ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ডায়াবেটিস সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে প্রয়োজন সচেতনতা

ডায়াবেটিস সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে প্রয়োজন সচেতনতা

প্রতীকী ছবি

 ডা. এ হাসনাত শাহীন

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৪ | ০১:৩২

১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ডায়াবেটিস– সুস্বাস্থ্যই হোক আমাদের অঙ্গীকার’। অনিরাময়যোগ্য এ রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো উপসর্গ না থাকলেও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ধীরে ধীরে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতিসাধন করে, যা হতে পারে মারাত্মক।

দ্রুত নগরায়ণ ও পরিবর্তিত জীবনযাপনের কারণে সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্তের হার বেড়েই চলছে। বিশ্ব ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ) ২০২১ সালের তথ্যমতে, বিশ্বে পূর্ণবয়স্ক মানুষের ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা ৫০  কোটির ওপরে। এদের প্রায় ৮০ শতাংশ মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশের, যেখানে খুব দ্রুত খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ঘটছে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ২৫ শতাংশের রয়েছে এ ঘাতক ব্যাধি, যাদের একটা বিশাল অংশই জানেন না যে তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এ ছাড়া ১০০ জনের মধ্যে ২০ জন অন্তঃসত্ত্বা নারীই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, যাদের ৬৫ শতাংশই পরবর্তীকালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। শীর্ষ ১০ ডায়াবেটিস সংখ্যাধিক্যের দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অষ্টম স্থানে রয়েছে।

ওজন আধিক্য, কায়িক শ্রমের ঘাটতি, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, কোলেস্টেরল আধিক্য, উচ্চ রক্তচাপ, পারিবারিক ইতিহাস, চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তি এদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি। ঝুঁকিপূর্ণদের অবশ্যই ডায়াবেটিস নির্ণয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা জরুরি। স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস ও কায়িক পরিশ্রমের পাশাপাশি নিয়মিত রক্তের শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ বা ইনসুলিন গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সেই সঙ্গে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে বিভিন্ন রুটিন পরীক্ষা, যেমন– প্রস্রাবে অ্যালবুমিনের উপস্থিতি, সিরাম ক্রিয়েটিনিন, তিন মাসের গড় ডায়াবেটিসের মাত্রা, লিপিড প্রোফাইল, ইসিজি প্রভৃতি পরীক্ষা করতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় ডায়াবেটিসের জটিলতা শনাক্ত হলে অনেকাংশেই মারাত্মক ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। 

ডায়াবেটিসের কারণ, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও প্রতিরোধে কার্যকর স্বাস্থ্য-শিক্ষার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ তথা সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। চটকদার বিজ্ঞাপন আর কথার মারপ্যাঁচে পরে বিজ্ঞানসম্মত নয় এমন খাদ্যাভ্যাস (যেমন– কিটো ডায়েট), মরিঙ্গাসহ বিভিন্ন হারবাল ওষুধের ব্যবহার, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন অথবা অনিয়মিতভাবে চিকিৎসা গ্রহণ এসব কিছুই আপনাকে বিশাল ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসা একটি সমন্বিত, সামাজিক পদক্ষেপ। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সবাইকে সচেতনভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক : ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ও হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ, কনসালট্যান্ট, ইনস্টিটিউট অব ওমেন অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ ও এডব্লিউসিএইচ।

ইমপালস হাসপাতাল, তেজগাঁও, ঢাকা।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×