- শিল্প-বাণিজ্য
- বাজেটে পোশাক খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই: বিজিএমইএ
বাজেটে পোশাক খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই: বিজিএমইএ
উৎসে কর ০.৫০% বহাল রাখার দাবি

প্রস্তাবিত বাজেটে রপ্তানিমুখী বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটি বলেছে, পোশাক শিল্পের চলমান সংকট মোকাবিলায় আগামী পাঁচ বছরের জন্য উৎসে কর ০.৫০ শতাংশ বহাল রাখা জরুরি। একই সঙ্গে নগদ সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহার করার আবেদন জানিয়েছে বিজিএমইএ।
শুক্রবার রাজধানীতে বাজেট বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান। এ সময় সংগঠনের সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, কভিডের কারণে পোশাক শিল্পে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে উদ্যোক্তারা হিমশিম খাচ্ছেন। তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে মন্দা চলছে। খুচরা বিক্রয়ে চাহিদা কমেছে। অন্যদিকে, জ্বালানি তেলসহ কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। রপ্তানি আয় কমতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, এ মুহূর্তে রপ্তানি খাতগুলোকে সুরক্ষা দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তবে এবারের বাজেট বক্তব্যে অন্যান্য বছরের মতো রপ্তানি খাতগুলোর জন্য প্রণোদনা বাবদ অর্থ বরাদ্দের কোনো ঘোষণা আসেনি। অবশ্য বাজেট প্রস্তাবনায় বিষয়গুলো উল্লেখ না থাকলেও বিস্তারিত কাঠামোতে এগুলো সন্নিবেশিত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ফারুক হাসান বলেন, নন-কটন খাতে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগ ও রপ্তানি উৎসাহিত করতে এবং প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে নন-কটন পোশাক রপ্তানির ওপর ১০ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু বাজেটে তা রাখা হয়নি। এটি বিবেচনার জন্য আবারও সরকারকে অনুরোধ করেন তিনি। পাশাপাশি নন-কটন বস্ত্র ও পোশাক খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আনতে বিশেষ স্কিম গ্রহণের সুপারিশ করেন তিনি। তাঁর মতে, এর মাধ্যমে ২০২৯ পরবর্তী সময়ে ‘দুই ধাপ’ উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রতিপালন করে জিএসপি প্লাসের জন্য প্রস্তুত হওয়া যাবে।
তিনি বলেন, ধারাবাহিকভাবে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লেও শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে না। বারবার বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন চালিয়ে যেতে কারখানায় জেনেরেটর চালাতে হয়। আর জেনারেটরে তেল পোড়ানো হচ্ছে। এতে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে। পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কারখানায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
তাঁর মতে, বাজেটে ১৩টি পেট্রোলিয়াম জাত পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূসক প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দামে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি এলএনজি ও এলপিজির আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে। এতে শিল্পে উৎপাদন খরচ কমবে ও প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়বে।
বাজেটে কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিজিএমইএ। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, পোশাক শিল্পের অ্যাসেসমেন্টের সময় কর আরোপকালে অন্যান্য আয় এবং বিবিধ খরচকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে গণ্য করে ৩০ শতাংশ কর আরোপ না করে করপোরেট করহার ১২ শতাংশ করতে হবে। পোশাক রপ্তানিকারকদের ইআরকিউ তহবিল থেকে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য পরিশোধিত ফি হতে উৎসে আয়কর কর্তনের হার ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জ্বালানি সংকট নিরসনে সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি শিল্প খাতে ব্যবহারের জন্য উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করছে। কিন্তু সোলার পিভি সিস্টেম শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের ক্ষেত্রে উচ্চহারে শুল্ক আরোপের কারণে উদ্যোক্তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপন ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য সোলার পিভি সিস্টেমের সরঞ্জাম আমদানিতে ১ শতাংশ হারে শুল্ক রেয়াত প্রদান এবং বন্ড লাইসেন্স নবায়নের মেয়াদ দুই বছরের পরিবর্তে তিন বছর করতে হবে। একই সঙ্গে কাঁচামাল আমদানিতে এইচএস কোড-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের বিষয়টি বিবেচনা করা জরুরি। আলাপ-আলোচনা করে অর্থনীতির প্রয়োজনে বাজেটে আরও কিছু পরিবর্তন করা সম্ভব বলে জানান বিজিএমইএর সভাপতি।
বাজেটে কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বাজেটে সর্বজনীন পেনশনের ব্যবস্থা রাখা, করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে বিশেষ বরাদ্দ রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রপ্তানিমুখী শিল্পে রপ্তানি প্রণোদনা, কর অব্যাহতি, বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর গুরুত্ব ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমদানি-রপ্তানি কাস্টম অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থনীতিতে এসব সিদ্ধান্ত ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমেরিকার দেওয়া ভিসা নীতি রপ্তানিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে কাঁচামাল আমদানি করতে হলে ডলার লাগবেই। ডলার মজুত বাড়াতে হলে রপ্তানি বাড়ানোর বিকল্প নেই। এ সময় কর আদায়ের জন্য এনবিআর কর্মকর্তাদের আরও ব্যবসাবান্ধব হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
/এসআর/
মন্তব্য করুন