দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে বর্তমানে দুর্নীতি, অদক্ষ প্রশাসন ও অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা এই ত্রয়ী চ্যালেঞ্জ প্রধান। এই সমস্যা বড় ব্যবসায়ীদের তুলনায় ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য আরও বেশি। পাশাপাশি করোনার পরে যে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হচ্ছে তা বৈষম্যমূলকভাবে হচ্ছে।

বুধবার সকালে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ-২০২১: উদ্যোক্তা জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে। ওই জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীরা এমন মতামত জানিয়েছেন বলে জানান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তিনি বলেন, ‘৬৮ শতাংশ ব্যবসায়ী দুর্নীতিকে ব্যবসার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন অদক্ষ প্রশাসন ও অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা তাদের জন্য প্রতিবন্ধকতা। আগে দুর্নীতি অনেক ওপরে থাকতো, এখন এই তিনটি সমস্যাই প্রায় কাছাকাছি জায়গায় বিবেচিত হচ্ছে। এই তিনটি বিষয়ের সঙ্গে ব্যবসার ব্যয় বৃদ্ধি জতি। দক্ষ মানব সম্পদের অভাবে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।’

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘দুর্নীতির কারণে বড় ব্যবসায়ীরা যত বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন তার চেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। ৫২ শতাংশ বড় ব্যবসায়ী জানিয়েছেন দুর্নীতি তাদের কাছে ব্যবসার প্রধান প্রতিবন্ধকতা। আর ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ১০০ ভাগ জানিয়েছে দুর্নীতি তাদের জন্য প্রধান প্রতিবন্ধকতা। অর্থাৎ এ থেকে বোঝা যায়- দেশে নীতি সুবিধা বাস্তবায়নে বৈষম্য রয়েছে। ফলে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় টিকে থাকার চ্যালেঞ্জও বেশি।’

আর ৪৫ শতাংশ ব্যবসায়ী অবকাঠামো দুর্বলতাকে ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সিপিডি বলছে, এক সময় অবকাঠামো দুর্বলতা এক নম্বর সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করতেন। এখন এটি নেমে ৪ নম্বরে এসেছে। এর অর্থ দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘করোনা পরবর্তী পুনরুদ্ধার হচ্ছে। তবে যে পুনরুদ্ধার দেখা যাচ্ছে তা আংশিক। জরিপে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পুরোপুরি পুনরুদ্ধারে কমপক্ষে তিন বছর সময় লাগবে। এই পুনরুদ্বার সহজ ও টেকসই করার জন্য ব্যবসায়ীরা দুর্নীতি বন্ধ, কর হার কমানো, অর্থায়নের সহজসভ্যতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি টিকা দেওয়াকে গুরুত্ব দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘করোনার প্রেক্ষিতে নতুন ব্যবসার সুযোগ দেখতে পাচ্ছেন ব্যবসয়ীরা। বিশেষ করে ডিজিটাল ফাইন্যান্স সেবা, দক্ষতা উন্নয়ন, তথ্য প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমতা, ডাটা ম্যানেজমেন্ট, রিসাইক্লিং, ইলেকট্রিক গাসিহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসার সম্ভাবনা দেখছেন। তবে আগামী দুই বছর বিশ্ব অর্থনীতি কেমন যাবে তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছ। কারণ বিশ্ব বাজারে চাহিদা কমে গেলে বা ঋণ সংকট দেখা দিলে দেশের ব্যবসাও সংকুচিত হবে।’

দেশের বিভিন্ন খাতের ৭৩ জন ব্যবসায়ীরা মতামতের ভিত্তিতে এ জরিপটি করা হয়েছে। মূলত ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের গ্লোবাল কমপিটিটিভ রিপোর্টেও বা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রতিবেদনের জন্য এ জরিপ করা হয়ে থাকে। ওয়াল্ড ইকোনোমিক ফোরাম এবছর তাদের প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা বা কোনো র‌্যাঙ্কিং ছাড়াই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করলো সিপিডি। ২০২১ সালে এপ্রিল থেকে জুলাই সময়ে এ জরিপটি করা হয়। এতে প্রধানত অবকাঠামো, প্রতিষ্ঠান, নিরাপত্তা, আর্থিক বিনিয়োগ, মানব সম্পদ, কাজের পরিবেশ, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও ঝুঁকি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। ৩৯টি বড়, ১৭টি মাঝারি, ১২টি ছোট এবং ৫টি ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়।

ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, জরিপে ব্যবসার পরিবেশ, অবকাঠামো, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, সুশাসন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা দেখা হয়েছে।