ডেঙ্গু জ্বরে থাকুন সতর্ক

প্রতিকী ছবি
অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ
প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪ | ২১:০৮
ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণ বাড়ছে। মূলত এডিস মশার কারণেই ছড়ায় ডেঙ্গু। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক থাকতে হবে।
লক্ষণ
এ জ্বরে আক্রান্ত হলে রোগীর জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনের অংশে ব্যথা, পেটে ব্যথা, শরীরের পেছনের অংশে ব্যথা অনুভূত হয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীর বমি হওয়া, খাওয়ায় অরুচিসহ শরীরে প্রচণ্ড ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। সেই সঙ্গে লাল চাকাসহ দাগ, দাঁত মাজার সময় রক্ত পড়া ও পায়খানার রং কালো হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মস্তিষ্কেও রক্তক্ষরণ হয়। এসব সমস্যা দেখা দেওয়ার আগেই রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া উচিত।
ডেঙ্গু হেমারেজিক জ্বর বোঝার উপায়
রক্ত পরীক্ষায় যদি প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যায়, তবে বুঝতে হবে এটি হেমারেজিক বা রক্তক্ষরণী জ্বর। রোগী অজ্ঞান হওয়া, শকে চলে যাওয়া, অবসন্নতা, অস্থিরতা, তীব্র পেটব্যথা, রক্তচাপ কমে যাওয়া, হাত-পা ঠান্ডা হওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া– এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
ডেঙ্গু রোগীর রক্তের পরীক্ষা
রোগ প্রকাশের পাঁচ দিন পর রক্তে অ্যান্টিবডি উপস্থিতি নির্ণয়ের মাধ্যমে ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়। রক্তের আইজিজি অ্যান্টিবডি শনাক্ত হলে বুঝে নিতে হবে এ রোগ আগেই দেখা দিয়েছিল, তবে এখন ভাইরাস নেই। আর আইজিএম শনাক্ত হলে ধরে নিতে হবে, ভাইরাস শরীরে বিচরণ করছে। প্লাটিলেট কাউন্ট চার বা পাঁচ দিন পর কমতে শুরু করে। তাই জ্বর শুরুর পাঁচ বা ছয় দিন পর রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। রোগ শনাক্ত হলে রক্তের রুটিন টেস্টসহ প্লাটিলেট পরীক্ষা, রোগ ব্যবস্থাপনার জন্য হেমাটোক্রিট পরীক্ষা করে নেওয়াটা জরুরি। প্লাটিলেটের সংখ্যা ২০ হাজারের কম হলে শরীরে মারাত্মক রক্তক্ষরণ দেখা দেয়।
ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা
অধিকাংশ ডেঙ্গু জ্বরই আতঙ্কিত হওয়ার মতো ভয়াবহ নয়। সাত দিনের মধ্যেই তা সেরে যায়। শুধু প্রয়োজন যথেষ্ট পরিমাণে পানি, তরল খাবার আর বিশ্রামের। সঙ্গে জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল। তবে রোগীকে ব্যথানাশক হিসেবে এসপিরিন বা ক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধ দেওয়া যাবে না। এতে রোগীর রক্তক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে। হেমারেজিক বা রক্তক্ষয়ী ডেঙ্গু জ্বরে প্লাটিলেট আর ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে দরকার রক্তরস বা প্লাজমা।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়
নিজের ঘর, বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখা।
ফুলের টব, পুরোনো ক্যান, পাত্র, গামলা ইত্যাদিতে চার-পাঁচ দিন পানি জমতে না দেওয়া।
এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করা।
ডেঙ্গু জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শমতো চিকিৎসা নিন এবং সুস্থ থাকুন।
লেখক : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
- বিষয় :
- ডেঙ্গু জ্বর