সংকটে পাট খাত রপ্তানি কমছেই

আবু হেনা মুহিব
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ০৪:৫০
সংকট থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না রপ্তানিমুখী পাট খাত। কাঁচা পাট, পাটের সুতা, ছালা-বস্তা কিংবা পাটপণ্য– সব ক্ষেত্রে রপ্তানি কমছেই। ছয় বছর ধরে একরকম অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এককালের প্রধান রপ্তানি পণ্য সোনালি আঁশ। সরকারি পাটকল বন্ধ হওয়ার পর প্রতিযোগিতা কমে এলেও রপ্তানিতে পতন ঠেকানো যায়নি। এ পরিস্থিতিকে রপ্তানি বাজার হিসেবে ভারতের ওপর অতি নির্ভরতার মাশুল হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। পাটপণ্যে মোট রপ্তানির ৬০ শতাংশই যায় ভারতে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদন বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধ, অর্থাৎ গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ কমেছে। লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় কম হয়েছে ১২ শতাংশ। মোট ৪৩ কোটি ৬১ লাখ ডলারের পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে এটি ছিল ৫৯ কোটি ডলার।
২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের পাটপণ্য আমদানিতে ভারত অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের পর থেকেই রপ্তানি কমতে শুরু করে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি টন পাটপণ্য আমদানিতে ১৯ থেকে ৩৫২ ডলার পর্যন্ত শুল্ক ধরা হয়। এ সিদ্ধান্তের আগে বা পরে বিশ্বের আর কোথাও ভারতের বিকল্প বাজার গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। গত বছর অ্যান্টি ডাম্পিংয়ের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়। ২০২৭ সাল পর্যন্ত তা কার্যকর থাকবে।
ইপিবির তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা যায়, অ্যান্টি-ডাম্পিং কার্যকর হওয়ার আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ৪২ হাজার টন পাটপণ্য রপ্তানি হয় ভারতে। পরের বছর তা ৮০ হাজার টনে নেমে আসে। এর পরের বছরগুলোতে রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে আরও কমতে থাকে।
ক্রমাগত বিপর্যয়ের মুখে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক কারখানা। বেকার হয়েছেন শ্রমিক। বেসরকারি পাটকল মালিকদের সংগঠন জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ) সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় বছরে ৬৮টি পাটকল বন্ধ হয়ে গেছে। সংগঠনের সদস্য পাটকলের সংখ্যা ছিল ২০২। এখন ১৩২টি উৎপাদনে আছে। চালু থাকা পাটকলেরও দুই-তৃতীয়াংশ তাঁত বন্ধ রয়েছে।
পাটের এ পরিস্থিতির কারণ জানতে চাইলে বিজেএমএ মহাসচিব আব্দুল বারেক খান সমকালকে বলেন, ভারতের অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কারোপের কারণেই পাট খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। গত ছয় বছরে কেন ভারতের বিকল্প বাজার গড়ে তোলা সম্ভব হলো না– এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে সরকারের পক্ষ থেকে নীতি সহায়তা কিংবা আর্থিক সহায়তা কোনোটাই পাচ্ছে না পাটপণ্য। বহুমুখী পাটপণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তার ঘোষণা আছে সরকারের। কিন্তু এই অর্থ পেতেও নতুন করে জটিলতা তৈরি করে রাখা হয়েছে। হাট থেকে কাঁচা পাট সংগ্রহে ২ শতাংশ ভ্যাট ধরা হয়েছে। পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষণায় উদ্যোক্তারা অনেক খুশি হয়েছিলেন। পরে দেখা গেল, শুধু মাঠের পাটে এ সুবিধা, পাটপণ্যের জন্য নয়। আবার পাটকে বর্ষপণ্য ঘোষণা করা হলো গত বছর। ওই ঘোষণা পর্যন্তই সার। এ রকম বৈরী পরিস্থিতির মুখে রয়েছে পাট খাত।
পাট খাতের মধ্যে সবচেয়ে বড় রপ্তানি পণ্য পাটের সুতা। ইপিবির প্রতিবেদন বলছে, গত ছয় মাসে পণ্যটির রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ৩ দশমিক ১৪ শতাংশেরও বেশি। ২৬ কোটি ডলারের রপ্তানি ২৫ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। তবে সবচেয়ে বেশি ৩২ শতাংশ হারে কমেছে কাঁচা পাটের রপ্তানি। গত অর্থবছরের একই সময়ের ১১ কোটি ডলারের কাঁচা পাটের রপ্তানি মাত্র ৭ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। পাটের ছালা-বস্তার রপ্তানি কমেছে ২০ শতাংশ। ৭ কোটি ডলারের রপ্তানি ৫ কোটি ৬৬ লাখ ডলারে নেমে এসেছে।