- আন্তর্জাতিক
- বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তাই কাছে আনে অ্যাসাঞ্জ-স্টেলাকে
বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তাই কাছে আনে অ্যাসাঞ্জ-স্টেলাকে

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ও স্টেলা মরিস
কয়েক দিন আগেই জানা গেছে দুনিয়া কাঁপানো সংবাদমাধ্যম উইকিলকসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ দুই সন্তানের জনক। তার আইনজীবী বান্ধবী স্টেলা মরিসের গর্ভে তাদের জন্ম। এ নিয়ে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো নানা রসালো সংবাদ প্রকাশ করছে।
এরই মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বংশোদ্ভূত ৩৭ বছর বয়সী স্টেলা এক বিবৃতি প্রকাশ করে অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে তার সম্পর্ক কীভাবে গড়ে উঠেছিল তা পরিষ্কার করেছেন। মূলত বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তাই তাদের একত্র করেছিল বলে জানিয়েছেন স্টেলা। খবর দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট ও দ্য গার্ডিয়ানের
করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময় লন্ডনের নির্জন কারাগারে অ্যাসাঞ্জের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েও ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্টেলা। এই পরিস্থিতিতে অ্যাসাঞ্জের মুক্তি চেয়েছেন তিনি। উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর ভয়েও তিনি ভীত।
ব্রিটিশি দৈনিক দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লন্ডনের বেলমার্শ কারাগারে আটক আছেন অ্যাসাঞ্জ। তার আইনজীবী ও বন্ধুরা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে কারাগারটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এমন অবস্থায় অ্যাসাঞ্জকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত তারা। সেই জেলের এক কয়েদির করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও হয়েছে।
২০১১ সালে লন্ডনে থাকার সময় অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় স্টেলার। তিনি তখন অ্যাসাঞ্জের আইনি পরামর্শক হিসেবে যোগ দেন। তার আগের বছরই দিন দশেকের জন্য জেল খাটতে হয় অ্যাসাঞ্জকে।
২০১০ সালে আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে হৈ চৈ ফেলে দেয় অ্যাসাঞ্জের উইকিলিকস। ভীষণ নাখোশ হয় যুক্তরাষ্ট্র। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় সুইডেনে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হয়। তড়িৎ গতিতে অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তারের জন্য আন্তর্জাতিক ওয়ারেন্ট বের হয়। লন্ডনে গ্রেপ্তার হয়ে ১০ দিন জেল খেটে জামিনে মুক্তি পান অ্যাসাঞ্জ।
সেই ঝড়ের সময়টাতে স্টেলার সঙ্গে অ্যাসাঞ্জের পরিচয়। স্টেলা বলেন, ‘আমাদের মধ্যে দারুণ একটা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। নানা বিষয়ে আমাদের আলোচনা হতো। আমরা পরষ্পরের খুব ভালো বন্ধু হয়ে যাই তখন থেকেই।’
ধর্ষণের অভিযোগে সুইডেনের কাছে হস্তান্তরের প্রশ্নে লন্ডনে ফের আইনি ঝক্কির মুখোমুখি হন অ্যাসাঞ্জ। সুইডেনে গেলেই অ্যাসাঞ্জকে তুলে দেওয়া হতো যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। ২০১২ সালের জুনে ফের গ্রেপ্তার এড়াতে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন অ্যাসাঞ্জ। ২০১৫ সালে দূতাবাসে বন্দি জীবন যাপনের সময় অ্যাসাঞ্জ ও স্টেলা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
স্টেলা বলেন, ‘বাইরে থেকে অ্যাসাঞ্জকে গম্ভীর মনে হলেও আসলে সে তেমনটা নয়। আমাদের পরস্পরের প্রতি যে শ্রদ্ধা তা এখনও অটুট রয়েছে। তবে আমাদের জীবন ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নে ঘেরা। আমরা সেই দুঃস্বপ্ন থেকে পরিত্রাণের পথও খুঁজে চলেছি একসঙ্গে।’
অ্যাসাঞ্জের নেতেৃত্বে টিম উইকিলিকস যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী ও দখলদারি কর্তৃত্ববাদের ভয়ঙ্কর রূপ বিশ্ববাসীর সামনে হাজির করেছিল। স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও বেসামরিক যুদ্ধবাজ পক্ষগুলো যে কোনো উপায়ে অ্যাসাঞ্জকে হাতের মুঠোয় পেতে চেষ্টা চালাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রকে সমস্ত সহায়তা দিচ্ছে ব্রিটেন। তারই অংশ হিসেবে গত বছর ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে অ্যাসাঞ্জকে আটক করে ব্রিটিশ পুলিশ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা যদি সফল হয় তাহলে বাকি জীবণটা জেলেই কাটাতে হবে প্রথাগত সাংবাদিকতার সংজ্ঞা পাল্টে দেওয়া অ্যাসাঞ্জকে।
মন্তব্য করুন