রাজধানী ঢাকার বাতাস এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। এতে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় বায়ুদূষণ প্রতিরোধে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি তরুণদের সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজন। গত ২৮ মার্চ রাজধানীর তেজগাঁওস্থ সমকাল সভাকক্ষে আয়োজিত এক প্যানেল আলোচনায় বক্তারা এ আহ্বান জানান। যৌথভাবে দৈনিক সমকাল ও ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ‘বায়ুদূষণের প্রভাব : আমরা কী করতে পারি’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে


 হাবিবুন নাহার, এমপি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাড়ে ৩ বছর সরকার পরিচালনা করার সময় পেয়েছিলেন। সেই স্বল্প সময়েই তিনি   পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে গেছেন। এর জন্য যা যা করার দরকার, নির্দেশনা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসেছে।   বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তাঁর পিতার পথ ধরেই চলার চেষ্টা করছেন। স্বপ্নগুলো পূরণের চেষ্টা করছেন। উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ   হাসিনা যেসব বিষয়ে সবচেয়ে প্রাধান্য দিয়েছেন, তার মধ্যে পরিবেশ অন্যতম। তিনি জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মান ‘চ্যাম্পিয়ন্স   অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণের স্বীকৃতি     হিসেবে তাঁকে এ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। পানির অপর নাম জীবন। পানি কিছুক্ষণ না খেয়েও বাঁচা যায়। তবে বায়ু ছাড়া সেটি সম্ভব নয়। চারপাশে যেভাবে বায়ুদূষণ হচ্ছে; এর ক্ষতিকর প্রভাব সবার মধ্যেই পড়ছে। উন্নত দেশগুলোর কাতারে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। বায়ুদূষণ প্রতিরোধে আমাদের সবার এগিয়ে আসতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য অবশ্যই খোঁড়াখুঁড়ি লাগবে। এক দিন তো এই উন্নয়নকাজ শেষও হবে। তবে বেশ কিছু শর্তে উন্নয়নকাজ যারা নিচ্ছে, তারা কিন্তু সেই শর্ত পালন করছে না। খোঁড়াখুঁড়ির সময় পানি ছিটানোর কথা। সেটা তারা করছে না। উন্নয়নকাজ করতে হলে ‘প্রোটেক্ট’ দেওয়ার কথা। সেটা করছে না বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। এসব বিষয়ে সবার সচেতন হতে হবে।

  আবু সাঈদ খান আমাদের মাটি এবং জল– এতে বিষ মিশে আছে। এখন বায়ু আক্রান্ত। যানবাহন থেকে কলকারখানা; বিভিন্ন বর্জ্য থেকে     ভাগাড়– সবখান থেকেই বায়ুতে বিষ মিশছে, যেটা আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। এ ব্যাপারটি নিয়ে অনেকেই সচেতন, কাজ করছে। আমরা   শিল্পে পিছিয়ে পড়া দেশ। অথচ দূষণ প্রক্রিয়ায় আমরা প্রথম কাতারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশ্বরেকর্ড করছি। এটা আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে   দুর্ভাগ্যজনক এবং কষ্টকরও বটে। এখান থেকে কীভাবে উত্তরণ হবে, এটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমার মনে হয়, এটা জাতির সামনে একটা বড়     চ্যালেঞ্জ। আমরা পারি না, এমন তো না। আমরা তো আজ থেকে ৫২ বছর আগে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছি। আমরা পেরেছি। আমার মনে হয়,   এই চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবিলা করতে পারি। এ জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস। সরকার তৎপর। প্রত্যাশা যদিও আমাদের অনেক বেশি। আমরা কীভাবে পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে পারি; জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করতে পারি; এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও, সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগ ও চেষ্টা প্রয়োজন। কেননা, সুস্থতা মানবাধিকার। জনসম্পদ যাতে রোগাক্রান্ত না হয়, ভঙ্গুর না হয়, এটা নিশ্চিত করা দরকার।

 ড. আইনুন নিশাত আজ যারা শিশু-কিশোর, তারাই তো আমাদের ভবিষ্যতের মূল শক্তি। বায়ুদূষণ প্রতিরোধে তরুণদের ভূমিকা পালন করতে   হবে। এ ক্ষেত্রে তরুণদের সঠিক তথ্য জানতে হবে। কারণ ‘নলেজ ইজ পাওয়ার’। বৈশ্বিক আরেকটা কথা আছে, জেন্ডার ডাইমেনশন কনসিডার   করতে হবে। বায়ুদূষণের উৎস ও কারণ জানলে সমাধান বের করা যাবে। আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটা টালমাটাল হয়ে গিয়েছিল।   শ্রীলঙ্কার অবস্থা আরও খারাপ। পাকিস্তানের অবস্থা তার থেকেও খারাপ। ভারতের অবস্থা যে খুব ভালো, তা না। আমরা আইএমএফের কাছে ঋণ   চেয়েছি। তারা বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়েছে। আমরাই এ ঋণ প্রথম পেয়েছি। এই ফান্ড ক্রিয়েট হয়েছে   রেজিলিয়েন্সের জন্য। অর্থাৎ দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা কতটা তৎপর। বাংলাদেশের পরে দিয়েছে রুয়ান্ডাকে। রুয়ান্ডা একটা অদ্ভুত দেশ; সেখানে দুইটা উপজাতি– হুতু আর তুতসি। যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ তারা সংখ্যালঘিষ্ঠদের ৭০-৮০ শতাংশ লোক মেরে ফেলেছিল। এ রকম একটা মারাত্মক দেশ রুয়ান্ডা। অথচ এখন পরিবেশের দিক থেকে বোধ করি সবচেয়ে ভালো দেশ। সেই দেশে প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্র বা পলিথিন ব্যবহার করা যায় না। ধরা পড়লে শাস্তি নিশ্চিত। বাংলাদেশে বায়ুদূষণ প্রতিরোধে অনেক আইন আছে, রুলস আছে, রেগুলেশন আছে। পৃথিবীর কাছে এখন লজ্জা পাওয়ার সময় এসে গেছে। আইনের সূত্র হচ্ছে সংবিধান। সংবিধানের ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে– ‘রাইট টু লাইভ’। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র আমার জীবনকে সুরক্ষিত করবে। অথচ বায়ুদূষণ, পানিদূষণ ও পরিবেশদূষণের প্রভাবে মানুষ ধীরে ধীরে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে ‘স্লো কিলার’। রাষ্ট্রের দায়িত্ব এই ‘স্লো কিলার’গুলোকে ঠেকানো। চট্টগ্রামের জাহাজ ভাঙাশিল্প বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। তার পরই সিলেট, যেখানে পাথর ভাঙা হয়, চারপাশে ধুলা জমে থাকে। গ্রামবাংলায় বর্ষাকালে রান্নাঘরও বায়ুদূষণের আরেকটা উৎস। এ রকম উৎস চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া সংবিধান থেকে আমরা শক্তি পেলাম। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫; নির্মল বায়ু আইন ২০১৯ আছে। পরবর্তী সময়ে আইন অনুযায়ী রুলস-রেগুলেশন করা হয়েছে। এসব আইন আমাদের প্রধান অস্ত্র। প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করা, এনভায়রনমেন্টাল মান উন্নত করা, খারাপ হয়ে গেলে কন্ট্রোল। নির্মল বায়ু আইনে মহাপরিচালক সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। পৃথিবীর অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে, যে দেশে ‘এনভায়রনমেন্টাল কোর্ট’ পরিচালনা করতে পারবে। এসব ক্ষেত্রে ‘স্ট্যান্ডার্ড’ আর ‘মনিটরিং’ হচ্ছে কিনা, দেখতে হবে। একই সঙ্গে মনিটরিংয়ের ফলাফল জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। জনমত গঠন করতে হবে। আরিচার দিকে বিদেশি মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে একটি জুতার কারখানা। যদিও অন্য কোম্পানির চেয়ে এ কোম্পানির জুতার দাম বেশি। তবুও আমি এই কোম্পানির জুতা ব্যবহার করি। কারণ এ কারখানা সব ধরনের আইন মেনে চলে। এখানে বায়ু, শব্দ ও পরিবেশগত কোনো দূষণ নেই। এ ক্ষেত্রে যে খরচ, তাও কিন্তু মালিক নিজের পকেট থেকে দিচ্ছে না। নিচ্ছে ক্রেতাদের কাছ থেকেই। কোম্পানির মালিক কানাডার। সে কানাডার রুলসে এটি পরিচালনা করছে। একটা বিদেশি মালিকানায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠান যদি আইন মেনে চলতে পারে, তাহলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কেন মানবে না? এ ক্ষেত্রে তরুণদের জনমত গড়ে তুলতে হবে। যদি কেউ পরিবেশের দূষণ করে থাকে, তাহলে তার পণ্য বর্জন করাই হবে আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ।

 অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান উন্নয়নের বাইপ্রোডাক্ট কিন্তু বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণের ফলে শুধু ফুসফুসজনিত রোগ হয়, তা কিন্তু নয়।   এ কারণে মানসিক বিকাশ থেকে শুরু করে মানবদেহের বহুমাত্রিক রোগ ও সমস্যার সৃষ্টি হয়। বায়ুদূষণ শুধু স্বাস্থ্য সমস্যা নয়, আর্থিক সমস্যারও   কারণ। যেসব কণা বা উপাদান বায়ুদূষণের কারণ, সেগুলোর মধ্যে কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড, মিথেন, সিসা, লবণ কণা,   অ্যামোনিয়াম, ক্লোরিন, ক্ষুদ্র ধূলিদূষণ উল্লেখযোগ্য। বায়ুদূষণের কারণে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব মায়ের পেট থেকেই শুরু হয়। ধারণা করা হয়,   বায়ুদূষিত এলাকায় বসবাসের কারণে গর্ভপাত/জন্মগত ত্রুটি, শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। ঢাকার বায়ুতে যেসব ক্ষতিকর   পদার্থ আছে, তার মধ্যে অন্যতম অতিরিক্ত সিসা। এটি শিশুর মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে। ঢাকা শিশু হাসপাতালে শিশুদের রক্ত পরীক্ষায় ৮০ থেকে ১৮০ সিসা পাওয়া গেছে, যা গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে ৭ থেকে ১৬ গুণ। আর ঢাকা শহরে পরিবহন খাতে কর্মরত ব্যক্তিদের রক্তে প্রায় ২০০ সিসার উপস্থিতি বিদ্যমান। ক্রমবর্ধমান সিসাদূষণে মানবদেহের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হয়। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান লরেন্স বার্কলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণের ফলে সর্দি-কাশি শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য রোগ এমনকি ফুসফুসের ক্যান্সারও হতে পারে। দূষিত কণাগুলো রক্তবাহিত হয়ে হৃদরোগের অসুখ বাড়িয়ে দিতে পরে। বায়ুদূষণের কারণে চোখের নানাবিধ রোগ হতে পারে। বায়ুতে সিসাসহ অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতির কারণে কিডনি ও লিভারের কর্মক্ষমতা কমে যায়। ধারণা করা হয়, বায়ুদূষণের কারণে ভয়াবহ প্রভাব বাড়ছে প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর। গবেষকদের মতে, বায়ুদূষণের ফলে পুরুষের শুক্রাণু তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটছে; শুক্রাণুর মান কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে মেয়েদের ডিম্বাণু কল্পনাতীতভাবে কমে যাচ্ছে। ফলে সঠিকভাবে ভ্রূণ তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটছে এবং গর্ভপাতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ুদূষণের কারণে গড় আয়ু কমে যাচ্ছে। শিকাগোর ইউনিভার্সিটি এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত সর্বশেষ ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স’-এ বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় ৫ বছর ৪ মাস। ঢাকায় কমেছে ৭ বছর ৭ মাস। বায়ুদূষণের কারণে নানাবিধ স্নায়বিক রোগ ও মন-মেজাজে পরিবর্তন ঘটে থাকে। বায়ুদূষণের ফলে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই করোনাকালে বায়ুদূষিত এলাকায় মৃত্যুর হার বেশি ছিল। বাতাসের মাধ্যমে অণুজীব বা ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে অ্যালার্জি সংক্রমণ, প্রেশার, চোখের রোগ বৃদ্ধি পায়। আমরা কীভাবে বায়ুদূষণের রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারি? ফিটনেসবিহীন ক্ষতিকর ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে পারি। বিভিন্ন কাজে গণপরিবহন ব্যবহার করতে হয়। ট্রাফিক কম হলে দূষণ কমবে। সিও, এনও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা বন্ধ করতে হবে। ইটভাটা আইন সম্পূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। ইটভাটা-কলকারখানায় চুল্লি নির্গত জল ও চিমনি থেকে নির্গত বস্তুকণা পৃথক করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। পরিবেশবান্ধব কলকারখানা স্থাপন করতে হবে। সম্পূর্ণ আচ্ছাদিত অবস্থায় সব ধরনের নির্মাণকাজ করতে হবে। বিশুদ্ধ জ্বালানি ব্যবহার যেমন সৌরশক্তি, বায়োগ্যাস ইত্যাদির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। জ্বালানি, বিদ্যুৎ সাশ্রয়, বনায়ন ও সামাজিক বনায়ন করতে হবে। বৃক্ষ কর্তন না করে তা রোপণ করতে হবে। রোগীদের জন্য পরামর্শ হলো– সবাইকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। শিশু, বয়স্ক ও শ্বাসকষ্ট রোগীদের বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়া উচিত নয়। ঘর থেকে বের হতে হলে মাস্ক পরিধান করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কর্মরত ও বসবাসরতদের শ্বাসতন্ত্রের রোগের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সামাজিক আন্দোলন, সচেতনতা, সতর্কতা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আইনের প্রতি সবার শ্রদ্ধা ও সমন্বিত আন্দোলনে বায়ুদূষণ রোধ সম্ভব হবে। এতে পরিবেশ ও সমাজ রক্ষা পাবে। রক্ষা পাবে জাতি।

  অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার লেড বা সিসা বিষাক্ত পদার্থ। সিসার বিষক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের শিশুরা। সিসা এসিড ব্যাটারি   ও বায়ুদূষণের মাধ্যমে শিশু আক্রান্ত হচ্ছে। লেড পয়জনিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা কোন অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছি? দেখা যাচ্ছে, আমাদের রক্তে লেড   বা সিসার যে মাত্রা, সেটা প্রতি ডেসিলিটারে ৫ মাইক্রোগ্রাম। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৫৫ লাখ শিশু সিসার এই বিপজ্জনক মাত্রার মধ্যে রয়েছে।   এটা কিন্তু এমন না যে, গরিবের রোগ। এটা এমন না যে, প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষের রোগ। সবাই আক্রান্ত হচ্ছে কমবেশি। এটা বাতাসে ছড়াচ্ছে।   ধনীর সন্তানরাও বাদ যাচ্ছে না। কারণ, শিশুরা সিসামিশ্রিত জিনিস ধরে এবং সরাসরি মুখে হাত দেয়। গুঁড়া হলুদে সিসা দেয় রং উজ্জ্বল করার     জন্য। বিভিন্ন খাবারেও কৃত্রিম রং ব্যবহার করে। এই রং সরাসরি শরীরে ঢুকে যাচ্ছে। বাংলাদেশে সিসার একটি বড় উৎস হচ্ছে লেড এসিড ব্যাটারি। শিল্পক্ষেত্রেও এসিড ব্যাটারির রিসাইকেল হচ্ছে। এসব ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেলে সেগুলো ফেলে দেওয়া হয় যত্রতত্র। সেই সিসা মিশে যায় বাতাসে, মাটিতে ও প্রকৃতিতে। ‘লেড পয়জনিং’-এর কারণে শিশুরা রক্তশূন্যতায় ভোগে। রক্তশূন্যতার সঙ্গে হৃদরোগের একটা সম্পর্ক রয়েছে। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হলো, মায়ের মাধ্যমে গর্ভের শিশুও আক্রান্ত হচ্ছে। সে কারণে নবজাতক জন্মগতভাবেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয় উল্লেখযোগ্য হারে। সিসা ধাতুটি শিশু, বড় মানুষ সবার ক্ষতি করে। বিশেষ করে এটা ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। শরীরে জমা সিসা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। স্নায়বিক ও দেহগত বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। পাইলস, ফিস্টুলা, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, লিভার বা কিডনির রোগ বাড়ায়। লক্ষ্য করলে দেখব, বেশ কয়েক বছর থেকেই অসুস্থ, অপরিণত, প্রতিবন্ধী বা অটিস্টিক বাচ্চা জন্ম নেওয়ার হার বাড়ছে। সিসায় আক্রান্তের ফলে মানুষের আয়ুষ্কালও কমে যাচ্ছে। সিসার সঙ্গে অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব অনেক। এটাও বাতাসে ছড়ায়। লেড এবং অ্যালুমিনিয়ামে রক্তের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সর্বত্র লেড ক্ষতি করছে। আমাদের অনাগত শিশুরা এই বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছে। ইউনিসেফসহ বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন সংস্থা গবেষণা করেছে। সরকারের সহযোগিতা পেলে আমরা ‘লেড পয়জনিং’ নিয়ে কাজ করব। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সিসার ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে। ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। সিসার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রক্তে সিসার মাত্রা দেখার জন্য সব ল্যাবরেটরিকে সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।

  অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বায়ুদূষণ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। ডব্লিউএইচও বলছে, পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ দূষিত   বায়ু সেবন করছে। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ২০২১ সালে দেশব্যাপী একটি জরিপ পরিচালনা করেছিল। দেশের ৬৪ জেলার   মধ্যে মাত্র ১০টি জেলায় বায়ুর মান স্ট্যান্ডার্ড। এই ১০টি জেলা হচ্ছে উপকূলীয় এবং উত্তরবঙ্গের কিছু জেলা। তবে ৩৭টি জেলার বায়ুর মান     আমাদের জাতীয় মান মাত্রার চেয়ে বেশি এবং ১৭টি জেলার বায়ুর মান মোটামুটি চিন্তার বিষয়। অর্থাৎ মান মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। এখানে   ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কক্সবাজার– এই জেলাগুলোর অবস্থা তুলনামূলক খারাপ। এগুলোর ইন্টারভেনশন নিতে হবে। বায়ুদূষণ বাংলাদেশে   এমন একটি পর্যায়ে গেছে; এটি আছে, কি নেই– বোঝার জন্য খুব বেশি গবেষণা করার দরকার নাই। রাস্তায় বের হলেই দেখা যায়। বায়ুদূষণের প্রধান কারণ উন্নয়ন ও নির্মাণকাজ। পরিবেশ অধিদপ্তর ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে এক আদি ইন্টারভেনশন করার পর সেগুলো থেকে দূষণ কমে এসেছে। কিন্তু নির্মাণকাজ এবং রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি থেকে বায়ুদূষণ বেড়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশি কাজ করার কারণে ঢাকাতে এই মুহূর্তে ১৫০টি রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। ৩০ শতাংশ বায়ুদূষণ রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি থেকে হয়ে থাকে। ইটভাটা থেকে ২৯ শতাংশ বায়ুদূষণ হয়ে থাকে। ১০-১২ বছর আগে ৭৮ শতাংশ বায়ুদূষণ ইটভাটা থেকে আসত। সেটি এখন কমে এসেছে। তবে ফিটনেসবিহীন যানবাহন বায়ুদূষণ করছে প্রায় ১৫ শতাংশ এবং যেগুলোর ফিটনেস আছে, সেগুলোও কমবেশি বায়ুদূষণ করে থাকে। নিম্নমানের ডিজেলও বায়ুদূষণ করছে। তবে আন্তঃমহাদেশীয় বায়ুদূষণেও আক্রান্ত হচ্ছি আমরা। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোও আমাদের বায়ুকে দূষিত করছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, দিল্লি– এসব জায়গা থেকে দূষিত বাতাস আসে। প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার দূরে হলেও ১০-১৫ দিন পর বাংলাদেশের আকাশে চলে আসার আশঙ্কা থাকে। ঘরের কার্পেট, গৃহস্থালির রান্নাবান্না থেকে বায়ুদূষণ হয়। বায়ুদূষণ বাড়ছে বর্জ্য ব্যবস্থা থেকেও। রাস্তায় এখানে সেখানে দীর্ঘ সময় ময়লা ফেলে রাখা হয়। বর্জ্যতে আগুন দেওয়া হয়। আমিনবাজারে এ চিত্র সব সময় দেখা যায়। বায়ুর চাপ যদি বেশি থাকে, ধুলাবালি তৈরি হয়। তখন এগুলো উড়ে যেতে পারে। জিওগ্রাফিক্যাল লোকেশন অনুযায়ী, ঢাকার অবস্থান এমন একটা ফানেলের ভেতর; হিমালয় থেকে নিচের দিকে, শুষ্ক মৌসুমে ওপর দিক থেকে দূষিত বালু বা বায়ু বাতাসের সঙ্গে চলে আসে। ফলে জিওগ্রাফিক্যাল লোকেশনের কারণে আমাদের বায়ুদূষণ বাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ হয় না। এ জন্য আমরা বায়ুদূষণ কমাতে পারি না। কিছু ক্ষেত্রে নগর পরিকল্পনায়ও ঘাটতি দেখা যায়। আমাদের চারপাশে যে নদীগুলো আছে, তাতে আমরা যথাযথভাবে ড্রেন বা বাঁধ সার্কুলেশনের ব্যবস্থা রাখছি না। লেকগুলো রাখছি না। ধানমন্ডি-৭ এর একটি ভবন যদি তৈরি না হতো, তাহলে লেকের সব বায়ু কিন্তু ২৭ নম্বর পর্যন্ত চলে যেত। ঢাকার বায়ুদূষণের যে ডিউরিনাল ডিস্ট্রিবিউশন, সেখানে রাতের বেলা ২টা থেকে সকাল ৭-৮টা পর্যন্ত বায়ুদূষণের একটি পিক থাকে। বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বায়ুর মান সবচেয়ে ভালো থাকে। সেই সময়ে আমরা হাঁটাহাঁটির কথা চিন্তা করতে পারি। এ ক্ষেত্রে আরও তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণা দরকার। এটি বৈশ্বিক সমস্যা। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বাই লেটারাল, মাল্টি লেটারাল কাজ করা দরকার। স্থানীয় উৎসগুলো ইতোমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। এ দূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ দরকার। এ ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি ব্যক্তিগত প্রোটেকশন তো আমরা নেবই এবং ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর এবং দক্ষিণ গত প্রায় দেড় মাস ধরে রাজধানীতে পানি ছিটাচ্ছে। ১২টি লোকেশন নিয়ে গবেষণা করেছিলাম। পানি ছিটালে উপকার হয়। এতে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বায়ুদূষণ কমে আসে এবং এটি ১ থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত সাসটেইন করে। এটি বেশ এক্সপেনসিভ। ফিটনেসবিহীন গাড়ি কমাতে পারি। ইটভাটাগুলো যদি উন্নত করা যায়; উন্নত জ্বালানি ব্যবহার করতে পারি; গৃহস্থালির বায়ুদূষণ কমাতে পারি। মোটাদাগে এই কাজগুলো করতে পারলে বায়ুদূষণ কমানো যাবে।

 চন্দন যেড গোমেজ এই গোলটেবিল আলোচনার মধ্য দিয়ে বায়ুদূষণ যে সমস্যা এবং সমস্যার সমাধান চিহ্নিত হয়েছে। তাই বায়ুদূষণ রোধে যুদ্ধ   ঘোষণার মতো আন্দোলন করতে হবে। জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। সম্মিলিত প্রয়াসও দরকার। এটা একার কোনো দায়িত্ব না। সে জন্যই   উন্নয়নকর্মী হিসেবে আমরা সবাইকে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। আমরা যতটুকু সচেতন, এই সচেতনতা ও জ্ঞানটুকু মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করা   দরকার। বাংলাদেশ ছোট দেশ, কিন্তু বিশাল জনসম্পদের দেশ। এই জনসম্পদকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগানোর একটা প্রক্রিয়া হলো মিডিয়ার   সঙ্গে পার্টনারশিপ। আমাদের মূল জায়গা হলো, শিশু ও তরুণ। সম্প্রতি ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি প্রোগ্রাম করা   হয়েছে। সেখানে তরুণরা ‘ইনোভেটিভ আইডিয়া’ দিয়েছে। আইডিয়া বাছাই করে পাইলটিং কো হবে। আমরা তরুণদের অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে তৈরি করতে চাই। তারাই আগামীতে নেতৃত্ব দেবে। ২৮ জেলায় আমরা একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি, যেখানে প্রতিটি পরিবার উন্নত জ্বালানির চুলা ব্যবহার করছে। এ ছাড়া ২ হাজারের অধিক গ্রামকে ‘সমন্বিত গ্রাম’ হিসেবে কাজ করা হচ্ছে। এসব গ্রাম পরিবেশদূষণ, বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণমুক্ত। গ্রাম দিয়ে হেঁটে গেলেই বুঝবেন, এটা সমন্বিত গ্রাম। জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার একটা মডেল দেখে বলেছিলেন, ‘এটাই হওয়া দরকার আমাদের পরিবেশ সুরক্ষার জন্য।’ একই সঙ্গে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ নীরবে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। আমরা পলিথিন ব্যবহার করি না। এমনকি প্লাস্টিকের বোতলেও পানি খাই না। সারাদেশে প্রায় দেড় লাখ তরুণ-তরুণী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে সচেতনভাবে যুদ্ধ ঘোষণার মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া দেশের ১ হাজার ৪০০ হুজুর বা মুয়াজ্জিনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এ কাজ করছি।

  মুফতি এনায়েতুল্লাহ বিজ্ঞানীরা একমত– পরিবেশগত বিশৃঙ্খলা একটি ব্যাপক শব্দ। দূষণ, আবহাওয়া পরিবর্তন এবং সব ধরনের সীমা   লঙ্ঘনই এর আওতাভুক্ত। এমনকি পরিবেশের ওপর অনাচার এমন একটি ব্যাপক ধারণা, যা দূষণ, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং সব ধরনের সীমা   লঙ্ঘনকে অন্তর্ভুক্ত করে। অনাচারের মধ্যে রয়েছে মরূকরণ, ইদানীং যা ভূপৃষ্ঠে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষ কর্তৃক ভূমির   অনিরাপদ ব্যবহারের মাধ্যমে সবুজের পরিধি হ্রাস পাচ্ছে। তদুপরি দূষণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামী বছরগুলোতে শুষ্ক ভূমি ও মরূকরণ বৃদ্ধি   পাবে। ইসলাম পরিবেশ বা প্রকৃতিতে যে কোনো অনাচারকে হারাম ঘোষণা করেছে। যার মাধ্যমে মানুষ সামগ্রিকভাবে পরিবেশের নিরাপত্তায়   হুমকি সৃষ্টি করে, তাও নিষিদ্ধ করেছে। চাই তা যুদ্ধক্ষেত্রে বিষাক্ত পদার্থ নিক্ষেপের মাধ্যমে হোক, যা মানুষের বসবাসের পৃথিবীর সৌন্দর্যের নিদর্শনগুলোকে বিনষ্ট করে। কারণ, পরিবেশের শৃঙ্খলা বিপর্যস্ত হয়ে পড়া সরাসরি সম্মিলিত মানবতার ভবিষ্যতের জন্য এক ধরনের হুমকি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে। আর সে ব্যর্থ হয়েছে, যে তাকে কলুষিত করেছে।’ (সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত ২০৫) বাণীটির মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘আর যখন সে ফিরে যায়, তখন জমিনে প্রচেষ্টা চালায় তাতে ফ্যাসাদ করতে এবং ধ্বংস করতে শস্য ও প্রাণী। আর আল্লাহ ফ্যাসাদ ভালোবাসেন না।’

  সজীব মিয়া আমি আরবান এলাকায় কাজ করি। সে ক্ষেত্রে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। পরিবেশ বিষয়ে, বায়ুদূষণ নিয়েও   আমাদের কাজ করতে হয়। যদি কেউ হত্যা করে, তাহলে তার প্রকাশ্য বিচার হয়। সড়কের যে যানবাহন এবং শিল্পকারখানা অথবা বর্জ্য ব্যবস্থা   থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া জনগণকে নীরবে হত্যা করছে। সেই হত্যার বিচার করতে হবে। যারা এসব বিষয়ের সঙ্গে জড়িত, তাদের শাস্তির   আওতায় আনতে হবে।



  ওয়াহিদা আহমেদ বাংলাদেশে দিন দিন প্রাইভেটকারের সংখ্যা বাড়ছে। এতে নির্গত ধোঁয়ায় পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যক্তিগত গাড়ি   নিয়ন্ত্রণে সরকার কি কোনো ভূমিকা পালন করছে? রাস্তায় সারাবছর খোঁড়াখুঁড়িকরতে দেখা যায়। এ ধরনের কাজের সময় বালু, ইট, মাটি যত্রতত্র   ফেলে রাখা হয়। এতে সহজেই বায়ুদূষণ হয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড নিয়মের মধ্যে আনতে হবে।

 



   রিয়াদ খান লোদী বিজ্ঞানের বিকাশটা হতে পারে বর্তমান যুগের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, প্রতিটি দেশ, যারা কার্বন নিঃসরণে এগিয়ে   গেছে বা সবার প্রথমে, তারা আসলে বিজ্ঞান দিয়েই এগিয়ে গেছে। আমি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। বিজ্ঞান নিয়েই কাজ করছি। তাই প্রজেক্ট ধরে   কথা বলতে চাই। যেহেতু এনার্জি টু এনার্জি কানেক্টেড, আবর্জনা দিয়ে বাই প্রডাক্ট তৈরি করতে পারি কিনা! অর্থাৎ আবর্জনাকে সঠিকভাবে   ইউটিলাইজ করতে পারি কিনা। জার্মানিতে প্লাস্টিকের বোতলের বিনিময়ে অর্থ দেওয়া হয়। আমরা যারা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ি, তারা বেশিরভাগ   বাইরে চলে যাই। কারণ, তরুণদের আইডিয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না এখানে।



 কনক রায় বায়ুদূষণের দিক দিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় বায়ুদূষণ রোধে তরুণদের সচেতন হতে হবে। আগামী   প্রজন্মকে বাসযোগ্য পরিবেশ দিতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকেও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।



  শেখ রোকন সমকাল সব সময় বায়ুদূষণকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। বায়ুদূষণ প্রতিরোধে প্রতিবেদন তৈরি করা এবং মতামত   প্রকাশ করার ক্ষেত্রেও পরিবেশ ও সামাজিক দায়িত্বের প্রতি সমকালের যে ভূমিকা, তারই অংশ হিসেবে আজকের এ বৈঠক।   পানিদূষণ দেখা যায়, মাটিদূষণ দেখা যায়, কিন্তু বায়ুদূষণ দেখা যায় না। অথচ এটি সর্বত্র বিরাজমান। বায়ুদূষণের প্রভাব ঘরে-     বাইরে, মানবদেহের ভেতর-বাইরে, সব জায়গায়। ফকির লালনের একটা গান রয়েছে– ‘ধর চোর হাওয়ার ঘরে ফাঁদ পেতে আছে’।  তেমনই বায়ুদূষণ নীরবে মানবদেহে মরণফাঁদ তৈরি করছে।




সুপারিশ 

নিয়মিত ‘এনভায়রনমেন্টাল কোর্ট’ পরিচালনা করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে ‘স্ট্যান্ডার্ড’ আর ‘মনিটরিং’ হচ্ছে কিনা, দেখতে হবে। একই সঙ্গে মনিটরিংয়ের ফলাফল জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। উন্নয়ন কাজে (ভবন নির্মাণ কিংবা রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি) বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় শর্ত আরোপ করতে হবে এবং সেটা যেন সঠিকভাবে মানা হয় তা মনিটরিং করতে হবে। তরুণদের মধ্যে জনমত গড়ে তুলতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও, সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগ ও চেষ্টা প্রয়োজন। গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। ক্ষতিকর সিসার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। ক্ষতিকর ধোঁয়া নির্গমনকারী ফিটনেসবিহীন কলকারখানা ও যানবাহন বন্ধ করতে হবে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা বন্ধ করতে হবে। ইটভাটা-কলকারখানায় চুল্লি নির্গত জল ও চিমনি থেকে নির্গত বস্তুকণা পৃথক করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। পরিবেশবান্ধব কলকারখানা স্থাপন করতে হবে।



প্রধান অতিথি হাবিবুন নাহার, এমপি উপমন্ত্রী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সভাপতি আবু সাঈদ খান উপদেষ্টা সম্পাদক, সমকাল

প্যানেল আলোচক ড. আইনুন নিশাত ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং বিশেষজ্ঞ, পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান কোষাধ্যক্ষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও চেয়ারম্যান, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার চেয়ারম্যান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ এবং যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আলোচক চন্দন যেড গোমেজ সিনিয়র ডিরেক্টর, অপারেশন্স অ্যান্ড প্রোগ্রাম কোয়ালিটি, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ মুফতি এনায়েতুল্লাহ শিক্ষক ও কলামিস্ট সজীব মিয়া সভাপতি, আরবান ইয়ুথ ফোরাম ওয়াহিদা আহমেদ শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রিয়াদ খান লোদী শিক্ষার্থী, আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটি কনক রায় সহসম্পাদক, জাতীয় শিশু ফোরাম সঞ্চালক শেখ রোকন সহযোগী সম্পাদক, সমকাল অনুলিখন সাজিদা ইসলাম পারুল নিজস্ব প্রতিবেদক, সমকাল সার্বিকতত্ত্বাবধানে মীর রেজাউল করিম অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড ক্যাম্পেইন কো-অর্ডিনেটর, আরবান প্রোগ্রাম, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ উপস্থিত ছিলেন যোয়ান্না ডি’রোজারিও টেকনিক্যাল ম্যানেজার, আরবান প্রোগ্রাম ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ইভেন্ট সমন্বয় হাসান জাকির হেড অব ইভেন্টস, সমকাল

বিষয় : বায়ুদূষণ রোধে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি

মন্তব্য করুন