কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একত্রে কাজ করার কথা বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্টমন্ত্রী মাইক পম্পেও।তার এই বক্তব্যে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটা সবাই জানে, দেশদুটো ভ্যাকসিন উন্নয়নে গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছে। যেসব রোগের ভ্যাকসিনের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে, সেগুলো হলো ডেঙ্গু, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও যক্ষ্মা। অদূর ভষ্যিতে ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

ভারত জেনেরিক ড্রাগ ও ভ্যাকসিন উৎপাদনে বিশ্বের বৃহত্তম দেশগুলো একটি।এছাড়া পোলিও, মেনেনজেটিস, নিউমোনিয়া, রুবেলা, বিসিজি ও হাম রোগের ভ্যাকসিন উৎপাদন করে। এখন আধা ডজনেরও বেশি ফার্মে কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যেসব ভাইরাস কোভিড-১৯ এর জন্য দায়ী, সেসব ভাইরাস নির্মূলের জন্য বিশেষভাবে কাজ চলছে।
এরকম একটি কোম্পানির নাম হলো সেরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া। উৎপাদন ও বিক্রির দিক থেকে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। প্রতিবছর দেড়শ কোটি ডোজ তৈরি করে থাকে তারা। চেক রিপাবলিক ও নেদারল্যান্ডসে এর দুটি ক্ষুদ্র শাখা রয়েছে। ভারতের পুনেতে রয়েছে মেইন অফিস বা কারখানা। কারখানায় কর্মীর সংখ্যা ৭ হাজারের মতো। ২০ রকমের ভ্যাকসিন বিশ্বের ১৬৫ দেশে রপ্তানি করে তারা। প্রতি মাত্রা গড়ে ৫০ সেন্টেরও কম দামে এই ওষুধ সরবরাহ করা হয়।
ফার্মটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের কোডাজেনিক্স নামের একটি বায়োটেক কোম্পানির সঙ্গে একটি ভ্যাকসিন উৎপাদনের কাজ করছে। এই ভ্যাকসিনটি ভাইরাসজনিত হ্রাস বা ক্ষতিকারক বৈশিষ্ট্যগুলো অপসারণ করে অথবা বাঁচিয়ে রাখলেও তা দুর্বল হয়ে পড়ে।

সেরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী আদর পুনাঅল্লা বলেন, ইঁদুর বা খরগোস জাতীয় প্রাণীগুলোর ওপর প্রযোগের জন্য আমরা এপ্রিলে এক সেট ভ্যাকসিন প্রযোগের পরিকল্পনা করেছি। সেপ্টেম্বরের দিকে আশা করছি, আমরা মানব শরীরেও তা প্রয়োগের পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড এবং যুক্তরাজ্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় চালু একটি ভ্যাকসিন উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও শেয়ারে ব্যবসা রয়েছে সেরামের। তাদের তৈরি নতুন ভ্যাকসিনের ভিত্তি হচ্ছে জেনেটিক্যালি উন্নত করা একটি শিম্পাঞ্জির ভ্যাকসিন।বৃহস্পতিবার থেকে সেটি মানব শরীরে প্রয়োগ করা শুরু হয়েছে। যদি সব কিছু ঠিক থাকে তাহলে সেপ্টেম্বর থেকে তা পুরোদমে চালু করা হবে।
ভারতীয় কোম্পানিগুলো যে কোনো রোগের ভ্যাকসিন তৈরিতে সব সময় এগিয়ে থাকে। আদর পুনাওয়াল্রা বলেন, আমরা প্রতিবছর ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন তৈরি করি।আমরা এতে প্রচুর বিনিয়োগ করি এবং বিনিয়োগের ফল তুলে আনার ক্ষমতাও আছে আমাদের।
 শুধু সেরামই নয়, ভারতে হায়দরাবাদভিত্তিক ভারত বায়োটেক যৌথভাবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন ম্যাডিসন যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফ্লুজেনের সঙ্গে। সারা বিশ্বের প্রয়োজনে এরা তৈরি করবে ত্রিশ কোটি মাত্রার ভ্যাকসিন।জাইদুশ ক্যাডিল্লা কাজ করছে দুটি ভ্যাকসিন নিয়ে, বায়োলজিক্যাল ই ইন্ডিয়ান ইমিউনোলজিক্যালস এবং মিনভ্যক্স প্রত্যেকেই একটি করে ভ্যাকসিন উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে।

করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা সারা বিশ্বে এখন দুই লাখ ছুঁই ছুঁই।আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই কোটিরও বেশি।করোনা প্রতিরোধে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন পৃথিবীর তাবত গবেষক ও চিকিৎসকরা। কিন্তু এখনো সঠিক পথটি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সেরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী আদর পুনাঅল্লা বললেন, আমরা আশাবাদী, খুবই আশাবাদী যে, দুই বছর কিংবা তারচে কম সময়ের মধ্যে আমরা তা পেয়ে যাব।