- আন্তর্জাতিক
- যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গরা কেন বেশি আক্রান্ত
যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গরা কেন বেশি আক্রান্ত

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। তবে আক্রান্ত ও মৃতের মধ্যে আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ বেশি ।
সম্প্রতি দেশটির শিকাগো, নিউ অরলিন্স, লাস ভেগাস, ম্যারিল্যান্ড ও সাউথ ক্যারোলাইনা শহরে করোনাভাইরাসে সংক্রান্তের যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে তাতে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
প্রকাশিত ওই তথ্যে দেখা যায়, শিকাগো শহরে মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ আফ্রিকান আমেরিকান হলেও ওই শহরে করোনায় মৃতদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ আফ্রিকান আমেরিকান।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বৈষম্য এর একটি অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে। তবে এর বাইরেও কিছু কারণে কৃষ্ণাঙ্গরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত তিন আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গের কথা উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিকাগোর এক গির্জার রেভারেন্ড মার্শাল হ্যাচের ৭৩ বছর বয়সী বড় বোন রোডা হ্যাচ আটদিন হাসপাতালে থাকার পর মারা যান গত ৪ এপ্রিল। এর দুইদিন আগে রেভারেন্ড হ্যাচের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ল্যারি হ্যাচও মারা যান কোভিড-১৯ এ। তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। এছাড়া কয়েকদিনে রেভারেন্ড হ্যাচের খুব কাছের চারজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা যান। রেভারেন্ড হ্যাচে জানান, আফ্রিকান আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গদের বসবাসের এলাকা হিসেবে পরিচিত ওয়েস্ট গারফিল্ড পার্কে তিনি বসবাস করেন। সেখানকার অনেকেই করোনায় আক্রান্ত।
তিনি বলেন, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে আমার বোনকে কবর দেয়ার জায়গা খুঁজে পাওয়াও কঠিন হয়ে গেছে। তিনি জানান, দেশটিতে যেকোন স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হলে অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে থাকা লোকেরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন- এই ধারণা তাদের আগে থেকেই রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, ওয়েস্ট গারফিল্ড পার্কের মানুষের গড় আয়ু মাত্র তিন মাইল দূরত্বে থাকা শ্বেতাঙ্গ এলাকার মানুষের গড় আয়ুর তুলনায় ১৬ বছর কম। দারিদ্র্য ও বৈষম্যের কারণে ওই এলাকার অনেকেরই স্বাস্থ্য বীমা নেই। অনেকে আবার এমন অস্বাস্থ্যকর বাসস্থানে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন।
দেশটির নিউ অরলিন্সে বসবাসকারী ২৪ বছর বয়সী ক্ল্যারিওন্টা জোনস কাজ করেন একটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানে। তিনি জানান, দোকানে যেসব ক্রেতা আসেন, তাদের কারো মধ্যে এই সংক্রমক রোগ আছে কিনা তা কেউ জানে না। কিন্তু চাইলেই তিনি ছুটি নিতে পারেবেন না।
তিনি বলেন, পরিবারে আমিই একমাত্র উপার্জনকারী। এপ্রিলের ভাড়া দেয়ার জন্য এরই মধ্যে তাগাদা দেওয়া শুরু করেছেন বাড়িওয়ালা। এই পরিস্থিতিতে আমি যদি অসুস্থও হই তবু ওষুধ খেয়ে কাজ চালিয়ে যাবো। আমার দু'টি সন্তান আছে। এই পরিস্থিতিতে আমি বেতন হারাতে চাই না।
এদিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে একটি কথা ছড়িয়ে পড়ে, সেটি হলো-'কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে করোনা ছড়ায় না।' আফ্রিকান আমেরিকানদের অনেকে সেটা বিশ্বাস করতেও শুরু করেছিলেন।
এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ায় ভয়াবহ বিপদে পড়েন উইসকনসিন রাজ্যের মিলওয়াকি শহরের স্বাস্থ্য কমিশনার ডক্টর জিনেট কোয়ালিক। ওই শহরে প্রায় ৪০ শতাংশ বাসিন্দা কৃষ্ণাঙ্গ। তিনি জানান, শহরের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই কোভিড-১৯ এর প্রকোপ শুরু হয়।
ডক্টর কোয়ালিক বলেন, প্রথম সপ্তাহে শহরটিতে ৮০ জন করোনায় আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই কৃষ্ণাঙ্গ। তিনি জানান, যেসব আফ্রিকান আমেরিকান করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তাদের অধিকাংশেরই হৃদরোগ, ডায়বেটিস, শ্বাসকষ্ট বা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা ছিল।
ডাক্তার কোয়ালিকের মতে, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বৈষম্যমূলক নীতির কারণেই আফ্রিকান আমেরিকানদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে বেশি।
মেডিকেল গবেষণার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, টানা মানসিক চাপের মধ্যে থাকার কারণে যে হরমোন নি:সৃত হয়, তা মানুষকে দ্রুত বার্ধক্যে নিয়ে যায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত কমিয়ে ফেলে।
তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়কে কাঠামোগত বৈষম্যের সঙ্গে তুলনা করা যায়। দীর্ঘ দিন ধরে এদেশে এরকম নীতি চলে আসছে।’
ডাক্তার কোয়ালিক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে এখনও নিম্ন আয়ের আফ্রিকা আমেরিকানদের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না। সে কারণে তারা আরো বেশি অবহেলিত অনুভব করছেন।
মন্তব্য করুন