চীনের জিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষোভ বাড়ছে পাকিস্তানে। দেশটির জনগণের মধ্যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটছে গণমাধ্যমেও। সম্প্রতি পাকিস্তান সরকারের একটি সমীক্ষায় এ পরিস্থিতির বাস্তবতা ধরা পড়েছে। যদিও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকার ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনের কাছে এ নিয়ে কখনও প্রতিবাদ জানায়নি। অনেকে বলছেন, উইঘুর নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে এখন পাকিস্তান সরকার নিজে কিছু না বলে ঘুরিয়ে জনগণের কাধে বন্দুক রাখার চেষ্টা করছে। খবর ডব্লিউআইও নিউজ ও এক্সবুলেটিনের। 

সমীক্ষার মূল্যায়নপত্রে বলা হয়েছে, চীনে উইঘুর মুসলিম নির্যাতনের ঘটনায় পাকিস্তানে ধর্মীয় মতাদর্শে বেশ প্রভাব ফেলেছে। এ নিয়ে পাকিস্তানি জনগণের মধ্যে এ যাবতকালের মধ্যে এখন ক্ষোভের তীব্রতা সবেচেয়ে বেশি। তাছাড়া দেশটির ইসলামপন্থী পত্রপত্রিকাগুলোও বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে মতামত তুলে ধরেছে। এর মধ্যে লাহোর ভিত্তিক ইশরাক, আহলে হাদীস, মোহাদ্দিস, পেয়াম, আল বুরহান, আল এহতেশাম, উষাহ হাসানা ইত্যাদি বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে সোচ্চার হয়েছে এবং চীনে উইঘুরদের পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। 

লাহোরের মাসিক ইশরাক ২০২০ সালের জানুয়ারি সংখ্যায় ‘চীনে মুসলমানদের ওপর অত্যাচারের’ কথা তুলে ধরে। সাপ্তাহিক আহলে হাদীস চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় এক রিপোর্টে বলেছে, ইসরায়েল যেভাবে ফিলিস্তিনিদের ওপর হত্যা-নির্যাতন চালাচ্ছে, তেমনি চীনও উইঘুরদের ওপর হত্যা নির্যাতন চালাচ্ছে। 

২০১৯ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের অন্যতম জাতীয় দৈনিক ডনের এক সম্পাদকীয়তে সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলা হয়, অনেক দেশের মতোই পাকিস্তানেরও মানবাধিকার রেকর্ড রয়েছে। তবে দেশটি কাশ্মীরে ভারতের নির্যাতন ও মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বললেও চীনে উইঘুর নির্যাতনের ব্যাপারে কোনো উচ্চবাচ্য করে না। 

সমালোচকরা বলছেন, ইমরান সরকার বর্তমানে সারাবিশ্বে আলোচিত এই উইগুর ইস্যুতে দেশের জনগণের মনোভাব বুঝে তা সামাল দিতেই সমীক্ষা চালিয়েছে। যাতে এ নিয়ে জনগণের কোনো কর্মকাণ্ডে মিত্র চীনের কাছে পাকিস্তানকে বিব্রত হতে না হয়। 

উল্লেখ্য, জিনজিয়াংয়ে এক কোটি দশ লাখের বেশি উইঘুর মুসলিমের বাস। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিবিসিসহ বিভিন্ন পশ্চিমা গণমাধ্যমে উঠে আসে যে, চীন সরকার উইঘুর মুসলিমদের ওপর বিভিন্নভাবে হত্যা-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বন্দি শিবিরে বছরের পর আটকে রেখে ধর্মান্তর করে চীনা মতাদর্শে গড়ে তোলা হচ্ছে। ১০ লাখের বেশি উইঘুর চীনের বন্দিশিবিরে অন্তরীণ রয়েছে।