর্শ নেন। সেখান থেকে তাদের বের করে নিয়ে আসতে হবে। এটা আমাদের সবাইকে মিলে করতে হবে।
ইকবাল সিদ্দিকী
চা বাগান এলাকার নারীসহ বসবাসকারীরা জীবনমানে পিছিয়ে আছেন। তাঁরা ইচ্ছা করলেই সেবা পান না। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় এখনও নেতিবাচক চিত্র দেখা যায়। সে জায়গায় আমাদের প্রত্যেককে নজর দিতে হবে। গণমাধ্যমকর্মীদেরও এ ক্ষেত্রে দায় রয়েছে। তাঁরা সহায়তা করতে পারেন নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে।
ফারুক মাহমুদ চৌধুরী
আমাদের সমাজে নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি। তাদের মধ্যে সবার আগে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বাগান এলাকায় নজর দিতে হবে। সমাজের মানুষকে শুধু সচেতন করলে হবে না, যারা এর বাইরে তাদের দিকে দৃষ্টিপাত দেওয়া দরকার। আমরা যেমন সমাজ চাই, তেমন সমাজই গড়তে হবে। একদিন আমাদের স্বপ্ন পূরণ হবেই।
আবু তালেব মুরাদ
গণমাধ্যমকর্মীরা মা ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাঁরা করেও আসছেন। হয়তো যা চাহিদা ছিল তার চেয়ে কম। গণমাধ্যম একটি জায়গা থেকে কাজ করে। তারা সচেতনতা বাড়ায়, অসংগতি তুলে ধরে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিষয়ে কাজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রশাসন বা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে।
ডা. নাহিদ পারভীন
স্বাস্থ্য নিয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের আগে রোগীর ধরন বুঝতে হবে। সব রোগী তথা উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের উপজেলা পর্যায়ে রাখা যাবে না। সুযোগ-সুবিধা আছে এমন হাসপাতালে রেফার করতে হবে। অনেকে চান স্থানীয়ভাবে ডেলিভারি করতে। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি থেকে যায়। সবার আগে রোগীর ধরন বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। উপজেলা পর্যায়ের সেবা শক্তিশালী করলে মায়েদের সেবা আরও নিশ্চিত হবে।
ডা. ফাহমিনা আক্তার
উচ্চ ও মধ্যবিত্ত লোকেরা এখনও বুঝেন না তাঁরা কীভাবে কোথায় অন্তঃসত্ত্বা নারীকে নিয়ে যাবেন। সবার চিন্তা ডাক্তারের কাছে গেলেই সিজার করবেন। সিজারের একটা ভয় কাজ করে তাঁদের মধ্যে। আবার দেখা গেছে উচ্চবিত্ত পরিবারের লোক ইচ্ছা করে সিজার করেন। অনাহূত সিজার থামাতে হবে। যত্রতত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্র করার পারমিশন দিলে চলবে না। এতে করে জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং যাদের অভিজ্ঞতা নেই তারাও সিজার করে।
শাহিনা আক্তার
স্বাস্থ্য নিয়ে যারা কথা বলেন, গবেষণা করেন তাঁদের কাছেও সঠিক তথ্য অনেক সময় মিলে না। তথ্য প্রাপ্তি ও সঠিক তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। মাতৃমৃত্যু হার কমাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। বাল্যবিয়ে রোধ করতে পারলে মাতৃমৃত্যুও কমবে। এখন বাল্যবিয়ে অনেকটা কমে এসেছে। সিলেটের সব উপজেলা বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের সোচ্চার হয়ে কাজ করতে হবে।
সাইদুর রহমান ভুইয়া
সচেতনতা বাড়ানোর কাজটা আমাদেরই করতে হবে। সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। বেসরকারিভাবেও নেওয়া হয়। সবার আগে আমরা কী চাই সে লক্ষ্য ঠিক রেখে কাজ করতে হবে। অনেক নারী এখনও প্রস্তুত নন যে তাঁরা ডেলিভারির সময় কী করবেন। এখানে তাঁদের সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি দূর করতে হবে আমাদের।
অনিক আহমদ অপু
আমাদের স্কুল ইন ওয়াশ প্রোগ্রাম রয়েছে। স্কুল পর্যায় থেকে আমরা কাজ করছি। তাদের সচেতন করতে পারলে ভবিষ্যতের জন্য ভালো ফল নিয়ে আসবে। সিলেটে আমাদের ৮৬৬ জন মাঠকর্মী রয়েছেন। তাঁরা স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। দুটি মেটারনিটি সেন্টারও রয়েছে। বছরে ৮ হাজার ৫০০ মাকে আমরা সেবা দিচ্ছি। বিভিন্ন পেশার লোকদেরও অন্তর্ভুক্তি করতে পারলে গণসচেতনতা বাড়বে এবং মাতৃমৃত্যুর হারও কমবে।
মোহন লাল দাশ
স্বাস্থ্য বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সার্ভিস দিয়ে আসছি। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি গ্রামাঞ্চলে এখনও নারীরা অদক্ষ দাই দিয়ে ডেলিভারি করান। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অপ্রত্যাশিত গর্ভপাত কমিয়ে মাতৃমৃত্যু রোধে গ্রামের মানুষের মধ্যে বেশি সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
ডা. এস এস এম হিজবুল্লাহ
আমরা কাজ করতে গিয়ে যে বিষয়টি লক্ষ্য করেছি, প্রতিটি উপজেলায় স্বাস্থ্য প্রচারণা বাড়াতে হবে। সবাই স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত এবং মাতৃমৃত্যু কমানোর লক্ষ্যে একযোগে কাজ করে চলেছে। সরকারের পাশাপাশি দেশের অনেক এনজিও এ নিয়ে কাজ করছে। আমাদের ঘাটতি কোথায়, তা চিহ্নিত করে দূর করা প্রয়োজন।
হাসান জাকির
কোনো মৃত্যুই কাঙ্ক্ষিত নয়। প্রতি লাখে এখনও দেড় শতাধিক অন্তঃসত্ত্বা মা মারা যান। সচেতনতার অভাব, দারিদ্র্য এবং সন্তান প্রসবকালীন অপ্রয়োজনীয় সিজারের কারণে মায়েদের মৃত্যু হয়; অনেক মা গর্ভধারণের আগে এবং পরে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকেন। মাতৃমৃত্যু রোধের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে, পাশাপাশি অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের যেন সঠিক পুষ্টি ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায় সেটিও দেখতে হবে।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান
মাতৃমৃত্যু হার রোধে ডাক্তার, সামাজিক কর্মী, এনজিও, গণমাধ্যমকর্মীসহ সবার অংশগ্রহণ জরুরি। সে জন্য সবার আগে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সমাজে অনেক প্রচলিত ধারণা আছে, শিক্ষিত জনগণকে সেখানে কাজে লাগাতে হবে। আমরা অনেক সময় দায়সারা কাজ করি কিন্তু টেকসই উন্নয়ন অর্জনের ক্ষেত্রে আর দায়সারা কাজ করলে হবে না। মাঠ পর্যায়ে কোথায় কাজের অসংগতি আছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। যদিও আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে আমরা একটি অ্যাকটিভ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চাই। কারণ, আমাদের লক্ষ্য মাতৃমৃত্যু হার কমিয়ে নিয়ে আসা। সবার অভিজ্ঞতা ও পরামর্শের আলোকেই আমাদের পথচলা। সিলেটকে উদাহরণ হিসেবে এখান থেকে থ্রি জিরোর বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে হবে। সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে হেলথ ফ্যাসিলিটিজ বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের নানা অসংগতির কথা চিন্তা করে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি আরও জোরদার করতে হলেও বড় ধরনের চিন্তাভাবনা দরকার। অন্যদিকে শুধু সাধারণ মানুষ সচেতন হলে চলবে না, নীতিনির্ধারকদেরও সচেতন হতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জন্য সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি মাতৃমৃত্যু হার কমিয়ে আনতে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ।
মূল বক্তা
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান
চেয়ারম্যান, পিপিআরসি
কি-নোট উপস্থাপন
ড. সানজিদা আখতার
অধ্যাপক, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আলোচক
আরিফুল হক চৌধুরী
মেয়র, সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)
মোহাম্মাদ আব্দুল ওয়াজেদ
সিনিয়র ফেলো, পিপিআরসি
ডা. দেওয়ান মো. এমদাদ
হেলথ সিস্টেমস স্পেশালিস্ট, ইউএনএফপিএ
ডা. হিমাংশু লাল রায়
সদ্য সাবেক পরিচালক, স্বাস্থ্য বিভাগ, সিলেট
ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম
অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব পপুলেশন সায়েন্সেস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ডা. জাহিদুল ইসলাম
প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সিসিক
ডা. শামসুন্নাহার হেনা
অধ্যাপক, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
ডা. নাসিম আহমেদ
সভাপতি, বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল সমিতি, সিলেট
ডা. মৃগেন কুমার দাশ চৌধুরী
অধ্যাপক, সার্জারি বিভাগ, উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
আল আজাদ
সভাপতি, সিলেট জেলা প্রেস ক্লাব
ইকবাল সিদ্দিকী
সভাপতি, সিলেট প্রেস ক্লাব
ফারুক মাহমুদ চৌধুরী
সভাপতি, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন
আবু তালেব মুরাদ
সম্পাদক, দৈনিক পুণ্যভূমি
ডা. নাহিদ পারভীন
সহকারী অধ্যাপক, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
ডা. ফাহমিনা আক্তার
আরএস, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
শাহিনা আক্তার
উপপরিচালক, মহিলা অধিদপ্তর, সিলেট
সাইদুর রহমান ভুইয়া
শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা, সিলেট
অনিক আহমদ অপু
সিলেট জেলা সমন্বয়ক, ব্র্যাক
মোহন লাল দাশ
প্রোগ্রাম অফিসার, মেরী স্টোপস্ ক্লিনিক, সিলেট
ডা. এস এস এম হিজবুল্লাহ
সিনিয়র ম্যানেজার, সেভ দ্য চিলড্রেন
হাসান জাকির
সহকারী সম্পাদক, সমকাল
অনুলিখন
মুকিত রহমানী
সিলেট ব্যুরো ইনচার্জ, সমকাল
মন্তব্য করুন