দেশকে উন্নতির উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা এবং গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। আজ মঙ্গলবার মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘মাতৃভাষা উন্নয়ন ও অগ্রগতির শেকড়ে শক্তি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে বিশিষ্টজনরা এ মন্তব্য করেন।

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাছিম আখতারের সভাপতিত্বে আয়োজিত ওই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর-এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান চৌধুরী।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ড. মো. নাছিম আখতার তার বক্তব্যে বলেন, ৫২’র এই দিনে বাঙালি তার বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়ে বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করে। বিশ্বের অনেক দেশে মাতৃভাষার স্বীকৃতি নিয়ে লড়াই হলেও জীবন দেওয়ার মতো ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে।

তিনি বলেন, মাতৃভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি মিললেও এই ভাষার ব্যবহার এখনও সর্বত্র দেখা যাচ্ছে না। তবে দেশকে উন্নতির উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে হলে মাতৃভাষায় গবেষণা ও বিজ্ঞান চর্চা করতে হবে।

ভারত ও চীনের মধ্যকার পার্থক্য উল্লেখ করে অধ্যাপক নাছিম বলেন, ভারতের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন ভাষার প্রচলন রয়েছে। তবে চীন একমাত্র মান্দরিন ভাষায় গবেষণা ও বিজ্ঞান চর্চা করে। এ জন্য চীনের অগ্রগতি ভারতের তুলনায় অনেক বেশি। এজন্য আমাদের দেশকেও উন্নতির উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে হলে বাংলা ভাষাতেই বিজ্ঞান ও গবেষণা চর্চা করতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর-এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন বলেন, ২১শে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে রাষ্ট্রচিন্তার উদয় হয়েছিল, যার ফলশ্রুতিতে এই দেশ স্বাধীন হয়। ভাষা আন্দোলনের সময় কারাগারে অবস্থান করেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মাতৃভাষাকে কতটা গুরুত্ব প্রদান করতেন তা বোঝা যায় জাতিসংঘে তার বাংলায় বক্তৃতা প্রদানের ঘটনায়। পরবর্তীতে তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে বাংলায় বক্তব্য দিয়েছেন।

জাপানের কোবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী এই অধ্যাপক তার জাপানের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, জাপানে অধ্যয়নরত অবস্থায় আমার সহপাঠীরাও সর্বদা মার্তৃভাষায় গবেষণা চর্চার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতেন। জাপানের গবেষকরা মাতৃভাষায় গবেষণা করার বিষয়ে জোর দিতেন। আমাদেরকেও মাতৃভাষায় গবেষণা করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান ৪৭ জেলায় ৪৭টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমান সরকারও দেশের প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। আমি মনে করি, সরকারের এমন মহৎ উদ্যোগে দেশ আরও উন্নত ও সমৃদ্ধশালী হবে। তবে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধির চরম শিখরে নিয়ে যেতে বাংলা ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বিশ্বের উন্নত বিভিন্ন দেশের ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। কিন্তু আমরা এখনও দেশের সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারিনি। উন্নতি ও অগ্রগতিতে বিজ্ঞানের যে ভূমিকা, তার পুরোটা অর্জনে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান ও গবেষণা চর্চা করতে হবে।

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার মো. মেহেদী হাসান ওয়েবিনারটির সঞ্চালনা করেন।