
দীর্ঘ আঠারো বছরের সংঘাত শেষে যুক্তরাষ্ট্র তালেবান শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। গতকাল শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় দু'পক্ষের দায়িত্বশীলরাসহ বিশ্বের ৫০টি দেশের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে এই চুক্তি সম্পন্ন হয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তিকে 'আলোর পথে এগিয়ে যাওয়া' হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ট্রাম্পের এ বক্তব্য এক হিসেবে সত্য। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে চলমান যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত কোনো পক্ষকেই পরিপূর্ণ জয়ের স্বাদ দিতে পারেনি; বরং আফগানিস্তান নামের একটি ভূখণ্ডকে ক্রমশ নিয়ে গেছে অনিশ্চিত এক অন্ধকারের দিকে। আফগানিস্তান এখন এক যুদ্ধবিধ্বস্ত ব্যর্থ রাষ্ট্র ছাড়া আর কিছু নয়।
'অন্তহীন' এই যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি এবং অসংখ্য সেনার প্রাণহানি ছাড়া আর কিছু দেয়নি। তেমনি তালেবানও পায়নি তাদের ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর নির্দিষ্ট গতিপথ। সবচেয়ে করুণ বাস্তবতা হলো, দেশটির শান্তিপ্রিয় নাগরিকরা বঞ্চিত হয়েছে নিজেদের প্রাপ্য নিরাপত্তা ও অগ্রগতি থেকে। দু'পক্ষের এ চুক্তি এক অনিবার্য আপদ হিসেবে ঘাড়ে চেপে বসা অর্থহীন যুদ্ধ থেকে মুক্তি দেবে সাধারণ মানুষকে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, এই চুক্তির ফলে আফগানিস্তানে মোতায়েনরত সৈন্যদের ধারাবাহিকভাবে প্রত্যাহার করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে চুক্তিতে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার শঙ্কায় এটি দীর্ঘস্থায়ী হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। কাতারভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আলজাজিরার বিশ্নেষণে উঠে এসেছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি।
শান্তির পথে ছড়ানো কাঁটাগুলো :যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির পর তালেবান নেতাদের সামনে যা এসে দাঁড়াবে তা হলো, তাদের সমর্থক জনগোষ্ঠী এবং সশস্ত্র যোদ্ধাদের চুক্তির ভালো দিকগুলো ঠিকমতো বোঝানো। আফগানিস্তানের সরকারের সঙ্গেও তালেবান নেতাদের ঠিক কোন ধরনের সম্পর্ক হবে, তার কোনো রূপরেখা চুক্তিতে থাকবে না। এক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে তালেবান নেতাদের নিজেদেরই বিরোধ মিটিয়ে ফেলার উদ্যোগ নিতে হবে এবং উভয় পক্ষই তাতে লাভবান হতে চাইবে। অবশ্য এ ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তার আগে বর্তমান নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে তালেবানের যে আপত্তি, সরকারকে তা আমলে নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। এ নিয়ে দ্বিমত হলে অভ্যন্তরীণ সংকট চলতেই থাকবে। আর যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান শান্তিুচুক্তিও হয়ে পড়বে অর্থহীন।
আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি ও তার বিরোধী নেতা আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর মধ্যে তালেবানের সঙ্গে আলোচনা নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। তালেবানের সঙ্গে আলোচনা-সমঝোতায় ঘানি সম্মত থাকলেও আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় বসে তাদের বৈধতা দেওয়ার ঘোর বিরোধী। সুতরাং শান্তিচুক্তি সফল করতে হলে দুই নেতার মধ্যকার বৈরীভাব দূর করা জরুরি। সূত্র: আলজাজিরা।
মন্তব্য করুন