সাড়ে পাঁচ কোটি আলোকবর্ষ দূরে একটি কৃষ্ণগহ্বর (ব্ল্যাকহোল) কৌতুহলউদ্দীপকভাবে কাঁপছে ও ঘুরছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিশদ গবেষণায় এম ৮৭* নামে পরিচিত এই ব্ল্যাকহোলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।

গত বছরের এপ্রিলে এম৮৭ (মেসিয়ার ৮৭) নামের গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাকহোলটির ছবি প্রথমবারের মতো প্রকাশের পর এটি আলোচনায় আসে। ছবিতে দেখা যায়, হলদে রঙের ধুলো ও গ্যাসের একটি চক্র প্রকাণ্ড ব্ল্যাকহোলটিকে ঘিরে আছে। 

ছবিটি ব্ল্যাকহোলের প্রকৃতি এবং এর চারপাশে গরম প্লাজমার বলয় বুঝতে সহায়তা করেছিল। তবে পুরো চিত্র এতে ছিল না বলে মনে করা হয়। অপেক্ষাকৃত কম সময়ের মধ্যে (মাত্র এক সপ্তাহ সময় ধরে) ব্ল্যাকহোলের ছায়া দেখে এর ছবি নেওয়া হয়েছিল, যা এর মধ্যে ঘটতে থাকা পরিবর্তন দেখতে ও বুঝতে খুব সংক্ষিপ্ত সময়, বলেন বিজ্ঞানীরা।

২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে গবেষকরা পরীক্ষা করতে পেরেছিলেন, সময়ের সঙ্গে ব্ল্যাকহোলের ছায়া কীভাবে পরিবর্তিত হয়। তবে তখন তাদের কাছে ২০১৯ সালের পর্যবেক্ষণের তুলনায় খুব কম তথ্য ছিল। ফলে সময়ের সঙ্গে কীভাবে এম৮৭* এর অবস্থার পরিবর্তন হয় তা বুঝতে তারা একাধিক পরিসংখ্যান মডেলের সহায়তা নিয়েছেন।

এখন বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন যে, ব্ল্যাকহোলটি প্রত্যাশা মতো আচরণ করছে এবং মূল ছবিতে দেখা অর্ধচন্দ্রাকৃতির আকারটি বেশ কয়েক বছর ধরে স্থির থাকছে। যা ব্ল্যাকহোলের প্রকৃতি এবং এর ছায়া সম্পর্কে প্রথম ছবির পরে পাওয়া ধারণার বিষয়টি নিশ্চিত হতে সহায়তা করে।

কিন্তু তারা এটা আবিষ্কার করে অবাক হয়েছেন, রিংয়ের অস্তিত্ব ও ব্যাস স্থির থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি কাঁপতে থাকে। গ্যাস ব্ল্যাকহোলের উপরে পড়ে এবং উত্তাপকে আরও উত্তাল করে তোলে ও চরম অবস্থায় পৌঁছায় বলে এমনটা হয়।

সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ম্যাকিক উইলগাস বলেন, 'যেহেতু পদার্থের প্রবাহ অশান্ত, তাই এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাঁপতে দেখা দেয়।'

ব্ল্যাকহোলটি ৪ হাজার কোটি কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (এনএসএফ) গত বছরের এপ্রিলে এক প্রেস কনফারেন্সে ব্ল্যাক হোলের প্রথম ছবিটি প্রকাশ করে। 

ওয়াশিংটন ডিসি, ব্রাসেলস, স্যানটিয়াগোম, সাংহাই, টাইপেই ও টোকিওতে একই যোগে এই প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এনএসএফ তাদের টুইটার পেজেও এই ছবি প্রকাশ করে। 

ছবি তোলার কাজটি করেছে ইভেন্ট হরাইজন নামে এক প্রকল্পের টেলিস্কোপ (ইএইচটি)। যা বানানো হয়েছে পৃথিবীর ৮টি মহাদেশে বসানো অত্যন্ত শক্তিশালী ৮টি রেডিও টেলিস্কোপের নেটওয়ার্ক দিয়ে। সূত্র: ইন্ডিপেন্ডেন্ট


বিষয় : ব্ল্যাকহোল

মন্তব্য করুন