বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস
ম্যালেরিয়ার ৮৮ শতাংশ রোগী বান্দরবান ও রাঙামাটিতে

প্রতীকী ছবি
তবিবুর রহমান
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৫ | ০১:২৯ | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫ | ০৯:২৮
দেশে গত বছর ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয় ১৩ হাজার ৯৯ জনের। তাদের মধ্যে বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলায়ই শনাক্ত হয় ১১ হাজার ৫০১ রোগী। সেই হিসাবে মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্তদের ৮৭ দশমিক ৮০ শতাংশ ছিল এই দুই জেলার। এ ছাড়া দেশের ১১ জেলায় রয়েছে ম্যালেরিয়ার আধিক্য।
দেশে মশাবাহিত রোগের মধ্যে ম্যালেরিয়া অন্যতম। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা এ রোগের জীবাণু ছড়ায়। বাংলাদেশে মোট ৩৬ প্রজাতির অ্যানোফিলিস মশা দেখা যায়; এর মধ্যে সাতটি প্রজাতি ম্যালেরিয়া ছড়ায়। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়োপযোগী উদ্যোগ নিলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।
এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছরের মতো আজ শুক্রবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য– ‘আমরাই করবো ম্যালেরিয়া নির্মূল; নব উদ্যমে, নব বিনিয়োগে, নব চিন্তায়’। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশে ৬৪১ ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে একজনের। গত বছর শনাক্ত হয়েছিল ১৩ হাজার ৯৯ জন। এর মধ্যে বান্দরবানে ৭ হাজার ৭২৭, রাঙামাটিতে ৩ হাজার ৭৭৪ জন এবং বাকি ১১ জেলায় ১ হাজার ৫৯৮ জন শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ছয়জনের, যাদের পাঁচজনই বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে এখনও ১৩টি জেলার ৭১ উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। জেলাগুলো হলো– রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও কুড়িগ্রাম। মূলত পার্বত্য ও সীমান্ত জেলাগুলোতে ম্যালেরিয়া রোগী বেশি।
অধিদপ্তর বলছে, ২০২৩ সালেও ম্যালেরিয়ায় ছয়জনের মৃত্যু হয়। শনাক্ত হয় ১৬ হাজার ৬৭৭ রোগী। এই হিসাবে গত বছর রোগী কমেছে ২০ দশমিক ৪ শতাংশ। দেশে গত ১১ বছরের মধ্যে ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ ম্যালেরিয়া শনাক্তের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি রোগীর মৃত্যু হয়। ওই বছর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ৫৭ হাজার ৪৮০ রোগীর মধ্যে মারা যায় ৪৫ জন। এরপর করোনা মহামারির বছর ২০২০ সালে ৬ হাজার ১৩০ জন আক্রান্ত হয়। পরের বছর ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ২৯৪ জন। ওই দুই বছরই ম্যালেরিয়ায় ৯ জন করে রোগীর মৃত্যু হয়। ২০২২ সালে আবার বেড়ে যায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা। সে বছর ১৮ হাজার ১৯৫ আক্রান্তের বিপরীতে মারা যায় ১৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও ম্যালেরিয়া রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, ম্যালেরিয়ার পরজীবী মোকাবিলায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত দুটি ওষুধ অনেক দেশে কার্যকারিতা হারিয়েছে। দেশগুলো আরও একটি ওষুধ এই চিকিৎসায় যুক্ত করেছে। তবে আশার বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে এসব ওষুধের কার্যকারিতা এখনও ঠিক আছে। এখন যদি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায় এ রোগ নির্মূল সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, শিশুদের জন্য আফ্রিকাতে ম্যালেরিয়ার দুটি কার্যকর টিকা স্বাস্থ্য সংস্থা সুপারিশ করেছে। বাংলাদেশের ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকা লামা ও আলিকদমের ১০০ গ্রামের বাসিন্দাদের ২৫টি গ্রুপে ভাগ করে চার ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ম্যালেরিয়া নির্মূলে সবার জন্য টিকার বিষয়ে গবেষণাও চলছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ) ডা. শ্যামল কুমার দাস বলেন, বর্তমানে আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ– বান্দরবান ও রাঙামাটিতে ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি মোকাবিলা করা। পার্বত্য তিন জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে অন্যতম চ্যালেঞ্জ সীমান্ত। এ ছাড়া এসব এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে জুম চাষি ও বনজীবীদের শনাক্ত করা কঠিন। তারা সাধারণ মানুষের মতো বাড়িতে থাকেন না। এক মাস, ১৫ দিনের জন্য কাঠ কাটতে জঙ্গলে চলে যান। এগুলো আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। তাদের সঙ্গে যোগাযোগও কঠিন। তবে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে প্রতিরোধমূলক ওষুধ ও টিকা দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য গত বছর সংক্রমণ কিছুটা কমেছে।
- বিষয় :
- দিবস আজ