ঢাকা শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে চীনে

বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে চীনে

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২২ | ২১:৩৫

কভিড ইস্যুতে গত তিন বছরে চীনের ১০০ কোটি মানুষের ধৈর্যের বাঁধ একটু একটু করে কমেছে। তবে দেশটির জিনজিয়াং প্রদেশের উরুমকির একটি আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ১০ জন নিহতের ঘটনায় সেই ধৈর্যের বাঁধ একেবারে ভেঙে গেছে তাদের। ফলে দেশটিতে ছড়িয়ে পড়েছে নজিরবিহীন বিক্ষোভ।

কভিড বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে দেশটির বিভিন্ন শহরের হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। তাদের প্রশ্ন, আর কতদিন সহ্য করতে হবে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কভিড-নীতি।

এর মধ্যে দেশটির সাংহাইয়ে শত শত বিক্ষোভকারীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। রোববার রাতের ওই ঘটনার পর সেখানকার নিরাপত্তা জোরদার করেছে কর্তৃপক্ষ। ছুটির দিনে সাংহাই ও বেইজিংয়ের যেসব স্থানে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে গতকাল সোমবার টহল দিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া দেশটির বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়েছে কভিড বিধিনিষেধবিরোধী বিক্ষোভ। ক্ষমতা নেওয়ার এক দশক পর জিনপিং নজিরবিহীন এই বিক্ষোভ দেখলেন। এখন তাঁর সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা এবং করোনার সংক্রমণ কমিয়ে দেশটির অর্থনীতির গতি সঞ্চার করা।

গত এক দশকে জিনপিং ভিন্নমত দমন এবং উচ্চ প্রযুক্তিগত সামাজিক নজরদারির ব্যবস্থা করেন; যাতে সাধারণ নাগরিকরা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ না করতে পারে। এর মধ্যেও দেশের হাজার হাজার নাগরিক রাস্তায় নেমে এসেছে।

গতকাল সোমবার ভোরে বেইজিংয়ের লিয়াংমা নদীর কাছের থার্ড রিং রোড এলাকায় এক হাজারের মতো বিক্ষোভকারী জড়ো হন। তাঁরা দুটি দলে বিভক্ত ছিলেন। এ সময় একটি দল থেকে স্লোগান দেওয়া হয়, 'আমরা মাস্ক চাই না, স্বাধীনতা চাই', 'আমরা করোনা পরীক্ষা চাই না, স্বাধীনতা চাই।'

প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন বলেন, বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনকে একটি বাসে তুলে নেয় পুলিশ। বিক্ষোভকারী ভিড়ের মধ্য দিয়ে পরে বাসটি চলে যায়। সাংহাইয়ে ২৬ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী বলেন, 'আমরা শুধু আমাদের মৌলিক মানবাধিকার চাই। পরীক্ষা ছাড়া আমরা আমাদের বাড়ি থেকে বের হতে পারি না। জিনজিয়াংয়ের দুর্ঘটনা মানুষকে সড়কে নামতে বাধ্য করেছে।'

সাংহাইয়ের কলেজছাত্র জেসন সান বলেন, ভাইরাস প্রতিরোধের নামে জনগণের অধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং জনগণের জীবিকার ওপর বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার সাংহাই ও বেইজিংয়ের সেসব স্থানে বিক্ষোভ হয়েছিল, সেখানে গতকাল সোমবার কোনো বিক্ষোভ হয়নি। তবে এসব জায়গায় কয়েকজন পুলিশ সতর্ক অবস্থায় ছিল।

চীনের কভিড বিধিনিষেধ নিয়ে জনগণের ক্ষোভ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা যে প্রশ্ন করছেন, সেটি বর্তমান ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে এবং চীনা জনগণের সহযোগিতা ও সমর্থনে কভিডের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই সফল হবে।

এদিকে রোববার রাতে বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আটক হন বিবিসির সাংবাদিক এডওয়ার্ড লরেন্স। তাঁকে মারধরও করা হয়। অবশ্য আটকের কয়েক ঘণ্টা পর তাঁকে ছেড়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবিসি জানিয়েছে, দায়িত্ব পালনের সময় এভাবে সাংবাদিকের ওপর হামলা মেনে নেওয়া যায় না।

তবে চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আটকের সময় লরেন্স তাঁর সাংবাদিকতার পরিচয়পত্র দেখাননি। তিনি বিক্ষোভকারীদের ভিডিও ধারণ করছিলেন এবং সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার দিচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশ তাঁকে আটক করে। এদিকে বিবিসির সাংবাদিক আটকের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব জেমস ক্লিভারলি। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, সাংবাদিক আটকের ঘটনাটি খুবই বিরক্তিকর।

আরও পড়ুন

×