ডেঙ্গুতে মৃত্যুহারে শীর্ষে বাংলাদেশ
শেষ দুই মাসে হাসপাতালে ভর্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৮০ শতাংশ রোগীর মৃত্যু
ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০১:০৪
বিশ্বের ৫৩টি দেশে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজারে বেশি মানুষের। এর মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যুহার বাংলাদেশে। ডেঙ্গুতে চলতি বছর দেশে প্রায় ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের ৮০ শতাংশই মারা গেছে হাসপাতালে ভর্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে। শুধু ডেঙ্গু নয়, এবার চিকুনগুনিয়া এবং জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীও মিলছে। চলতি বছর জিকা ভাইরাসের ১১ এবং চিকুনগুনিয়ার ৬৭ রোগী শনাক্ত হয়েছে। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে ডেঙ্গুবিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), প্যান আমেরিকান স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোলের (ইসিডিসি) প্রতিবেদন বলছে, এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে ব্রাজিল। তবে মৃত্যুহারে শীর্ষে বাংলাদেশ। ব্রাজিলের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুহার ৯ গুণ বেশি। ব্রাজিলে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৯৯ লাখ ২৮ হাজার ১৬৯ রোগীর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজার ৮১৫ জনের। মৃত্যুহার ০.০৫৯ শতাংশ। বাংলাদেশে এই হার ০.৫ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, ডেঙ্গুতে এমন মৃত্যুহার নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মশাবাহিত জ্বরটি নিয়ে বাংলাদেশিদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। অনেকে এমন সময় হাসপাতালে আসছেন, যখন আর কিছু করা যাচ্ছে না। দেরিতে হাসপাতালে আনায় অনেক রোগীর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শক সিনড্রোম দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া অনেকের পেটে ও ফুসফুসে পানি চলে আসছে। এতে মৃত্যুহার বেশি হচ্ছে।
তিনি জানান, ডেঙ্গুতে বেশি মারা যাচ্ছে ঢাকায়, যাদের বয়স ২০ থেকে ৪০ বছর। তবে চট্টগ্রামে শিশু ও বৃদ্ধদের মৃত্যুহার তুলনামূলক বেশি।
ডেঙ্গুর পাশাপাশি দেশে জিকা ভাইরাস ও চিকুনগুনিয়ার রোগী শনাক্ত নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তার কিছু নেই জানিয়ে ডা. আবু জাফর বলেন, জিকা ভাইরাসে আক্রান্তদের ৯০ শতাংশের ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণই দেখা দেয় না। এ ছাড়া এই রোগে মৃত্যুহার শূন্য।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ৮০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে। অনেকে চিকিৎসা শুরুর আগেই মারা গেছে। তাই জ্বর হলে অবহেলা করার সুযোগ নেই।
ঢাকার বহুতল ভবনে সবচেয়ে বেশি এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার তথ্য দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম এম আখতারুজ্জামান বলেন, ৩ হাজার ১৩৪টি বহুতল বাড়ির মধ্যে ৫১ দশমিক ২৮ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা ও পিউপা (লার্ভার পরের স্তর) পাওয়া গেছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র বাড়ি, নির্মাণাধীন বাড়ি এবং সেমিপাকা বাড়িতে ৪৯ শতাংশ লার্ভা পাওয়া গেছে। গত মাসের ৪ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত এই জরিপ করা হয়।
- বিষয় :
- ডেঙ্গু