সিলিকন ভ্যালির পথপ্রদর্শক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ গর্ডন মুর (৯৪) মারা গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইতে  নিজ বাড়িতে ইন্টেলের এ সহপ্রতিষ্ঠাতা মৃত্যুবরণ করেন। তথ্যপ্রযুক্তির সূতিকাগার হিসেবে খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির গোড়াপত্তনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি।

১৯৬৫ সালে মুর এক গবেষণাপত্র লেখেন, যেখানে সময়ের সঙ্গে কম্পিউটারের আকার ছোট হওয়ার পাশাপাশি শক্তিশালী হওয়ার ধারণাটি উঠে আসে। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন, প্রতি বছর একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটে আঁটানো ট্রানজিস্টরের সংখ্যা দ্বিগুণ হতে থাকবে। এর ফলে তুলনামূলক ছোট ও শক্তিশালী চিপ ডিজাইন উৎপাদিত হবে। ১৯৭৫ সাল নাগাদ নিজের অনুমান কিছুটা সংশোধন করে প্রতি দুই বছরে ট্রানজিস্টর সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার কথা বলেন তিনি। মুরের নিবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার পরে মেমোরি চিপগুলো আরও দক্ষ এবং সাশ্রয়ী হয়ে ওঠে। তাঁর এই অনুমান পরবর্তী সময়ে ‘‘মুর’স ল’’ নামে পরিচিতি পায়। এই ‘আইন’ কম্পিউটার প্রসেসর শিল্পের ভিত্তি হয়ে ওঠে এবং কম্পিউটার বিপ্লবকে প্রভাবিত করে।

গর্ডন মুর ১৯২৯ সালের ৩ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে রসায়নে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে একই বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। মুর জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির ফলিত পদার্থবিদ্যা গবেষণাগারে পোস্টডক্টরাল ফেলো হিসেবে গবেষণাও করেন। ১৯৫০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বেটি আইরিন হুইটেকারের সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন মুর। এ দম্পতির দুই ছেলেসন্তান রয়েছে।

পিএইচডি অর্জনের পর মুর বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর ট্রানজিস্টর এবং ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফেয়ারচাইল্ড সেমিকন্ডাক্টর ল্যাবরেটরিতে যোগ দেন। ফেয়ারচাইল্ডের সম্প্রসারণ সান ফ্রান্সিসকোর দক্ষিণ উপদ্বীপকে সিলিকন ভ্যালি হিসেবে রূপান্তরের ভিত্তি তৈরি করে। ১৯৬৮ সালে মুর এবং রবার্ট নয়েস ফেয়ারচাইল্ড ছেড়ে ইন্টেল চালু করেন। মুরের কাজ বিশ্বজুড়ে উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তিগত অগ্রগতি চালাতে সাহায্য করেছে। মুরের অবদান ব্যক্তিগত কম্পিউটার থেকে শুরু করে অ্যাপল, ফেসবুক এবং গুগলের আবির্ভাবের পথ করে দিয়েছে। স্ত্রী বেটি মুরের সঙ্গে যৌথভাবে ‘গর্ডন এবং বেটি মুর ফাউন্ডেশন’ নামে পরিবেশের সুরক্ষায় অলাভজনক সংস্থা চালু করেন। ২০০২ সালে মুর তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশের কাছ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘মেডেল অব ফ্রিডম’ পুরস্কার পেয়েছিলেন।

ইন্টেল করপোরেশন টুইটবার্তায় তাঁর সহপ্রতিষ্ঠাতাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছে, ‘আমরা একজন স্বপ্নদর্শীকে হারিয়েছি।’ ইন্টেলের বর্তমান সিইও প্যাট গেলসিঞ্জার বলেছেন, গর্ডন মুর তাঁর অন্তর্দৃষ্টি এবং দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে প্রযুক্তি শিল্পকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এবং কয়েক দশক ধরে প্রযুক্তিবিদ এবং উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি এমন একটি উত্তরাধিকার রেখে গেছেন, যা গ্রহের প্রত্যেক মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে। তাঁর স্মৃতি বেঁচে থাকবে।