প্রস্রাবের অস্বাভাবিকতা হলে করণীয়

.
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২৩:২৫ | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৩:৩১
অনেকের ধারণা, বেশির ভাগ লোকই রাতে ঘুম থেকে উঠে প্রস্রাব করেন। এটা ঠিক নয়। বেশির ভাগ মানুষ প্রস্রাব না করেও একনাগাড়ে ঘুমাতে পারেন ছয় থেকে আট ঘণ্টা। রাতে একবার উঠে প্রস্রাব করলে তেমন কিছু না। শোবার আগে আগে কফি, চা বা পানি পান করলে এমন হতেই পারে। তবে প্রস্রাবের জন্য রাতে বারবার উঠতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। অনেকের ধারণা, আট গ্লাস পানি দৈনিক পান করতেই হবে। আসলে এমন কঠোর বিধি নেই। কতটুকু পানি পান যথেষ্ট হতে পারে? যখন প্রস্রাব হালকা খড়ের রং বা প্রায় পরিষ্কার থাকে, তাহলে বোঝা যায় পর্যাপ্ত পানি পান করা হচ্ছে। যথেষ্ট তরল গ্রহণ না করলে প্রস্রাব হবে গাঢ়, কড়া সোনা রং।
প্রস্রাব যদি হয় ম্লান লাল রঙের, তাহলে পরামর্শ প্রয়োজন হতে পারে। সংক্রমণ, পাথুরি, ভেতরে আঘাত বা মূত্রথলিতে অন্য সমস্যা হলে হতে পারে এমন রং। সে ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখানো উচিত। ঘোলাটে প্রস্রাব হতে পারে সংক্রমণের কারণে।
প্রস্রাব জীবাণুমুক্ত– এমন কথা ঠিক নয়। মূত্রথলির ভেতরে জীবাণুমুক্ত হতে পারে, কিন্তু মূত্রপথ দিয়ে বেরোনোর সময় ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে।
লাজুক মূত্রথলি বা সাই ব্লাডার বলে একটা কথা চালু আছে। অনেকে লোকসমাগমস্থলে টয়লেটে যেতে সমস্যা অনুভব করেন। এ ধরনের সমস্যার সঠিক কারণ জানা না গেলেও অনেকে একে ‘সামাজিক উদ্বেগজনিত বৈকল্য’ (সোশ্যাল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার) মনে করেন। এমন হলে চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। টয়লেটে যাওয়ার সময় নির্ঘণ্ট ঠিক করলে, বিহেভিয়ার এক্সপোজার থেরাপি নিলে সুফল লাভ হতে পারে।
প্রস্রাব অনেক সময় ধরে রাখলে মূত্রথলিতে সংক্রমণ হতে পারে। মেয়েদের এমন সমস্যা বেশি হয়। তাই প্রস্রাবের বেগ হলে টয়লেটে গেলেই ভালো।
বেশির ভাগ মানুষ দিনে ক’বার বাথরুমে যান?
দিনে ছয় থেকে আটবার। তবে প্রচুর পানি ও তরল পান করলে দিনে দশবার প্রস্রাব করাও বিচিত্র নয়। মূত্রবর্ধক বা প্রেশারের কিছু ওষুধ খেলেও প্রস্রাব বেশি হতে পারে।
পুরুষের মূত্রপথে সংক্রমণ হয় না– এমন ধারণা ভুল। নারীদের মূত্রপথে সংক্রমণ বেশি হয়, কারণ তাদের মূত্রপথ প্রশস্ত হওয়ায় ব্যাকটেরিয়া সহজে প্রবেশ করে মূত্রথলিতে। তবে পুরুষের ‘কম ঝুঁকি’ মানে ঝুঁকি নেই এমন নয়। আর পুরুষের সংক্রমণ হলে সেটা বারবার হয়। কারণ ব্যাকটেরিয়া প্রোস্টেট টিস্যুর ভেতরে গভীরে লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই আপনার প্রস্রাব-সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখক : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।