এক করোনায় কাত সারা বিশ্ব। কিন্তু আরো যে পাঁচটি জলজ্যান্ত সমস্যা মুখব্যাদান করে রেখেছে, সেটা কেউ দেখছে না। সমস্যাগুলো অবশ্য আগে থেকেই ছিল। সেগুলোতে করোনার মতো তাৎক্ষণিক নির্বিচার সংক্রমণের ঝুঁকি না থাকায় কারো কারো কাছে সেগুলো লাভজনক রাজনৈতিক ও সামরিক খেলা হিসেবে আদর-কদরও পাচ্ছিল। কিন্তু করোনা নামের জন কিংবা পদনিরপেক্ষ উপসর্গ এসে সবাইকে তটস্থ করে তুলেছে। আর আন্তর্জাতিক ওই সমস্যাগুলো বসে আছে সাইডলাইনে। এমনকী সংবাদ মাধ্যমগুলোতেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সেগুলোর নাম।

করোনা সমস্যা যখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিল, তখন কিছু জলজ্যান্ত সমস্যাও ছিল বিশেষ করে ইরান আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনেরও চলছিল নানা বিষয়ে খচাখচি। কিন্তু করোনার বিশ্বব্যাপী দাপটে ট্রাম্প-রুহানি-জিনপিং সবাই আপাতত চুপ। বরিস জনসন আইসিইউ পর্যন্ত ঘুরে এসেছেন। সুস্থ হয়ে আপাতত বউ তালাক দিয়ে থিতু হয়ে বসেছেন। অবশ্য এর মধ্যে বান্ধবীর কাছ থেকে উপহার পেয়েছেন নিজের ছয় কি সাত নম্বর সন্তান। এসব কথার মানে হলো করোনায় কাত এই বিশ্বে সাইড লাইনে বসে থাকা সমস্যাগুলোর বিষয়ে কী করা হবে। যতই সাইড লাইনে থাকুক, একসময় তো মাঠে নামবেই সেগুলো। তবু সেগুলো এখন চাপা পড়ে আছে। কিছু সমস্যাকে চাপা দেয়ারও চেষ্টা করা হচ্ছে, আবার করোনাকে ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের পাঁয়তারাও চালাচ্ছে কোনো কোনো পক্ষ।

যাহোক, আপাতত প্যান্ডোরার বাক্সে লুকিযে থাকা পাঁচটি বড় ইস্যু নিয়ে কথা বলা যায়।

নতুন পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা : ‘স্টার্ট’ (স্ট্র্যাটেজিক  আর্মস রেডাকশন ট্রিটি) চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে চলেছে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এই চুক্তিটির মধ্য দিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির হুমকি দিয়ে পরস্পরকে  ভয় দেখানোর কাজটা বন্ধ হয়েছিল। চুক্তিটার মেয়াদ বাড়বে কিনা, সেটা ঠিক করার জন্য সমযের দরকার, এখনই আলোচনায় বসতে হবে দুই পক্ষকে। আর আলোচনাটা এমন নয় যে, এক দুইদিনে শেষ করা যাবে। শীতল যুদ্ধের পর করা চুক্তিগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই এখন আর ‘জীবিত’ নেই।কেবল এটিই টিকে আছে এখনো পর্যন্ত, যেটাকে দাম দিতে বাধ্য হয় উভয় দেশই।

এই চুক্তিটার নবায়ন দরকার। এটি না থাকলে বিশ্বব্যাপী পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা চালু হয়ে যাবে ফের। আর এর মধ্যে কোনো মাপকাঠি থাকবে না। শঙ্কা সৃষ্টি হবে নতুন সুপারসনিক অস্ত্র তৈরিরও। মাথার ওপর খবরদারির মতো এই চুক্তি না থাকলে মাথা বিগড়ে যেতে পারে যে কোনো ‘অতি আত্মবিশ্বাসী’ যুদ্ধোন্মাদের।
রাশিয়া চুক্তি নবায়নে রাজি, তাদের জন্য এটা খুব সমস্যাও নয়, এটা বোঝা যায়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিষয়টা অত সহজ নয়। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ট্রিটিতে এখন চীনকেও যুক্ত করা হোক। কিন্তু চীনের কোনো আগ্রহ নেই এই ব্যাপারে। ফলে চুক্তি নবায়নের ব্যাপারে কথা এগোচ্ছে না।

জেসিপিওএ চুক্তি : ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ করার চেষ্টায় যে চুক্তিটি হয়েছে ওবামার সময়ে, সে চুক্তি থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করে নিয়ে আরেকটা ঝুঁকিপূর্ণ ইস্যু তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কারণে একটা ভাল চুক্তিও শেষ পর্যন্ত খারাপ হতে চলেছে। চলতি বছরের শেষের দিকে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ। নবায়ন হবে এমন কোনো অবস্থা দেখা যাচ্ছে না। ফলে সমস্যাটা থেকে যাবে।

ইরানের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চালু করা হয়েছে। তবে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এরই মধ্যে সতর্ক করে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই নিষেধাজ্ঞা পুনর্নবীকরণের আকাঙ্ক্ষায় সফল হয়, তবে এর পরিণতি মারাত্মক  হবে।

পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্তির উচ্চাকাঙ্ক্ষা : অনেক টানাপোড়েন আর ঝঞ্ঝাটশেষে ইসরাইলের ডানপন্থি নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। অনেকগুলো দুনীতির মামলায় অভিযুক্ত এবং বিচারের সম্মুখীন হয়েও শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় ফিরেছেন।

এটা সম্ভব হয়েছে এই কারণে, নেতানিয়াহু একটি বিতর্কিত জাতীয়তাবাদী এজেন্ডার প্রস্তাব দিয়েছেন, যার মধ্যে পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের অংশীকরণের ইচ্ছাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যাতে তারা কার্যকরভাবে ইসরায়েলের স্থায়ী অংশ হয়ে যায়। এভাবে জলজ্যান্ত একটি সমস্যাকে জিইয়ে রাখাকে আর যা-ই হোক, বিশ্বশান্তির জন্য সহায়ক, এটা বলা যাবে না।

এভাবে বিশ্বে করোনা ভাইরাসের চেয়েও মারাত্মক সমস্যা রয়েছে, ব্রেক্সিট, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য সংলাপ এবং সবশেষে কিন্তু সবচেয়ে বড় ইস্যু জলবায়ু পরিবর্তন।