করোনাভাইরাসের মহামারি থেকে প্রান্তিক এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি এই অঞ্চলের দিনমজুর, বাস্তুচ্যুত, স্বাস্থ্যকর্মী এবং কারাবন্দিদের সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে এর বিস্তার ঠেকাতে ভারত, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে জনগণের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এমন অবস্থায় এই অঞ্চলের প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের ওপর বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানায় অ্যামনেস্টি।

সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক বিরাজ পাটনায়েক এক বিবৃতিতে বলেন, 'দক্ষিণ এশিয়ায় কভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এই সংকটে আঞ্চলিক নেতাদের অবশ্যই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রান্তিক মানুষদের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। বাড়িতে থাকায় জীবিকা হারানো শ্রমিক, সংঘাতে বাড়ি হারিয়ে জনাকীর্ণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষ, প্রয়োজনীয় উপকরণ না পাওয়া যেসব চিকিৎসক ও নার্স এখন অন্যের জীবন বাঁচাতে নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলছেন, তাদের সবাইকে রক্ষায় এখন ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।'

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে প্রতিদিন দ্রুতগতিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে আর ধারণা করা হচ্ছে, পরীক্ষার অভাবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হয়ে থাকতে পারে। এতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার বহু মানুষ দৈনিক মজুরি আয়ের ওপর নির্ভরশীল। অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে তারা শ্রম দেয়। লকডাউন কার্যকর হওয়ায় এসব নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের জীবিকা উপার্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। এসব মানুষের বেশিরভাগই সামাজিক সুরক্ষার আওতার বাইরে রয়েছে।

অ্যামনেস্টি বলেছে, কাউকে ক্ষুধা বা সংক্রমণের মধ্য থেকে কোনো একটাকে বেছে নিতে বাধ্য করা উচিত নয়। এই সংকটের সময় তাদের জীবিকা রক্ষায় রাষ্ট্রকেই যথাসম্ভব ভূমিকা নিতে হবে বলে জানানো হয় ওই বিবৃতিতে। দীর্ঘমেয়াদে সংকট উত্তরণে আন্তর্জাতিক সহায়তার দরকার হবে জানিয়ে বলা হয়, এটা বিশ্বব্যাপী মহামারি আর এর সমাধান বিশ্বজুড়ে হওয়া দরকার।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে যথেষ্ট তথ্য সরবরাহে ব্যর্থতার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলোর সমালোচনা করেছে অ্যামনেস্টি। সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা এবং ভাইরাস ঠেকাতে নেওয়া সরকারি পদক্ষেপ নিয়েও যথেষ্ট তথ্য জানানো হচ্ছে না বলে উল্লেখ করে বিবৃতিতে এ বিষয়ে রাষ্ট্রের ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।

দক্ষিণ এশিয়ায় করোনার মহামারিতে চিকিৎসাকর্মীদের নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় ওই বিবৃতিতে। এদের অনেকেই প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবের কথা বলেছেন। এই সংকটের সময় তারাই 'নায়ক' বলে উল্লেখ করে অ্যামনেস্টির বিবৃতিতে তাদের রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

দক্ষিণ এশিয়ার শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষদের নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় অ্যামনেস্টির বিবৃতিতে। পাকিস্তানে প্রায় ৩০ লাখ আফগান শরণার্থী ও বাংলাদেশে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষদের জন্য সামাজিক দূরত্ব বা সোশ্যাল ডিসট্যান্স মানার সুযোগ নেই, স্বাস্থ্যসেবা সহজে পাওয়া যায় না আর দৈনন্দিন প্রয়োজন জোগাড় করাও কষ্টসাধ্য।

এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দি রয়েছে উল্লেখ করে মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, পয়োনিস্কাশনের সীমিত সুবিধার কারণে সেখানকার বন্দিরা এমনিতেই বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং মান অনুযায়ী বন্দিদের সেই ধরনের চিকিৎসা সুবিধা দিতে হবে, যা বাইরের নাগরিকরাও পেয়ে থাকেন।