- আন্তর্জাতিক
- ধরে নিয়ে যাওয়া ১০ ভারতীয় সেনাকে মুক্তি দিল চীন
ধরে নিয়ে যাওয়া ১০ ভারতীয় সেনাকে মুক্তি দিল চীন

ফাইল ছবি
লাদাখ সীমান্তে সংঘর্ষকালে চীনের সেনাবাহিনীর হাতে আটক ১০ ভারতীয় সৈন্যকে মুক্তি দিয়েছে দেশটি।বৃহস্পতিবার রাতে ছাড়া পাওয়া এই সেনাদের মধ্যে একজন লেফটেন্যান্ট-কর্ণেল এবং তিনজন মেজর রয়েছেন। তবে ভারত এ সম্পর্কে কিছু প্রকাশ করেনি। এমনকি সেনা নিখোঁজের বিষয়টি আগের দিন স্বীকারও করেনি দেশটির সেনাবাহিনী। গত সোমবার লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ওই সংঘাতে অন্তত ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পাশাপাশি বিরোধ সমাধানে চলছে আলোচনা। সংঘাতের ঘটনায় দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলেছে। খবর বিবিসির।
ভারতের গণমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে জানানো হয়, চীন ধরে নিয়ে যাওয়া ১০ ভারতীয় সেনাকে বৃহস্পতিবার রাতে মুক্তি দিয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির মধ্যে মেজর জেনারেল পর্যায়ে আলোচনায় তাদের মুক্তির বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। এই বৈঠকের পরেই আটকে রাখা ভারতীয় সেনাদের মুক্তি দেয় চীনের সেনাবাহিনী।
দুই দেশের সেনা কর্মকর্তারা প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে ওই বৈঠক করে। তবে তাতে কোনো সমাধান আসেনি বলেই জানা গেছে। উল্টো সীমান্তে আরও বেশি সেনা মোতায়েন করেছে চীন।
সোমবার রাতের ঘটনার পরই হতাহতের পাশাপশি কতজন ভারতীয় সেনা নিখোঁজ, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তখন দাবি করা হয়, কোনও সেনাই নিখোঁজ নন। সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে তখন বলা হয়, ‘এটি স্পষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে যে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকা অঞ্চলে লড়াইয়ের পর কোনও ভারতীয় সেনা নিখোঁজ নেই।’
তবে ভারতীয় সেনাদের নিখোঁজ হওয়ার কথা অস্বীকার কিংবা পরে ১০ সেনার মুক্তি পাওয়ার বিষয়ে ভারত কোনো মন্তব্য না করলেও এ ব্যাপারে ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকার সিনিয়র সম্পাদক শিভ আরুর বলেন, ভারতীয় সৈন্যদের মুক্তি দেওয়া দুই দেশের আলোচনা সফল করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
গালওয়ান উপত্যকায় সোমবার রাতে চীনের সেনাবাহিনীর একটি তাঁবু উচ্ছেদ করতে গিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। ভারতীয় সেনাসূত্র জানায়, এ ঘটনায় কোনও গুলি চালাচালি হয়নি। বরং উভয়পক্ষের সেনাদের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারি হয়। দুই দেশের সেনাই একে অপরকে লক্ষ্য করে ঘুষি মারে ও পাথর ছোঁড়ে। সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত চলা ওই লড়াইয়ে চীনা সেনারা পেরেক গাঁথা রড দিয়েও আক্রমণ চালায়। খাড়া পর্বতের প্রায় ১৪ হাজার ফুট উচ্চতায় দুই দেশের সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে এবং কিছু সৈন্য আহত ও অনেকে পা পিছলে খরস্রোতা গালওয়ান নদীতে পড়ে গেছেন। এতে হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রায়, খোলা আকাশের নীচে আহত অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ থাকার ফলে অন্তত ২০ সেনার মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে চীনের এক কমান্ডিং অফিসারসহ ৪৫ জওয়ান হতাহতের শিকার বলে দাবি করে ভারত। বেইজিং হতাহতের খবর সরকারিভাবে স্বীকার করলেও সংখ্যা স্পষ্ট করেনি।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও চীনের মধ্যে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় ছোটখাট সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও ৪৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটল। সীমান্তে শেষবার গোলাগুলির ঘটনা ঘটে ১৯৭৫ সালে, তখন অরুণাচল প্রদেশের একটি গিরিপথে চারজন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়েছিল। এরপর দুই দেশের মধ্যে ১৯৯৬ সালে চুক্তি হয়, নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোন পক্ষই গোলাগুলি চালাবে না। তবে সেই চুক্তি ভঙ্গ করে শেষপর্যন্ত বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষেই জড়ালো দুই দেশ।
মন্তব্য করুন