উত্তরাঞ্চলের অসহায় ও দরিদ্র মানুষের অন্যতম ভরসাস্থল ১ হাজার শয্যার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতালটি উত্তরবঙ্গের আটটি জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সরকারি হাসপাতালটিতে মানুষের ভিড় অত্যন্ত বেশি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার রোগী ভর্তি থাকেন এ হাসপাতালে। প্রধানত পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা– এই আট জেলার মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। 

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দারিদ্র্য বেশি এমন ১০টি জেলার মধ্যে ৫টিই রংপুর বিভাগের। হতদরিদ্র ও অসহায়  মানুষগুলো অল্প খরচে ভালো চিকিৎসার আশায় ভিড় জমান হাসপাতালে। কিন্তু এসেই পড়েন বিপাকে। দালালের খপ্পরে পড়ে ৩০ টাকা ভর্তি ফির পরিবর্তে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয় রোগীর আত্মীয়স্বজনদের। মেডিকেলের সহকারী অধ্যাপকও নিজের মায়ের চিকিৎসা নিতে গিয়ে দালালদের হাত থেকে রক্ষা পাননি। নানা জটিলতায়, ভর্তি হলেও, সুচিকিৎসা মেলে না;  অধিকাংশ যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ সার্ভিস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শত শত আপারেশনের রোগী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে দেখা যায়, হাসপাতালের ৫৩৭টি যন্ত্রই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।


কোনো কোনো যন্ত্র ছোটখাটো ত্রুটির কারণে দিনের পর দিন অচল হয়ে পড়ে আছে। প্রতিস্থাপন দূর স্থান, মেরামতেরও তাগিদ কেউ অনুভব করেন নাএমন সরঞ্জামের মধ্যে এমআরআই বা সিটি স্ক্যানের মতো বড় যন্ত্র যেমন আছে, পালস অক্সিমিটারের মতো ছোট যন্ত্রও আছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নিয়ে আসা আন্তর্জাতিক মানের এ যন্ত্রগুলো অযথাই পড়ে আছে। যন্ত্রগুলো ভালো করার কোনো নাম-গন্ধ নেই। দারিদ্র্যপীড়িত  অঞ্চলে বসবাসকারী আর্থিকভাবে অসচ্ছল রোগীগুলো  হাসপাতালে অনেক আশা নিয়ে এলেও নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এ অঞ্চলের খুব কম মানুষের পক্ষে বেসরকারি ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেবা নেওয়া সম্ভব। কেননা, বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠানে গিয়ে রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা অনেক ব্যয়বহুল। তারপরও বাঁচার তাগিদে অনেকেই বাধ্য হয়ে গরু-ছাগল বিক্রি করে আশ্রয় নিচ্ছেন এসব প্রাইভেট ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের অন্যতম দায়িত্ব হলেও, রংপুর সিটি করপোরেশনের এ নিয়ে কোনো হেলদোল নেই।


আমাদের মনে রাখা উচিত চিকিৎসা সংবিধানস্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার। সব নাগরিকের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। রংপুর বিভাগের প্রায় দুই কোটি মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণে রসিক মেয়র থেকে শুরু করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। 

 

শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর