বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু শিক্ষাবিদ ও সাবেক তৃণমূল সাংসদ কৃষ্ণা বসু আর নেই। শনিবার সকাল ১০টায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সীমান্ত এলাকায় সেবা কার্যক্রম চালান। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ভাইপোর স্ত্রী কৃষ্ণা বসুর জন্ম ১৯৩০ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায়।

পারিবারিক সূত্র জানায়, চার বছর আগে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন কৃষ্ণা বসু। যে যাত্রা সেরে উঠলেও শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। কয়েকদিন আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শনিবার সকালে তিনি মারা যান। দুপুরে কৃষ্ণা বসুর মরদেহ আনা হয় তার এলগিন রোডের বাড়িতে। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে হয় শেষকৃত্য।

১৯৫৫ সালে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বড় ভাই শরৎচন্দ্র বসুর পুত্র শিশির কুমার বসুর সঙ্গে বিয়ে হয় কৃষ্ণা বসুর। ১৯৪১ সালে নেতাজি জাপানে পালিয়ে যাওয়ার সময় মেডিকেল ছাত্র শিশির বসুই তাকে গাড়িতে করে এগিয়ে দেন। ২০০০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মারা যান শিশির বসু। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শিশির বসু ও কৃষ্ণা বসু আহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সেবা কার্যক্রম চালান সীমান্তজুড়ে।

ইংরেজিতে এমএ পাস কৃষ্ণা বসু ছিলেন সুবক্তা। অধ্যাপনা করেছেন টানা ৪০ বছর। কলকাতার সিটি কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন আট বছর। যাদবপুর আসন থেকে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে তিনবার সাংসদ হন। ছিলেন লোকসভার পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারপরসন। নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোরও চেয়ারপারসন ছিলেন তিনি। দুই ছেলে ও এক মেয়ে কৃষ্ণা বসুর। তার ছেলে সুগত বসু প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ। তিনি ছিলেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের মেন্টর। মায়ের পর সুগত বসু ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রথম সাংসদ হন।

কৃষ্ণা বসুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়সহ কলকাতার বিশিষ্টজনেরা। 

শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের খুব ভালোবাসতেন তিনি, আমরাও তাকে ভালোবাসতাম। আমরা অভিভাবককে হারালাম। নেতাজি ভবনের সব কাজ উনি একাই দেখাশোনা করতেন। তার চলে যাওয়াতে বড় শূন্যতা তৈরি হল।