- স্বাস্থ্যকথা
- জনবল সংকটে ভোগান্তির সীমা নেই রোগী-স্বজনের
জনবল সংকটে ভোগান্তির সীমা নেই রোগী-স্বজনের

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
নানা সংকটে ধুঁকছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। বছরের পর বছর ধরে সেখানে ওষুধ ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সংকট; রয়েছে চিকিৎসক-কর্মচারীদের সিন্ডিকেট, দালালচক্রের দৌরাত্ম্য। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে এখন আলোচনার শীর্ষে হাসপাতালটির জনবল সংকট। ৫০০ শয্যার জনবল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, চিকিৎসক আর নার্স-কর্মচারী মিলে জনবল ৩৩৯ জন। এতে উত্তরের দুই কোটি মানুষের ভরসাস্থল এ হাসপাতালে রোগীদের সেবার পরিবর্তে জুটছে ভোগান্তি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসাসেবা নেন। প্রতিদিন বহির্বিভাগে এক থেকে দেড় হাজার রোগী এবং জরুরি বিভাগে প্রায় ৫০০ রোগী চিকিৎসাসেবা নেন। শয্যা ও রোগীর চাপ বাড়লেও সেবা কার্যক্রম চলছে ৫০০ শয্যা হাসপাতালের জনবল দিয়েই। চিকিৎসক-নার্স সংকটের কারণে রোগীরা সময়মতো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। কর্মচারী সংকটের কারণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন সেবাও ব্যাহত হচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, ওয়ার্ডগুলোতে তিলধারণের জায়গা নেই। মেঝেতে যততত্র অবস্থান করছেন রোগীরা। মেডিসিন বিভাগের সামনে শতাধিক রোগী মেঝেতে পড়ে থাকলেও তাদের দেখভালেরও কেউ নেই।
লালমনিরহাটের আদিতমারী থেকে চিকিৎসা নিতে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব আমেনা বেগম বলেন, ‘বাবা, দুদিন হইলো ভর্তি হইছি। ভেতরোত (ওয়ার্ডে) জাগা নাই। এ্যাটে মাজিয়াত (মেঝে) পড়ি আছি, কায়ও দেইকপারও আইসে নাই।’ নীলফামারীর জলঢাকা থেকে আসা রহমত আলী বলেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে। হাসপাতালের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, প্রথম শ্রেণির চিকিৎসকসহ অন্যান্য ৩২২টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ২২৭ জন; দ্বিতীয় শ্রেণির নার্সসহ অন্যান্য পদ ৯৯৩টি থাকলেও রয়েছেন ৯৭০ জন; তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর ১০৫টি পদের বিপরীতে আছেন ৬৬ জন; চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ ৪৪৫টি, আছেন ২৬৩ জন। তবে হাসপাতালে তৃতীয় শ্রেণির সহকারী নার্সের ১০টি পদের বিপরীতে ১০ জনই আছেন।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. জামাল উদ্দিন মিন্টু বলেন, রোগীদের বাড়তি চাপের সঙ্গে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় চিকিৎসাসেবা দিতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। আইসিইউ, সিসিইউ, বার্ন ইউনিটসহ বিশেষায়িত বিভাগগুলোতে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবলের প্রয়োজন। হাসপাতালে এসব বিভাগে চিকিৎসক, নার্সসহ স্টাফদের সংকট রয়েছে। এতে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। রংপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মাহফুজার রহমান বলেন, এ হাসপাতাল ৫০০ শয্যা থেকে এক হাজার শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল বাড়েনি। চিকিৎসক-নার্স-স্টাফরা প্রয়োজনের বেশি কাজ করলেও রোগী ও স্বজনের সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব হচ্ছে না।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউনুস আলী বলেন, রংপুরের দুই কোটি মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল এ হাসপাতাল। জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, হাসপাতালে ১৮২টি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ খালি আছে। এসব পদের জন্য মাস্টাররোলে জনবল পদায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য করুন