ডায়ালাইসিস একটি বিকল্প রক্ত পরিষ্কার পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে রক্তের দূষিত ও ক্ষতিকর পদার্থ এবং অতিরিক্ত পানি প্রস্রাব আকারে বের করে দেওয়া যায়। সুস্থ মানুষের দেহে কিডনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ কাজগুলো করে থাকে। কিন্তু কিডনি যখন বিকল হয়ে যায় বা রক্ত পরিশোধন করার ক্ষমতা হারায়, তখন রক্ত পরিশোধনের জন্য ডায়ালাইসিসের কোনো বিকল্প থাকে না। অনেকে মনে করেন, শুধু দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্তদের ডায়ালাইসিস লাগে; কিন্তু যদি কারও অ্যাকিউট বা তাৎক্ষণিক কিডনি ফেইলিওর হয়, তাহলে হঠাৎ ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হতে পারে।

ডায়ালাইসিস পদ্ধতিতে রক্ত পরিষ্কার হয়, কিন্তু হরমোন উৎপাদন হয় না। অনেকে মনে করেন, ডায়ালাইসিস একবার করানো হলে রোগীকে আর বাঁচানো যায় না। অথচ নিয়মিত ডায়ালাইসিস করানোর ফলে বিকল কিডনির রোগী সুস্থ থাকেন বহুকাল। তবে যারা অনিয়মিতভাবে ডায়ালাইসিস করেন, তারা বিভিন্ন রকমের শারীরিক সমস্যা, যেমন– ক্ষুধামান্দ্য, রক্তস্বল্পতা, শ্বাসকষ্ট, শরীর ফুলে যাওয়া ইত্যাদিতে আক্রান্ত হতে পারেন।

পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস

স্টেরাইল ডায়ালাইসিস দ্রবণ, যাতে প্রচুর খনিজ উপাদান ও গ্লুকোজ থাকে, একটি টিউবের মাধ্যমে পেরিটোনিয়াল বা পেটের ভেতর প্রবেশ করানো হয়। ডায়ালাইসিসের কাজটা সেখানেই হয়। মূলত পেটের অভ্যন্তরের মিউকাস মেমব্রেন এখানে ছাঁকনির কাজ করে। দ্রবণটা পেটের অভ্যন্তরে কিছু সময় রাখলে রক্ত থেকে দূষিত পদার্থ অসমোসিস প্রক্রিয়ায় শুষে নেয়। হিমোডায়ালাইসিসের মতো তাৎক্ষণিকভাবে এটি কার্যকর না হলেও দীর্ঘদিন করা যায়। এমনকি রোগী নিজে বাসায় বসেও তা করতে পারেন। এতে খরচও কম পড়ে।

পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস আবার দুই রকম– কন্টিনিউয়াস অ্যাম্বুলেটরি পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস বা সিএপিডি ও কন্টিনিউয়াস সাইক্লিক পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস বা সিসিপিডি। প্রথমটি প্রতিদিন কয়েকবার করতে হয়। রোগী বা রোগীর সঙ্গের লোকই করতে পারেন; কোনো যন্ত্রপাতির সাহায্য লাগে না। দ্বিতীয়টি সাধারণত রোগী যখন ঘুমান, তখন করতে হয়। সময় লাগে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা।

ডায়ালাইসিস কিন্তু কিডনির বিকল্প নয়

ডায়ালাইসিস করে রক্ত থেকে দূষিত কিছু পদার্থ বের করা যায়; কিন্তু এটি কিডনির অন্যান্য কাজ করতে পারে না। ডায়ালাইসিসের রোগীদের পানি ও তরল পানে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। সব ধরনের খাবার খাওয়া যায় না। কিছু ওষুধও সেবন করতে হয়। তবে ডায়ালাইসিসের রোগীরা অন্যান্য স্বাভাবিক কাজ করতে পারেন। এ অবস্থায় গর্ভধারণ করলে বেশি বেশি ডায়ালাইসিস করে রক্ত দূষিত পদার্থমুক্ত রাখতে হয়।

লেখক: পরিচালক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (এনআইকেডিউ)