করোনাভাইরাস যে প্রাণঘাতী এমন তথ্য চেপে গিয়েছিল চীনের কমিউনিস্ট সরকার। কিন্তু সে বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করে দিলেন হংকং থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া ভাইরোলজি ও ইমিউনোলজি বিশেষজ্ঞ ড. লি-মেং ইয়ান। হংকংয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর এই গবেষকের অভিযোগ, বেইজিং এই ভাইরাসের মারণক্ষমতা সম্পর্কে সব কিছু জেনেও তা প্রকাশ করেনি এবং তা প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা  প্রফেসর মালিক পেইরিসকেও অভিযুক্ত করেন হংকংয়ের এই ভাইরোলজিস্ট। তার দাবি, মালিক পেইরিসও সব জেনেশুনে অদ্ভুত রকম নিস্পৃহ ভূমিকা নেন। খবর ফক্স নিউজ, দ্য ডেইলি মেইল।

ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. লি-মেং ইয়ান বলেন, উহান থেকে ভাইরাস সংক্রমণের খবর ছড়িয়ে পড়ার অনেক আগেই করোনা নিয়ে তিনি হংকংয়ের বিশেষ বায়োসেফটি ল্যাবে গবেষণা শুরু করেছিলেন। বুঝতে পেরেছিলেন এই ভাইরাল স্ট্রেন অনেক বেশি প্রাণঘাতী। কী ভাবে এই ভাইরাসের মোকাবিলা করা যায়, তার উপায় খুঁজতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু, গবেষণার মাঝপথেই একের পর হুমকি ফোন আসতে থাকে। এমনকী কম্পিউটারও হ্যাক করা হয়। ব্যক্তিগত তথ্যে নজরদারি শুরু হয়।

লি-মেং ইয়ানের ভাষ্য, আমার কম্পিউটার হ্যাক করে থেমে থাকেনি। সরকারের এজেন্টরা লাগাতার হুমকি দিচ্ছিল। জানতাম পালিয়ে না-এলে আমাকে ওরা মেরে ফেলবে।’ তাই হংকংয়ের ভাইরোলজিস্ট দেশছাড়া হয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রে।

লি জানান, গত বছর ডিসেম্বরের আগেই চীনে সার্স ১-এর মতো ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু এই ভাইরাসের চরিত্র ছিল সার্সের থেকে ভিন্ন। আরও সংক্রামক। ইনফ্লুয়েঞ্জা ও সার্স ভাইরাস নিয়েই যেহেতু তার কাজ, তাই নতুন ভাইরাস নিয়ে গবেষণায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

তিনি বলেন, আমার সুপারভাইজারকে এই ভাইরাসের বিষয়ে জানিয়েছিলাম। কিন্তু, তিনি গুরুত্ব দিতে চাননি। তাই চুপিসারে গবেষণা শুরু করেছিলাম। কিন্তু সেটা গোপন থাকেনি।

ভাইরাস সম্পর্কে এই বিশেষজ্ঞ জানান, চীনের যেসব ডাক্তার ও বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাস নিয়ে চর্চা করছিলেন, রহস্যজনক ভাবে তারা একে একে নিখোঁজ হতে শুরু করেন। পরে অনেকের মৃত্যুর খবরও আসে। তাই ভয়ে মুখে কুলুপ আটেন ডাক্তারা। রোগীদের মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু মানুষের মাধ্যমে যে এই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে, তা ডাক্তাররা জানাননি।

লি'র আরও দাবি বেজিং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ভাইরাসের সংক্রমণের কথা জানিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু, করোনাভাইরাসের সংক্রামক ভাইরাল স্ট্রেন সার্স-কভ-২-এর কথা বেমালুম চেপে গিয়েছিল।

উহানের সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডাক্তার ওয়েনলিয়াঙ প্রথম করোনাভাইরাস সম্পর্কে জানানোর পর, তার পরিণতি কী হয়েছিল, মনে করিয়ে দেন এই ভাইরোলজিস্ট। রাতারাতি রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে যান ওই চিকিত্সক। পরে সরকারি তরফে জানানো হয়, করোনা সংক্রমণেই মৃত্যু হয়েছে ডাক্তারের। চীনে করোনায় মৃতদের দেহ কী ভাবে পোড়ানো হচ্ছে, সেই ভিডিয়ো প্রকাশ করার পরেই নিখোঁজ হন চেন কিউসি নামে এক সাংবাদিক।

এমন পরিস্থিতিতে ২৮ এপ্রিল হংকং থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।