- আন্তর্জাতিক
- করোনা আক্রান্তমুক্ত মাস পার তাইওয়ানের
করোনা আক্রান্তমুক্ত মাস পার তাইওয়ানের

তাইওয়ানের বাসিন্দারা
প্রায় ছয়মাস আগে চীনের উহান থেকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে মহামারি করোনাভাইরাস। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে দেশে দেশে যখন বিপর্যস্ত অবস্থা, ঠিক তখন উহানের খুব কাছের তাইওয়ানে এসে নিজেই পর্যুদস্ত করোনা। তাইওয়ানবাসীর জন্য গর্বের খবর হচ্ছে, গত ৩১দিন অর্থাৎ পুরো এক মাসে কেউ করোনা আক্রান্ত হয়নি দেশটিতে। এক্ষেত্রে চীনের নিজের ভূখ- দাবি করা অঞ্চলটির বাসিন্দারা সত্যিই ভাগ্যবান। করোনা কুপোকাতে তাদের এমন সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে দ্রুত পরীক্ষা ও মাস্ক ব্যবহারসহ সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। খবর বিবিসির।
তাইওয়ানের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত আগের ৩১ দিনে দেশটিতে কোনো সংক্রমণ ঘটেনি। এরমধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। আর অন্যদেশ থেকে আসা কারও করোনা শনাক্ত হয়নি গত এক সপ্তাহ ধরে। তাইওয়ানে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪০ জন এবং মারা গেছেন মাত্র ৭ জন।
লকডাউনসহ নানান ব্যবস্থা নিয়েও যেখানে বিভিন্ন দেশ করোনার সংক্রমণে বিপর্যস্ত, সেখানে তাইওয়ানে দেখা গেছে জনজীবন স্বাভাবিক। তাইওয়ানের বাসিন্দারা দল বেঁধে রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কেউ কাজে যাচ্ছে। শিশুরা যাচ্ছে স্কুলে। দোকানপাট আর রেস্তোঁরাগুলো বরাবরই খোলা এবং কোলাহলপূর্ণ। তবে সবার মুখে দেখা যায় মাস্ক পরা।
চীনে সংক্রমণ ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই তাইওয়ান নিজেকে রক্ষায় তৎপর হয়েছে। সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে শুরু থেকেই। বিমানবন্দরসহ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করেছে কঠোর হাতে। এ সময়ে বিদেশী পর্যটকদের তাইওয়ানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাসিন্দারা যারা বিদেশ থেকে ফিরেছেন, তাদেরও বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। হাসপাতাল ও এয়ারপোর্টগুলোতে করোনা পরীক্ষার জন্য আরোপ করা হয়েছে কঠোরতা।
আবার লোকজনের মধ্যেও দেখা গেছে সবকিছু মেনে চলার স্বতঃস্ফূর্তরা। তাইওয়ানের সাংবাদিক সিডনি সুই বলেন, তাইওয়ানবাসী নিজের উদ্যোগে প্রতিদিন নিজেদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করেছে। হাত জীবাণুমুক্ত রেখেছে সব সময়। আর গণপরিবহনে কেউ মাস্ক পরা ছাড়া যাতায়াত করেনি।
এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞ ডা. জেসন ওয়াং বলেন, তাইওয়ান সম্ভাব্য সংকটের ভয়াবহতা আগেই বুঝতে পেরেছিল এবং ভাইরাসের চেয়ে এগিয়ে থাকতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘২০০২ ও ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর তাইওয়ান ন্যাশনাল হেল্থ কমান্ড সেন্টার (এনএইচসিসি) গঠন করে পরবর্তী সংকট মোকাবেলায় প্রস্তুত হয়েই ছিল।’
জনগণ স্বেচ্ছায় সরকারের নির্দেশ অনুসরণ করাও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করেন ওয়াং। তিনি বলেন, ‘‘সার্স ভাইরাসের সময় তাইওয়ানের বেশিরভাগ মানুষকে তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তাদের ওই স্মৃতি এখনো তাজা, যা তাদের করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করেছে। তারা ঐক্যবদ্ধ থেকে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারের নেওয়া সব ব্যবস্থা নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে চলেছে।’
মন্তব্য করুন