- গোলটেবিল
- হেপাটাইটিস নির্মূলে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস জরুরি
হেপাটাইটিস নির্মূলে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস জরুরি

দেশে বর্তমানে ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর এ রোগে মারা যায় প্রায় ২২ হাজার মানুষ। সরকার এসডিজি অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি হেপাটাইটিস ৯০ শতাংশ হ্রাস এবং হেপাটাইটিসজনিত মৃত্যু ৬৫ শতাংশ হ্রাস করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারের সঙ্গে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। গত ২৩ জুলাই সমকালের সভাকক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞ আলোচকরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। আজ ২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উপলক্ষে ‘হেপাটাইটিস প্রতিরোধ ও প্রতিকারে করণীয়’ শীর্ষক এ গোলটেবিলের যৌথ আয়োজক ফোরাম ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভার ও সমকাল। সহযোগিতায় ছিল বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি।
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার মতে, প্রতি ১ লাখ সেবাগ্রহীতার জন্য ১ জন হেপাটলজিস্ট দরকার। দেশের ১৭ কোটি মানুষের জন্য বর্তমানে ১৭০০ জন হেপাটলজিস্ট দরকার। অথচ দেশে হেপাটলজিস্টের সংখ্যা মাত্র ১১০। এ অবস্থার পরিবর্তন করে ১ লাখ সেবাগ্রহীতার জন্য ১ জন হেপাটলজিস্টের চাহিদা পূরণ করতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত লাগবে। দেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিসে ভোগে, আর বছরে ২২ হাজার মানুষ এতে মারা যায়। শুধু লিভার সিরোসিস, লিভার ট্রান্সপ্লান্টের জন্য দেশের অনেক রোগী পার্শ্ববর্তী দেশে যায়। দেশে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে যেখানে ২০ লাখ টাকা খরচ হয়; সেখানে দেশের বাইরে করতে খরচ প্রায় ১ কোটি টাকা। দেশে চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টিতে এ অবস্থা পরিবর্তনে আমাদের অবকাঠামোগতসহ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের আগের কালোমেঘ, অর্জুন, চিরতা– এগুলোর মাধ্যমে ভেষজ ওষুধের চিকিৎসাও ফিরিয়ে আনতে হবে। এসব ভেষজ ওষুধের ইমিউনিটি বাড়াতে হবে। দেশে একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে হেপাটাইটিস প্রতিরোধে হেপাটলজিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট করা যাচ্ছে। এবার প্রথম এখানেই ইন্টারভেনশন হেপাটলজি চালু করা হয়েছে। এখানে বছরে অ্যাডভান্স ফেলোশিপের সুযোগ থাকবে। সেবাগ্রহীতার তুলনায় দেশে হেপাটলজিস্টের সংখ্যা অনেক কম। সরকারকে টার্গেট দিতে হবে ২০৪১-এর মধ্যে কতজন হেপাটলজিস্ট দরকার।
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)
২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আর ভাইরাসটির ভ্যাকসিনের
আবিষ্কারক মার্কিন চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ব্লুমবার্গের জন্মদিনেই দিবসটি পালিত হয়। এবারের বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আমরা আর অপেক্ষা করতে পারি না’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশে বর্তমানে ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর এ রোগে মারা যায় প্রায় ২২ হাজার মানুষ। এখন মৃত্যুর মিছিল যদি কমিয়ে আনতে হয়, তাহলে আসলেই আর অপেক্ষা করার সময় নেই। এ জন্য সবার আগে মানুষকে সচেতন করতে হবে, যেন তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জেনে নেয়, তাদের হেপাটাইটিস বি বা সি ভাইরাস ইনফেকশন আছে কিনা। কারণ হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসে যারা সংক্রমিত, তাদের মধ্যে ৫ শতাংশ জানেই না– তাদের লিভারে জ্বলছে এ ‘তুষের আগুন’। এটা অবশ্য সংগত কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ দুটি রোগের কোনো লক্ষণই তৈরি হয় না। এমনকি লিভারটা অনেকখানি আক্রান্ত হয়ে গেলেও না। এ জন্য শুধু সচেতনতা সৃষ্টি নয়; সচেতন হয়ে যারা এগিয়ে আসবেন তাদের সহজে আর সুলভে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। আক্রান্ত যারা নেগেটিভ রিপোর্ট পাবেন তাদের জন্যও চাই সুলভে হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন। পজিটিভ হলে লাগবে সস্তায় ওষুধ আর সহজে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে বিশেষায়িত চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তুতি একদম খারাপ, তাও কিন্তু না। এরই মধ্যে আমরা আমাদের ৫ বছর বয়সীদের মধ্যে হেপাটাইটিস ‘বি’র সংক্রমণ ১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে পেরেছি, যা একটি বড় অর্জন আর স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ ক্ষেত্রে আমাদের রয়েছে টিকাদান কর্মসূচি। রয়েছে সরকারের হেপাটাইটস বি ও সি নির্মূলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে একটি অপারেশনাল প্ল্যান-ওপিও। দেশে সম্প্রসারিত হয়েছে লিভার রোগের চিকিৎসাক্ষেত্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে লিভার বিভাগে অধ্যাপকের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও দুটি প্রতিষ্ঠানে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট করার সুযোগ মিলছে এখন। ইতোমধ্যে দেশীয় বিশেষজ্ঞরা ন্যাসভ্যাক নামক হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের একটি নতুন ইমিউনথেরাপি আবিষ্কার করেছেন। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে ওষুধটি কয়েক দিনের মধ্যে বাজারে আসছে। তারপরও এ কথা মানতেই হবে, আমাদের যেতে হবে এখনও বহু পথ। কারণ, সময় হাতে মাত্র ৯ বছর। এসডিজির অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩০-এর মধ্যে পৃথিবী থেকে হেপাটাইটিস বি ও সি নির্মূল করা। তাই বাংলাদেশকে এসডিজি অর্জনে হেপাটাইটিস নির্মূল করতে হবে। এর মধ্যে মহামারি করোনা আমাদের আরও পিছিয়ে দিয়েছে। সুখবর হলো, হেপাটাইটিস নির্মূলে রোটারিয়ানরাও কাজ করছেন। তারা সচেতনতা বৃদ্ধি, স্ক্রিনিং এবং টিকাদানের মতো কর্মসূচি পালন করছেন।
ডা. জামালউদ্দিন চৌধুরী
হেপাটাইটিস একটি ঘাতক ব্যাধি। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের দেশগুলোকে এটি এসডিজির মাধ্যমে কমিয়ে আনতে বলা হয়েছে। বর্তমানে টাঙ্গাইলের ১০টি উপজেলা ও মানিকগঞ্জ জেলায় পাইলট স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের আওতায় আনা হয়েছে। সেখানে একটি গরিব পরিবারকে বছরে ৫০ হাজার টাকার ফি ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা থাকবে। এর পরিধি আরও বাড়ানো যেত, কিন্তু কভিডের ধাক্কা আমাদের গতি কমিয়ে দিয়েছে। এসডিজিএস লক্ষ্য পূরণে দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে হবে। এ জন্য স্বাস্থ্য খাত থেকে প্রতিটি খাতে কাজ করতে হবে। সরকার দেশে চার হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছে। আমরা আশা করছি, দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে প্রতিটি খাতে সরকার যেভাবে কাজ করছে; নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সেটি অর্জন সম্ভব হবে।
শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী
রোগ নিয়ে অনেক গবেষণা ও ওষুধ আবিষ্কার হচ্ছে।
কিন্তু আমাদের আগে জানতে হবে– কী করলে আমরা হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত হবো না। এসব জানা থাকলে এ রোগ অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে আমাদের নগর থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সচেতনতা বাড়াতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে হেপাটাইটিস রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং সাধারণ মানুষের মাঝে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এটির কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ইউনিয়ন পর্যায়েও কমিউনিটি ক্লিনিকে সহজে ও সুলভে স্ক্রিনিং ও টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে হেপাটাইটিস রোগ নিয়ে গবেষণা বাড়াতে হবে। ওষুধ আবিষ্কারে সরকারকে সহযোগী হতে হবে। কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে হবে। দেশে সেবাগ্রহীতার অনুপাতে হেপাটলজিস্ট বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের দেশেই চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করে কম খরছে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ২৯৬ মিলিয়ন মানুষ
হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত এবং হেপাটাইটিস সি নিয়ে বসবাস করছে ৫৮ মিলিয়ন মানুষ। এর মধ্যে ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন নতুন করে ক্রনিক হেপাটাইটিস বি এবং সি রোগে আক্রান্ত। এক বছরে এ রোগে ১১ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। প্রতি মিনিটে মারা যাচ্ছে দুইজন। পৃথিবীতে ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা ও এইচআইভি সম্পর্কিত মৃত্যু কমছে, অথচ হেপাটাইটিস সম্পর্কিত মৃত্যু বাড়ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তাতে এইডস, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া এবং গ্রীষ্মকালীন রোগের মহামারি শেষ করে এবং হেপাটাইটিস, পানিবাহিত রোগ এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা বলা হয়েছে। আমরা এর মধ্যে অনেক এগিয়ে গেছি। এটি প্রতিরোধে প্রতি লাখ লোকের কত সংখ্যক আক্রান্ত, সেটি নির্ণয় করা দেশের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক কঠিন। ৫ বছর ও তার নিচের বয়সীদের এ রোগের পরীক্ষা করা হচ্ছে। সরকার এসডিজি অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি হেপাটাইটিস ৯০ শতাংশ হ্রাস এবং হেপাটাইটিসজনিত মৃত্যু ৬৫ শতাংশ হ্রাস করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধযোগ্য এবং সি-এর কার্যকর চিকিৎসা আছে। তাই হেপাটাইটিস বি নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক ও জাতীয় কর্মকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। দেশে হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণে পৃথক জাতীয় প্রোগ্রাম না থাকা, পর্যাপ্ত জনবল না থাকা এবং অর্থের অপর্যাপ্ত জোগানের কারণে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সবার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সরকার ইতোমধ্যে খসড়া কর্মকৌশল প্রণয়ন করে সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে হেপাটাইটিস বি ও সি সংক্রমণের হার নির্ণয়ে জাতীয় জরিপ করা হয়েছে। দেশের অভিজ্ঞ হেপাটলজিস্টদের মাধ্যমে প্রতি বছর চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সারাদেশে টিকা প্রদান ও অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ সহজলভ্য করতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সর্বোপরি হেপাটাইটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ চলছে।
ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর
আমরা বিভিন্ন সময় হেপাটাইটিস নির্মূলের কথা বলি। এটি একটি গুরুতর ভুল। হেপাটাইটিস কখনও নির্মূল করা সম্ভব নয়। আমরা এটি প্রতিরোধ করতে পারি। ২০১৫ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) প্রোগ্রামের শুরুতে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা বর্তমান অবস্থা থেকে কতটুকু নির্মূল করতে পারব। এতে দুটি দিকের কথা বলা হয়েছে– একটি প্রতিরোধ, আরেকটি চিকিৎসা। এই প্রতিরোধে কী ছিল উন্নত বিশ্বে, কী ছিল উন্নয়নশীল বিশ্বে। এটি প্রতিরোধে একটি ভ্যাকসিন আছে। যদি মায়েদের বাচ্চা হওয়ার সময় ভ্যাকসিন দিতে পারি তাহলে আমরা আস্তে আস্তে এগিয়ে যাব। উন্নত বিশ্বে বিশেষ করে জাপানে প্রতিটি সিস্টেমে হেপাটাইটিস আছে কিনা, সেটি পরীক্ষা করে। আবার বিশ্বের অনেক দেশে বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে অন্য দেশ থেকে কর্মী নেওয়ার সময় হেপাটাইটিস আছে কিনা, সেটি পরীক্ষা করে। বিশেষ করে তাদের সব মানুষ চিকিৎসাসেবার আওতায় আছে। এই রোগটি জন্মের সময় মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে, মৃত্যু পর্যন্ত ভোগায়। পরে হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস এবং শেষে লিভার ক্যান্সার হয়। ২০১৫ সালে যখন হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্য নেওয়া হয়, তখন মাত্র ১ শতাংশ লোক চিকিৎসা নিয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সেটি ৮০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়। ২০২৩ সালে এসে এখনও মাত্র ৫-৭ শতাংশ লোক হেপাটাইটিস রোগের চিকিৎসা নিচ্ছে। এর মধ্যে উন্নত দেশে বেশি চিকিৎসা নিয়েছে; অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে সে সংখ্যা অনেক কম। এর কারণ, হেপাটাইটিস রোগের চিকিৎসা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত নিতে হয়। আমরা চেষ্টা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চিকিৎসার জন্য। এ কারণে নেজব্যাক নামে একটি ওষুধ দেশে আনার চেষ্টা করছি। উন্নত দেশে আরেকটি কাজ করা হয়। তাদের দেশে মোট হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্তের পরিসংখ্যান আছে। কিন্তু আমাদের দেশে অনেকে জানেই না, তারা হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত।
এস এম মাহমুদুল হক পল্লব
বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস শুধু ব্যবসা নয়; সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেও অনেক কাজ করে থাকে।
এরই অংশ হিসেবে আমরা ‘হেপাটাইটিস প্রতিরোধ ও প্রতিকারে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিলের মতো আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। আপনারা জানেন, স্বাধীনতার পর আমাদের দেশে ৯৫ শতাংশ ওষুধ আমদানি করা হতো। এখন দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৯৫ শতাংশ ওষুধই দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। এ ছাড়াও দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে শুধু বিকনই বিশ্বের শতাধিক দেশে ওষুধ রপ্তানি করে থাকে। নিউজিল্যান্ডের মতো দেশেও এখন আমাদের দেশ থেকে বিশেষ করে বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের ওষুধ অনুমোদন দেওয়া/নেওয়ার দাবি উঠেছে। এর আগেও এক ব্রিটিশ নাগরিক তাঁর হেপাটাইটিস সি চিকিৎসার জন্য আমাদের ওষুধ ব্যবহার করেন। তাঁর ইন্স্যুরেন্স করা ছিল না। ওই রোগীর জীবন রক্ষায় আমাদের দেশের ওষুধ যে ভূমিকা রেখেছিল, তা বিবিসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।
দেশে ক্যান্সারের ওষুধের ওপর ভ্যাট না থাকায় ক্যান্সার চিকিৎসায় ওষুধ রোগীদের জন্য সহজলভ্য হয়েছে। হেপাটাইটিস বি ও সির চিকিৎসা ক্যান্সারের মতো বা আরও বেশি দীর্ঘমেয়াদি হলেও এ রোগের ওষুধের ওপর এখনও ভ্যাট আরোপিত রয়েছে। হেপাটাইটিস রোগের ওষুধের ওপর থেকে ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রত্যাহার করা গেলে আরও বেশি সংখ্যক রোগীর চিকিৎসার আওতায় আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে। আশা করি, আমাদের জনবান্ধব সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে।
রোটারিয়ান মো. আশরাফুজ্জামান নান্নু
হেপাটাইটিসকে বলা হয় নীরব ঘাতক। এটি শরীরে বাসা
বেঁধে মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। আমরা স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা খাতে কাজ করি। এ পর্যন্ত সরকারের কোনো পক্ষ হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করার আমন্ত্রণ জানায়নি। তারপরও আমরা এর মধ্যে ১ লাখ মানুষকে স্ক্রিনিং ও ১০ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আমাদের ১৫ হাজার রোটারিয়ানকে সরকারের প্রোগ্রামে যুক্ত করলে আমরা সহযোগিতা করতে পারব। দেশে হেপাটাইটিস স্ক্রিনিং এবং টিকার দাম অনেক বেশি। এসব প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম কমিয়ে আনা হলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে স্ক্রিনিং ও টিকার আওতায় আনা সম্ভব।
রোটারিয়ান শহিদুল বারি
হেপাটাইটিস রোগ সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে এটি নির্মূল করতে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। গ্রামের অনেক মানুষ হেপাইটাইটিস সম্পর্কে জানেই না। তাদের অনেকে এ রোগে আক্রান্ত হলেও তারা বুঝতে পারে না। যখন জানতে পারে, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। তাই হেপাটাইটিস নির্মূলে ঘরে ঘরে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তাদের মাঝে যারা হেপাইটাইটিসের টিকা নেয়নি তাদেরকে টিকার আওতায় আনতে হবে। স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে শনাক্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ইতোমধ্যে সচেতনতার পাশাপাশি টিকা প্রদান ও স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম শুরু করেছে। সরকারের সহযোগিতা পেলে এ কার্যক্রম আরও বৃহৎ পরিসরে করা যাবে।
লোটন একরাম
হেপাটাইটিস যে কতটা ভয়ংকর, আর এটি নির্মূল
কতটা জরুরি– তা আজকের গোলটেবিল আলোচনায় উঠে এসেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূল করতে হলে সরকারকে উদ্যোগ নিতেই হবে। এটা নিয়ে শুধু মুখে মুখে বললে হবে না; রাজনৈতিক অঙ্গীকারের সঙ্গে অর্থ বরাদ্দ জরুরি। শুধু সরকার নয়; এ রোগ নির্মূলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। আইন প্রণয়নে অংশীজনকে সম্পৃক্ত করতে হবে। শিশুর জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টিকা নিশ্চিত করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে হেপাটাইটিস রোগ নির্মূলে এর স্ক্রিনিং, টিকা ও ওষুধের দাম কমাতে হবে।

মন্তব্য করুন