জরায়ুমুখের ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা

.
ডা. খালেদা আক্তার ভূঁইয়া
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ২৩:৪০ | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৪ | ১১:৩০
নারীদের ক্যান্সারের তালিকায় বাংলাদেশে সারভাইক্যাল ক্যান্সার বা জরায়ুমুখের ক্যান্সারের স্থান দ্বিতীয়। জরায়ুমুখের ক্যান্সার শতভাগ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। এর প্রতিরোধে প্রচলিত রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্ক্রিনিং পরীক্ষা এবং আবিষ্কৃত হয়েছে টিকা। কিছু সচেতনতামূলক জীবন ব্যবস্থা, সময়মতো স্ক্রিনিং পরীক্ষা এবং টিকা নেওয়ার মাধ্যমে এই মরণঘাতী সারভাইক্যাল ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
উপসর্গ
- প্রাথমিক পর্যায়ে মাসিক ছাড়া যোনিপথে রক্ত যাওয়া।
- মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও অর্থাৎ lমেনোপজের পরও যোনিপথে রক্ত যাওয়া।
- দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব যাওয়া।
- স্বামী সহবাসে রক্ত যাওয়া।
এই লক্ষণগুলো থাকতে পারে। ক্যান্সার যদি ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে কোমরব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, এমনকি প্রস্রাবে রক্ত দেখা দেয়। ডায়রিয়া, মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, এমনকি শ্বাসকষ্ট নিয়েও রোগীরা আসতে পারে। জরায়ুমুখ পরীক্ষা করলে, সেখানে ক্ষত (আলসার) অথবা চাকা (গ্রোথ) পাওয়া যেতে পারে। এখান থেকে ‘বায়োপসি’ নিয়ে পরীক্ষা করলে এই ক্যান্সার নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যায়। ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে কিনা তার জন্য
স্টেজিং পরীক্ষা, এমআরআই, আলট্রাসনোগ্রাফি, ফুসফুসের এক্স-রে, সিস্টোসকপি, প্রক্টোসকপি করা হয়ে থাকে।
চিকিৎসা
সারভাইক্যাল ক্যান্সারের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে, যেমন– অপারেশন, রেডিওথেরাপি, কেমোরেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি। অপারেশন শুধু প্রাথমিক অবস্থায় অথবা স্টেজ-২ পর্যন্ত করা যায়; যখন ক্যান্সার শুধু সার্ভিক্সে থাকে।
ক্যান্সার যদি সার্ভিক্সের আশপাশে, অর্থাৎ প্যারামেট্রিয়ামে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে অপারেশনের আর কোনো সুযোগ নেই। প্রাথমিক পর্যায়ে অপারেশন করে এবং প্রয়োজনে অপারেশন-পরবর্তী রেডিওথেরাপি দিয়ে এই ক্যান্সার সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। তবে চিকিৎসার পর ফলোআপে থাকতে হবে। প্রথম দিকে তিন থেকে চার মাস পরপর, তারপর ছয় মাস পরপর, তারপর এক বছর পরপর।
প্রতিরোধে করণীয়
৩০ বছরের পর থেকে প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছর পরপর প্রত্যেক নারীকে স্ক্রিনিং পরীক্ষা করতে হবে। স্ক্রিনিং পরীক্ষার মধ্যে ভায়া টেস্ট, প্যাপস টেস্ট, এইচপিভি টেস্ট প্রচলিত।
স্ক্রিনিং পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার-পূর্ববর্তী অবস্থা নির্ণয় করা যায়। ক্যান্সার-পূর্ববর্তী অবস্থার সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সারভাইক্যাল ক্যান্সার থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব। ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী সব কিশোরীকে এইচপিভি টিকাদানের মাধ্যমেও এই ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব।
লেখক : প্রসূতি, বন্ধ্যত্ব ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ল্যাপারোস্কপিক সার্জন, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং কনসালট্যান্ট মনোয়ারা হসপিটাল (প্রাইভেট) লিমিটেড, সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা।