ঢাকা রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

ভারতকে টোপ ও হুমকিতে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র

ভারতকে টোপ ও হুমকিতে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র

জো বাইডেন ও নরেন্দ্র মোদি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২২ | ২২:৩৪

ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমাদের চাপে থাকা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সোমবার এ সংলাপের পর ওয়াশিংটনে দুই দেশের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়। এসব আলোচনায় ভবিষ্যতে দিল্লিকে পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন নেতারা। এ সময় রাশিয়া থেকে অতিরিক্ত তেল না কেনার বিষয়ে সতর্ক করা হয়। পাশাপাশি ভারতে ক্রমবর্ধমান মানবাধিকার লঙ্ঘন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে মস্কোর ঘনিষ্ঠ মিত্র দিল্লিকে 'টোপ' ও 'হুমকি'তে রেখেছে ওয়াশিংটন।

ইউক্রেনে আক্রমণের জন্য এখন পর্যন্ত রাশিয়ার সমালোচনা করেনি ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের সব মিত্র দেশ মস্কোর বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ জারি করলেও দিল্লির পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। উল্টো দেশটির কাছ থেকে তেল ও অস্ত্র কেনা অব্যাহত রেখেছে ভারত। বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে চাপে রেখেছে পশ্চিমারা। এমনকি এ ইস্যুতে কোয়াডের এই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক 'নড়বড়ে' বলেও মন্তব্য করেন বাইডেন।

বৈঠকে মোদি ও বাইডেন চলমান দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এবং দক্ষিণ এশিয়া, ইন্দো-প্রশান্ত ও ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন। এ সময় রাশিয়ার হামলা ইস্যুতে নয়াদিল্লির 'নিরপেক্ষ অবস্থান'ও ব্যাখ্যা করেন মোদি। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বাইডেনকে বলেন, ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক স্তরে বুচায় হত্যাযজ্ঞের নিন্দা ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে দিল্লি। বাইডেন বলেন, দুই দেশ ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রভাব মোকাবিলায় ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

এ বৈঠকের সময় বাইডেনের সঙ্গে ছিলেন ওয়াশিংটন সফররত ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পরে পেন্টাগনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজনাথ সিং। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ভারত ও কোয়াডের অংশীদারদের সঙ্গে সহায়তা বাড়াতে সমন্বয়, মহামারি-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। এ সময় বিশেষ করে চীনের 'সীমান্ত আগ্রাসনে' ভারতের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অস্টিন।

এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, বাইডেন ও মোদির মধ্যে ইউক্রেন ইস্যু, বিশেষ করে রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানির বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা হয়েছে। তবে এ সময় দিল্লির কাছে মস্কোর জ্বালানি আমদানির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দাবি করেনি ওয়াশিংটন। তবে টু প্লাস টু বৈঠকের পর ব্লিংকেন বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের অনুরোধ জানিয়েছে যেন রাশিয়া থেকে কোনোরকম জ্বালানি কেনা না হয়। ভারতকেও অতিরিক্ত রুশ তেল না কেনার আহ্বান জানানো হয়েছে।' এর প্রতিক্রিয়ায় জয়শঙ্কর বলেন, 'ভারতকে সতর্ক করার আগে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইউরোপের মার্কিন ঘনিষ্ঠদের দিকে নজর দেওয়া।' এদিকে, ভারতে কিছু কর্মকর্তার দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেন, এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র।

এ পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া বৈঠকে দিল্লিকে সহায়তার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি হুমকির সুরও শোনা গেছে। শেষে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'আগামী ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর মেয়াদে জি২০-এর প্রেসিডেন্ট হচ্ছে ভারত- এ সময় দেশটিতে পূর্ণ সমর্থন দেবে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ পুনর্গঠন করে ভারতের স্থায়ী সদস্য হওয়া ও নিউক্লিয়ার সাপ্লাইয়ারস গ্রুপে যুক্ত করার পদক্ষেপেও সমর্থনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে ওয়াশিংটন।' খবর বিবিসি, এএফপি ও এনডিটিভির।

আরও পড়ুন

×