এলপিজির পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতাদের নিবন্ধনের সুপারিশ
.
মেসবাহুল হক
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ | ১৮:২১ | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:২১
সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডার। সংশ্লিষ্ট পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতারা নিবন্ধনের আওতায় না থাকায় এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তাই চার হাজারের বেশি পরিবেশক এবং প্রায় ৫০ হাজার খুচরা বিক্রেতাকে নিবন্ধনের আওতায় আনা দরকার।
সম্প্রতি এলপিজির দাম নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন আয়োজিত এক বৈঠকে এসব কথা উঠে আসে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই বৈঠকে এলপিজির সরবরাহ চেইন ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিযোগিতা কমিশন।
সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও খুচরা পর্যায়ে ভোক্তাদের কাছ থেকে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা কেন বেশি নেওয়া হচ্ছে, তার কারণ অনুসন্ধানে এ খাতের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকটির আয়োজন করে প্রতিযোগিতা কমিশন। কমিশনের চেয়ারপারসন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী এতে সভাপতিত্ব করেন। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), এলপিজি অপারেটর, পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতাদের প্রতিনিধিরা।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, খুচরা বিক্রেতাদের পক্ষে এমটিই এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি বলেন, গত ২ অক্টোবর একটি ৪৫ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ভোক্তা পর্যায়ে ৫ হাজার ১১৩ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু পরিবেশকদের এলপিজি অপারেটরদের কাছ থেকে প্রতি সিলিন্ডার কিনতে হয় ৪ হাজার ৮০৯ টাকায়। এর সঙ্গে পরিবহন ব্যয় ১০০ টাকা এবং আনলোড ব্যয় ১০ টাকা যুক্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে অপারেটরদের কাছ থেকে পরিবেশককে একটি ৪৫ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার কিনতে হয় ৪ হাজার ৯১৯ টাকায়। এরপর পরিবেশক সেই সিলিন্ডার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ৫ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করেন। একইভাবে গত সেপ্টেম্বরে ৪৫ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম সরকার ভোক্তা পর্যায়ে ৪ হাজার ৮১৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও অপারেটরদের কাছ থেকে পরিবেশকদেরই কিনতে হয়েছে ৪ হাজার ৯০০ টাকায়। অপারেটর পর্যায়ে বেশি দাম হওয়ার কারণে খুচরা পর্যায়ে প্রতি সিলিন্ডার স্বাভাবিকভাবেই সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হয় না।
বৈঠকে বিইআরসি প্রতিনিধি জানান, গত সেপ্টেম্বরে একটি ৪৫ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রিতে অপারেটর পর্যায়ে দর ছিল ৪ হাজার ৪৫৮ টাকা। সরকার নির্ধারিত এ দরের মধ্যে ভ্যাট ও ট্যাক্স অন্তর্ভুক্ত। অপারেটর থেকে পরিবেশক পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত লভ্যাংশ ১৮৮ টাকা। অর্থাৎ অপারেটর পর্যায়ে নির্ধারিত ৪ হাজার ৪৫৮ টাকার সঙ্গে লভ্যাংশ ১৮৮ টাকা যুক্ত হয়ে পরিবেশক পর্যায়ে প্রতিটি সিলিন্ডার বিক্রি হওয়ার কথা ৪ হাজার ৬৪৬ টাকায়। পরে এ রেটের সঙ্গে খুচরা বিক্রেতার জন্য লভ্যাংশ ১৬৯ টাকা যুক্ত হয়ে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি হওয়ার কথা ছিল ৪ হাজার ৮১৫ টাকায়।
ক্যাবের প্রতিনিধি বলেন, এলপি গ্যাস সরকার নির্ধারিত মূল্যে ভোক্তারা কখনোই পায়নি। এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রির ক্ষেত্রে অপারেটর থেকে পরিবেশক এবং পরিবেশক থেকে খুচরা পর্যায়ে তিনটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। ধাপে ধাপে দাম বাড়ায় ভোক্তাকে বাড়তি দাম গুনতে হয়। তা ছাড়া ২০২১ সালের পরে এলপিজির দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিইআরসি কোনো গণশুনানি করেনি।
এলপিজি অপারেটর, পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতাদের নিবন্ধনের বিষয়ে প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী জানতে চাইলে বিইআরসির প্রতিনিধি বৈঠকে জানান, অপারেটরদের সবাই লাইসেন্স নিয়েছেন। কিন্তু পরিবেশকদের মধ্যে মাত্র একজনের লাইসেন্স থাকলেও খুচরা বিক্রেতার কেউই নিবন্ধনের আওতায় নেই।
বৈঠকে জানানো হয়, সারাদেশে বর্তমানে চার হাজারের বেশি পরিবেশক এবং ৪০ থেকে ৫০ হাজার খুচরা বিক্রেতা রয়েছে। এসব পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতার কোনো লাইসেন্স না থাকায় তাদের যথাযথ জবাবদিহিতার আওতায় আনা কঠিন হয়। এ ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর না করতে পারার অন্যতম কারণ হতে পারে এটি। তা ছাড়া অপারেটর পর্যায়ে কেন বাড়তি দাম রাখা হয় তাও জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।
সুপারিশে বলা হয়, অপারেটর পর্যায়ে এলপিজির নির্ধারিত বিক্রয়মূল্য নিশ্চিত করতে বিইআরসি এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ব্যবস্থা নিতে পারে। পাশাপাশি বিইআরসি পরিবেশক থেকে খুচরা বিক্রেতা সবাইকে নিবন্ধনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নিতে পারে। একই সঙ্গে সংস্থাটি মূল্য নির্ধারণের আগে গণশুনানির আয়োজন করতে পারে।