দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথা

সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, সারা পৃথিবী তথা উন্নত, মধ্যম আয়ের দেশ, এমনকি অনুন্নত দেশেও কোমর ব্যথার রোগীর সংখ্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। কোমর ব্যথা আবার তিন ধরনের– স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণত স্বল্পমেয়াদি ব্যথা দ্রুত ভালো হয়ে যায়। মাঝারি ব্যথা ভালো হতে সময় লাগে এক থেকে দুই মাস। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা তিন মাস, এমনকি বছরের পর বছর চলতে থাকে।

দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার কারণ কী?

প্রচলিত ধারণা অনুসারে, ডিস্ক প্রল্যাপ্স বা পিএলআইডি অথবা হাড় ক্ষয় বা স্পনডোলাইসিসের কারণে কোমর ব্যথা হয়। বাস্তবে এমআরআই বা এক্স-রে ফিল্ম ও রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ ধরনের রোগীদের হাড় বা হাড়ের ডিস্কে উল্লেখযোগ্য কোনো সমস্যা নেই। বলা
হয়ে থাকে, এই ব্যথার উৎপত্তি অজ্ঞাত। বিজ্ঞানীরা এ ব্যথার নাম দিয়েছেন নন-স্পেসিফিক ক্রনিক লো ব্যাক পেইন, সংক্ষেপে এনএসসিএলবিপি।

কীভাবে রোগ নির্ণয় করা যায়?

এনএসসিএল বিপি সমস্যার কোনো কারণ নেই বলা হলেও আদতে এ ব্যথার উৎস নানামুখী। মানসিক ও আর্থসামাজিক অবস্থা থেকে শুরু করে সামান্য হাড় ক্ষয় বা নিম্নমাত্রার পিএলআইডি ইত্যাদির সমন্বিত ফলাফল হতে পারে এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথা।

কী চিকিৎসা রয়েছে?

দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথা সারাতে অনেকে বছরের পর বছর নানা ধরনের ওষুধ সেবন করছেন; কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল আসছে না। বেশির ভাগ গবেষণা থেকেও একই ধরনের ধারণা পাওয়া যায়। দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথায় ওষুধ তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। একইভাবে সাধারণ ফিজিওথেরাপি, যেমন– শর্ট ওয়েভ, মাইক্রোওয়েভ, ট্র্যাকশন বা আলট্রাসাউন্ড দিয়েও ভালো ফল পাওয়া যায় না। এ ধরনের রোগীর চিকিৎসার শুরুতেই দেখে নিতে হবে রোগীর কোনো রেড বা ইয়েলো ফ্ল্যাগ সাইন আছে কিনা। রোগীর কোনো জটিল রোগ, যেমন– ক্যান্সার আছে কিনা। যদি এ ধরনের সমস্যা না থাকে, তবে তাকে মাল্টিডিসিপ্লিনারি চিকিৎসা দিতে হবে। কিন্তু চিকিৎসা হতে হবে টার্গেটেড বা সুনির্দিষ্ট। তবেই ভালো ফল পাওয়া যাবে।

পরামর্শ: প্রথমত, ক্রনিক লো ব্যাক পেইনের রোগীরা অর্থোটিকস বা কোমরের বেল্ট ব্যবহার করবেন না। পূর্ণ বিশ্রামে থাকারও প্রয়োজন নেই, উপরন্তু যতটা সম্ভব কর্মচঞ্চল থাকবেন, নিয়মিত হাঁটবেন, সাঁতার কাটার সুযোগ থাকলে সাঁতার কাটবেন।

লেখক : কোমর ব্যথাবিষয়ক গবেষক, লা ট্রোব ইউনিভার্সিটি, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া এবং বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাব বিভাগ উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।