ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

ইউক্রেন সংকট

বেসামরিক এলাকায় সেনা মোতায়েনে বাড়ছে ক্ষতি

বেসামরিক এলাকায় সেনা মোতায়েনে বাড়ছে ক্ষতি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২২ | ১২:০০

ইউক্রেন যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করলে দেশটির বেসামরিক মানুষ ও তাদের বসবাসের এলাকাগুলো প্রথম দিকেই থাকবে। এজন্য ইউক্রেন ও রাশিয়া দু'পক্ষই সমানভাবে দায়ী। পূর্ব ইউক্রেনের আবাসিক এলাকাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত বেসামরিক স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর পরোক্ষ কারণ হচ্ছে- এ অঞ্চলের বেসামরিক এলাকায় প্রচুর সেনা সদস্য মোতায়েন। এএফপির সংবাদকর্মীদের একটি দল দোনেৎস্ক অঞ্চলের অনেক গ্রাম ও শহর পরিদর্শন করেছে, যেগুলো রুশ সৈন্যরা দখল করার চেষ্টা করছে। আপাতদৃষ্টিতে এসব গ্রাম ও শহরের সামরিক গুরুত্ব না থাকলেও এলাকাগুলো নিয়মিত আক্রমণের শিকার হচ্ছে।
ক্রামাতোর্স্ক শহরের ৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে পোকরোভস্ক শহর। ইউক্রেন সরকার নিয়ন্ত্রিত এই শহরের একডজন বাড়ি গত সপ্তাহে রাশিয়ার মিসাইল হামলায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। এ ছাড়া কোস্তিয়ানতিনিভকা, তোরেটস্ক এমনকি ক্রামাতোর্স্ক শহরেও প্রায়ই এ রকম প্রাণঘাতী হামলা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ইউক্রেনীয় সেনারা পরিত্যক্ত বাড়ি এবং স্কুলগুলোতে তাদের সেনা মোতায়েন করেছে। এ কারণেই বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে রুশ সেনারা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও এএফপি স্বাধীনভাবে স্থানীয়দের এই দাবি যাচাই করতে পারেনি।
আন্তর্জাতিক বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) আবাসিক এলাকায় সামরিক ক্যাম্প স্থাপন করে বেসামরিক নাগরিকদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ এনেছে রুশ ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। এ রকম সাতটি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে চারটির ক্ষেত্রে রুশ বাহিনী ও তিনটির ক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে দোষারোপ করেছে। সংস্থাটির এইচআরডব্লিউ এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশ ও ইউক্রেনীয় বাহিনী বেসামরিক জনগণকে নিরাপদ স্থানে না সরিয়ে জনবহুল এলাকায় তাদের সদস্যদের মোতায়েন করে ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে দোনেৎস্ক অঞ্চলের গভর্নর পাভলো কিরিলেঙ্কো এএফপির কাছে বলেন, এটি একটি যুদ্ধ। অবকাঠামো বা ঘরবাড়ি ধ্বংস এড়িয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। তিনি বলেন, আমাদের প্রাথমিক কাজ শত্রুকে থামানো। এটি করতে গিয়ে কখনও কখনও অবকাঠামো ধ্বংস হতে পারে। এটি এড়িয়ে অন্য কোনো উপায়ে যুদ্ধ করার পদ্ধতি আমাদের জানা নেই।
ক্রামাতোর্স্কের বাসিন্দা ইয়েভগেন পেশায় একজন লেদ অপারেটর। ৭০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে ধূমপান করছিলেন। ইউক্রেন যুদ্ধে স্কুলটি ধ্বংস হয়েছে। এএফপিকে তিনি জানান, স্কুলটিতে সাত থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ৫০০ জন শিশু পড়াশোনা করত। এটি শহরের দ্বিতীয় স্কুল, যুদ্ধ শুরুর পর শত্রুর হামলায় স্কুলভবনটি পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
শিক্ষার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় কর্মকর্তা ডেনিস সিসোয়েভের মতে, যুদ্ধ শুরুর পর শহরের আরও সাতটি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই স্কুলগুলোর বেশিরভাগই যুদ্ধের শুরু থেকে সেনাবাহিনীর খাদ্য সহায়তার ডিপো হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছিল। স্বাভাবিকভাবেই অনুমান করা যায়, কেন এই স্থাপনাগুলোতে হামলা হয়েছে।
ইয়েভগেন বলেন, 'রাশিয়ানরা ইউক্রেনের সৈন্যদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। ইউক্রেনীয় স্কুলের ভেতরে অবস্থান না করলেও আমরা নিয়মিত তাদের এখানে আসতে দেখেছি। আমাদের এখানে প্রচুর বাসিন্দা রয়েছেন যারা মনেপ্রাণে রাশিয়ানদের সাহায্য করতে চায়। তারাই এখানকার তথ্য তাদের কাছে পৌঁছে দেয়।' নাতালিয়া নামে তিন স্কুলছাত্রের মাও একই কথা বললেন। তিনি জানান, স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি টেলিগ্রাম গ্রুপ রয়েছে। সেখানে কে রাশিয়াপন্থি এবং কে নয়, এসব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়ে থাকে। যতবারই রুশ হামলা হয়, ততবারই তথ্যদাতাদের পরিচয় নিয়ে কথা হয়। নাতালিয়া বলেন, আমি আশ্চর্য হই যে, শত্রুরা কীভাবে সামরিক এই স্থানগুলোর সঠিক অবস্থান জানতে পারে! এখনও প্রচুর মানুষ দখলদারদের প্রতি অনুগত। তারা রুশ শাসনের জন্য অপেক্ষা করছে। তারা জানে এটা রাষ্ট্রদ্রোহ, তার পরও এটা করছে। আমি নিশ্চিত, পরে তারা অনুশোচনা করবে।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের ভবিষ্যৎ কী : চলতি সপ্তাহে রাশিয়া জানিয়েছে, ২০২৪ সালের পর তারা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) ছেড়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, রাশিয়া চলে গেলে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের ভবিষ্যৎ কী হবে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর ওপর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। এর ফলে সম্ভাব্য সব ক্ষেত্র থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে রাশিয়া। ব্যতিক্রম হয়নি আইএসএসের বেলায়ও। গত মার্চে রাশিয়ান মহাকাশ সংস্থা রোসকসমসের তৎকালীন প্রধান দিমিত্রি রোগজিন হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তার দেশের সহযোগিতা ছাড়া আইএসএস মার্কিন বা ইউরোপীয় ভূখণ্ডে নেমে আসতে পারে। আগের চুক্তি অনুযায়ী আইএসএসের সব অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপ, জাপান এবং কানাডা ২০২৪ সাল পর্যন্ত মহাকাশ স্টেশনকে কক্ষপথে রাখার ব্যাপারে একমত হয়েছিল। সেই চুক্তি ২০৩০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করার ইচ্ছা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এখন রাশিয়া এই প্রকল্প থেকে পিছিয়ে গেলে এটি সত্যি যে কিছু সময়ের জন্য মহাকাশ কর্মসূচি পিছিয়ে যাবে। তবে বাকি দেশগুলো মিলে খুব দ্রুতই স্টেশনের কর্মকাণ্ড আবার শুরু করতে পারবে।

আরও পড়ুন

×