জলবায়ু পরিবর্তন
শুকিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বড় ৬ নদী

শুকিয়ে যাওয়া চীনের ইয়াংজি নদী -গেটি ইমেজ
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২২ | ১৩:৫৮
অপ্রতুল বৃষ্টি এবং টানা তাপপ্রবাহে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের নদীগুলো ক্রমাগত শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেক নদনদী দৈর্ঘ্য ও প্রস্থেও সংকুচিত হয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়তই পানির ওপর থেকে দৃশ্যমান হচ্ছে নদীর তলদেশ। কিছু নদী এতই শুকিয়ে গেছে যে, সেগুলো কার্যত নৌ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
জলবায়ু সংকট বৈশ্বিক আবহাওয়াকে দিন দিন চরমভাবাপন্ন করে তুলেছে। এ কারণে নদনদীর পাশাপাশি এগুলোর ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবিকার ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিশ্বের প্রত্যেক মানুষ খাওয়ার পানি, কৃষিকাজ, জ্বালানি উৎপাদন কিংবা পণ্য পরিবহনে কোনো না কোনোভাবে নদীর ওপর নির্ভরশীল। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জনজীবন। মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক সিএনএন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকির মুখে থাকা বিশ্বের ছয়টি বড় নদীর স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করে এগুলোর আগের অবস্থার সঙ্গে বর্তমান অবস্থার পার্থক্য তুলে ধরেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে তীব্র তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। দেখা দিয়েছে খরা। খরায় কলোরাডো নদী আশঙ্কাজনকভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে। এ নদীর অববাহিকাকে রক্ষা করতে সরকার বাধ্যতামূলক পানির ব্যবহার কমানো কার্যকর করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি অঙ্গরাজ্য ও মেক্সিকোর প্রায় চার কোটি মানুষ পানীয়, কৃষি ও বিদ্যুতের জন্য এ নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল।
এশিয়ার অন্যতম নদী চীনের ইয়াংজি খুব দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। এর উপনদীগুলো এরই মধ্যে শুকিয়ে গেছে। গত ৯ বছরের মধ্যে চীন প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী খরার সতর্কতা ঘোষণা করেছে এবং দেশটির তাপপ্রবাহ ছয় দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলেছে।
ইয়াংজি শুকিয়ে যাওয়ায় এর আশপাশের অঞ্চলে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। চীনের সিচুয়ানে আট কোটি ৪০ লাখ মানুষের বাস। এখানে মোট বিদ্যুতের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে জলবিদ্যুৎ থেকে। এর বেশিরভাগই ইয়াংজি নদী থেকে আসে। সম্প্রতি এ নদীর পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনও কমে গেছে। এ কারণে সেখানকার কর্তৃপক্ষ কারখানাগুলোকে ছয় দিন উৎপাদন বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে।
রাইন নদী সুইস পর্বত থেকে প্রবাহিত হয়ে জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের মধ্য দিয়ে উত্তর সাগরে পড়েছে। জার্মানির এই নদীটি ইউরোপীয় অঞ্চলে পণ্য পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল। কিন্তু বর্তমানে এ পথে জাহাজ চালানো দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে রাইন নদীর তলদেশ দেখা যাচ্ছে। নদীতে পানির স্তর কমে যাওয়ায় অর্থ হলো জাহাজ কোম্পানিগুলোকে এ পথ অতিক্রমের জন্য কম পণ্য নিতে হয়। তাতে বেশি অর্থ খরচ করতে হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত আরেকটি নদীর নাম পো। এটির উৎপত্তিস্থল ইতালি। এটি পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে অ্যাড্রিয়াটিক সাগরে গিয়ে পড়েছে। এ নদীর কারণে এর আশপাশের এলাকা প্রায়ই প্লাবিত হয়। সৃষ্টি হয় বিধ্বংসী বন্যা। কিন্তু এখন এ নদীর রূপ পাল্টে গেছে। এ অঞ্চলটি সাত দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার কবলে পড়েছে। নদীটি এতটাই শুকিয়ে গেছে যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের একটি বোমা সম্প্রতি এর তলদেশে পাওয়া গেছে। ইতালির প্রায় ৩০ শতাংশ খাদ্য পো নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় উৎপাদিত হয়।
খরায় ক্ষতিগ্রস্ত লয়ার নদীটি প্রায় ৬০০ মাইলজুড়ে বিস্তৃত এবং বনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ফ্রান্সের শেষ নদী হিসেবে মনে করা হয়। নদীটি সমগ্র উপত্যকায় জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রেখেছে। নদীর কিছু অংশ বৃষ্টির অভাবে ও প্রচ গরমে এতটাই শুকিয়ে গেছে যে, মানুষ হেঁটে এপার থেকে ওপারে যেতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের আরেক শিকার দানিয়ুব নদী। এটি হাঙ্গেরির নদী। এটি পশ্চিম ইউরোপের দীর্ঘতম নদী এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ শিপিং চ্যানেল। এটা ১০টি দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ইউরোপের অন্যান্য নদীর তুলনায় এ নদীর অবস্থা খানিকটা ভালো। তবে নদীর পানি কমে যাওয়ায় কিছু পর্যটকবাহী জাহাজ হাঙ্গেরিতে পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে।
- বিষয় :
- জলবায়ু পরিবর্তন